স্বপনকুমারকে নিয়ে আর কোনও ছবি করব না: দেবালয়

বাঙালির গর্বের গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে প্রচুর কটাক্ষ এবং ক্ষোভ নিয়ে সম্প্রতি আসরে নেমেছে এদের পূর্বসূরি দীপক চ্যাটার্জি। ‘শ্রীস্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলে‘ এই সময়ের নিরিখে সবদিক দিয়েই একটি ছকভাঙা ছবি। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে বাঙালি কিশোরকে প্রথম নিষিদ্ধ অভিযানের হাতছানি দিয়েও দীপক আর রতনলাল হারিয়ে গিয়েছিল বাঙালির নাকউঁচু রক্ষণশীলতার আড়ালে। সেই দীপককে ফিরিয়ে এনে সমাজের কোন মুখোশগুলো খুলতে চাইলেন পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য (Debaloy Bhattacharya)? সমরেন্দ্রনাথ পাণ্ডে ওরফে স্বপনকুমারের গল্পের মাধ্যমে বাংলা ছবিকে কোন বার্তা দিতে চাইছেন তিনি? এক শীতের বিকেলে রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে আড্ডা দিলেন দেবালয়। 

পরপর ‘মন্টু পাইলট’, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ চূড়ান্ত সফল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ স্বপনকুমারের মতো বিস্মৃতপ্রায় লেখককে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে হলো কেন? 

দেবালয়: স্বপনকুমারকে নিয়ে আমার অনেকদিনের চিন্তাভাবনা। এই চিত্রনাট্যটা আমি তৈরি করেছিলাম ২০০৪ সালে। যদিও পরবর্তীকালে সেটা অনেক পাল্টেছে। সাধারণত লোকের ধারণা পাল্প মানেই ‘পাল্প ফিকশন’, মানে টারানটিনো। কিন্তু আমি কোনওদিনই টারানটিনোর ভক্ত নই। দেখতে ভালো লাগে ওই অবধিই। তার চেয়ে বরং আমাকে অনেক বেশি আকর্ষণ করেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে লেখা বিদেশি ও বাংলা পাল্প সাহিত্য। সেগুলোর ইমেজারি, চরিত্রগঠন এগুলো আমাকে খুব টানত, যেগুলো পরে ফিল্ম ন্যুয়রে পাওয়া যায়। এছাড়া ইতালির জিয়ালো ফিল্মস থেকেও আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। অর্থাৎ সেই হলুদ পাতার গল্প, একটা বিশেষ গোত্রের ছবি যেখানে রহস্য, খুন, এগুলোই ঘুরেফিরে আসে। এই ধরণের ছবিগুলো থেকে হলিউডের বহু পরিচালক অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তবে স্বপনকুমারের কাছে আমি ফিরে গিয়েছিলাম অন্য তাগিদে। দীপক যেখানে বারবার কটাক্ষ করছে রুচিশীল বাঙালি ও তার সংস্কৃতিকে, সেই জায়গাটাকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য আমার স্বপনকুমারকে প্রয়োজন ছিল কারণ তিনিই একসময় বটতলার গোয়েন্দা সাহিত্যকে জনপ্রিয় করেছিলেন। 



এই ধরণের একটা ছবি দর্শক নেবে কিনা সেটা নিয়ে মনে সন্দেহ ছিল?

দেবালয়: পাল্প নিয়ে কাজ করা সবসময় কঠিন। আমি স্বপনকুমারকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি কারণ ওই কল্পনার জগৎটাকে ধরতে চেয়েছিলাম। বাংলা ছবি পরকীয়া, নস্টালজিয়া আর ওই বস্তাপচা ডিটেকটিভের জগতে আটকে গেছে। এই ছবিটার বাজেট নিয়ে একটা চিন্তা ছিলই। শ্রীকান্তদা (মোহতা) বুঝেছিল আমি এই অচলায়তনে একটা ধাক্কা দিতে চাই। সেটা করতে আমি ওদের তরফে সবরকম সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমি বদলাতে চাইলেও বাঙালি দর্শক সেই বদল চায় কি? বক্স অফিস তো তা বলছে না। আমি জানতাম প্রতিক্রিয়া মিশ্র হবে। এক ধরণের দর্শকের থেকে ভীষণ ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। তারা সিনেমাহলে যে উন্মাদনা দেখিয়েছে, সিনের মধ্যে হাততালি দিয়েছে, চিৎকার করেছে বাংলায় এই ধরণের ছবির জন্য, ভাবা যায় না। কিন্তু সেই আগ্রহটুকু ছেড়ে দিলে বহু মানুষ তো হলেই যায়নি। যে পরিমাণ লোক হলে না গেলে একটা ছবি চালানো সম্ভব নয়, তারা তো যাচ্ছে না। আমার বন্ধু এবং প্রযোজনা টিমের সৌম্য মুখোপাধ্যায়, ও কিন্তু খুব খুশি যে আমরা একটা ভালো ছবি বানিয়েছি।

আরও পড়ুন: প্রচারে অনুপস্থিত দীপিকা

সে তো বাঙালি এমনিও অন্য ধরণের ছবিকে আপন করে নেয় না

দেবালয়: হ্যাঁ। সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র মতো ছবিও চলেনি। কারণ বাঙালি সেখানে গল্প খুঁজে পায়নি। তাই তিনি পরবর্তীকালে ফিরে এসেছিলেন গল্পে। ওরকম একটা ছবি যেখানে সমাজের দুটো স্তর স্পষ্টভাবে উঠে আসছে সেটাও বাঙালি পছন্দ করেনি। অতবড় একজন পরিচালকের চেষ্টা যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল সেখানে আমার নতুন একটা ভাবনাকে যে তারা একদিনেই আপন করে নেবে না, সেটা আমি জানতাম। 

একেবারে নতুন একটা ফরম্যাট, নতুন কায়দায় একটা পুরনো চরিত্রকে সামনে আনা। পুরো ব্যাপারটাই বেশ অভিনব

দেবালয়: আমার এই ফরম্যাটটা অনেকদিনের কাজের জার্নির ফল বলা যায়। ‘রোগা হওয়ার সহজ উপায়’, ‘ড্রাকুলা স্যার’, ‘বিদায় ব্যোমকেশ’ এমনকী ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ও আছে এর পিছনে, যেগুলো দিয়ে আমি অনেকগুলো সিঁড়ি পেরিয়ে এখানে এসেছি। ধীরে-ধীরে একটা ভাবনাকে অবলম্বন করে ক্রমশ সেটা ‘বাদামী হায়না’য় এসে পুরোপুরি বিকশিত হয়েছে বলা যায়। এরপর আমি আবার চেনা ফরম্যাটে ফিরে গিয়ে গল্প নিয়ে কাজ করব। সেই গল্প বলার চেষ্টা করব যা দর্শক দেখতে চান। ‘ইন্দুবালা’ দর্শকের ভালো লেগেছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে তো একই ধাঁচের ছবি বা গল্প আসবে না। নতুন কিছু দেখাতে গেলে ঝুঁকি নিতেই হবে। 

আরও পড়ুন: রণবীরকেই চান যুবরাজ

তার মানে ঝুঁকি যে ছিল সেটা তুমি আগেই জানতে

দেবালয়: অবশ্যই। খুব ঝুঁকি ছিল। সেটা আমি এবং আমার প্রযোজক দু’পক্ষই জানতাম। এখানে তো কোনও গল্প নেই। কিছু দৃশ্য আছে, কিছু চরিত্র আছে। যেগুলো মিলেমিশে একটা গল্পের মতো কিছু তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেটা এতটাই নন-লিনিয়র যে দর্শক গল্পটা ফলো করে না। বরং দৃশ্যগুলোকে এনজয় করতে থাকে। এই ফরম্যাটে বাংলায় আগে কাজ হয়নি। তাই আমি জানতাম দর্শক এটা গ্রহণ করবে না। কারণ যে কোনও নতুন কিছু গ্রহণ করতে গেলে সময় লাগবে। তাই প্রথমেই সকলের দারুণ লেগে যাবে এটা আমরা কেউই ভাবিনি।



অনেকে বলে তুমি নাকি চিত্রনাট্য ধরে কাজ করো না। ‘বাদামী হায়না’ দেখলে মনে হয় এই ছবিটার কোনও বাঁধাধরা চিত্রনাট্য ছিলই না

দেবালয়: হ্যাঁ, সেটাও করি। তবে এটা কিন্তু পুরোটাই লেখা হয়েছিল। যদিও সেই স্ক্রিপ্ট দেখে কেউই বুঝতে পারেনি কী হতে চলেছে। যখন এক-এক করে দৃশ্য শ্যুট হতে থাকল, তখন বোঝা গেল ব্যাপারটা এতটাও জটিল কিছু নয়। বরং পর্দা জুড়ে একটা সেলিব্রেশন উঠে আসছে। এটা খুব মজার একটা ছবি আসলে। যারা দেখেছে তারা সেটা বুঝবে। 

দীপক চ্যাটার্জি বারবার জনপ্রিয় গোয়েন্দাদের মাথায় করে রাখা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গোটা বাঙালি জাতের ওপরেই তার ভয়ঙ্কর অভিমান। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় দেবালয় নিজেও এই ঘরানার ছবি বা সাহিত্যের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত? 

দেবালয়: (ভেবে) ক্ষোভ বা বিরোধিতা বলব না। আমার আসলে মনে হয় পুরো ব্যাপারটা খুব স্থবির হয়ে গেছে। আর মানুষ সেটা নিয়েই খুশি। নিজের কমফর্ট জ়োন ছেড়ে কেউ বেরোতে চাইছে না। আমি কিন্তু দীপককে সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছি যেটা দেখতে দর্শক অভ্যস্ত নয়। একটা অচেনা ফরম্যাটে ফেলে দেখাতে চেয়েছি এভাবেও গল্প বলা যায়। সেই একই ধরণের ছবি করে যাচ্ছে সকলে। কেউ বেরোতেই চাইছে না ওই জায়গাটা থেকে, কারণ সাফল্য আসছে। লোকে নতুন কিছু ভাবছে না। এটা তো চলতে পারে না। আমি চাইব যারা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে স্বপনকুমারের জন্য চিৎকার করেছে, হাততালি দিয়েছে, অন্তত তারা যেন নতুন কিছু ভাবতে পারে।

আরও পড়ুন: ডেভিড হেয়ারের জীবনী প্রকাশ

কিন্তু সেটা প্রযোজকের ভরসা ছাড়া কতটা সম্ভব? নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই নতুন ধরণের ভাবনা রয়েছে কিন্তু তারা প্রযোজক পায় না। তুমি সেটা পেয়েছ বলেই ‘বাদামী হায়না’ মুক্তি পেয়েছে

দেবালয়: প্রযোজকের ভরসা  ছাড়া ‘বাদামী হায়না’ সম্ভব ছিল না। ওরা মনে করেছে এই ছবিটা থাকবে। মুষ্টিমেয় কিছু দর্শকের প্রশংসা পাবে। হিট হবে না সেটা আমরা নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু হিট না হলেও কিছু জিনিস থেকে যায়। এটাও সেরকমভাবে থেকে যাবে মনে হয়েছে তাদের। অনেকেই নতুন বিষয় নিয়ে ভাবছে। কিন্তু সকলে এরকম কাউকে পাচ্ছে না যে ভরসাটা রাখবে। কাজেই সাপোর্ট পাওয়া এখানে সবথেকে বড় ব্যাপার। 

একটা সময়ের পর স্বপনকুমারের গল্পগুলো আর চলল না। এর কারণ কী? 

দেবালয়: দেখো, একজন লেখকের একটা স্প্যান থাকে। তিরিশ-চল্লিশ বছর ধরে মানুষ এই গল্পগুলো পড়েছে। তারপর সময়টা পাল্টে গেল কিন্তু একটা আলাদা ঘরানা হিসেবে কেউ একে স্বীকার করল না। লুকিয়ে বইগুলো পড়ে তারপর ফেলে দিল বা কাউকে দিয়ে দিল। বুকশেলফে রাখল না। অথচ আজ ভেবে দেখলে মনে হবে কী এমন ছিল এই গল্পে যে বাঙালি তাকে ড্রয়িংরুমের বুকশেলফে স্থান দেয়নি। ব্যাপারটা অনেকটা সে যুগে হিন্দি সিনেমা দেখার মতো। সেখানে ভায়োলেন্স আছে, উষ্ণতা আছে, তাই ওটা সকলের সঙ্গে বসে দেখা যাবে না। আজকাল এগুলো কোনও ব্যাপার না মনে হতে পারে, তখন কিন্তু বেশ রাখঢাক ছিল। আমার পয়েন্টটা এখানেই যে মানুষ পড়েছে যখন, তখন লুকিয়ে পড়েছে কেন! বাঙালির এই হিপোক্রেসি, ঘরে সাজিয়ে রাখব রবীন্দ্র রচনাবলী অথচ পড়ব সেই হলুদ পাতার বই, এটা কেন হবে? আমি এই অচলায়তনটাই ভাঙতে চাইছি। 

‘বাদামী হায়না’ দেখলে বোঝা যায় গোটা ছবি জুড়ে একটা বিনির্মাণ আছে। সেটা সিরিজ়টার, লেখকের এবং দীপক চ্যাটার্জির। জাক দেরিদার ভাবনায় ও লেখায় এই বিনির্মাণের নানারকম স্বরূপ পাওয়া যায়। তোমার ছবিগুলোর ক্ষেত্রেও এই জিনিস ঘুরেফিরে আছে। যেমন ‘ড্রাকুলা স্যার’ ছবিতে ছিল। এক্ষেত্রে তোমার ভাবনা কী? 

দেবালয়: দেখো, এ ব্যাপারে আমার ভাবনা খুব স্পষ্ট। সভ্যতায় একটা সময়ের পর কিছু জিনিস খুব স্যাচুরেটেড হয়ে যায়। তাই এই বিনির্মাণ সেখানে প্রয়োজন। কারণ নতুন কিছু গড়তে গেলে পুরনোকে তো ভাঙতে হবে। এখানে একটা আড়াল আছে, যেখান থেকে আমার ভাবনা বা দর্শনটা বোঝানো সম্ভব হচ্ছে। এটা আমার ‘অভিশপ্ত নাইটি’ ছবিতেও ছিল। ওখানে যে গল্পটা আমি লিখেছি, সেটা গাঁজাখুরি। আসলে কিন্তু সেটার আড়ালে ওই সেন্সর বোর্ডের আলোচনা থেকে উঠে আসছে অন্য বক্তব্য। আমি অনেক ছবিতেই এইভাবে আমার চিন্তাভাবনা বা বক্তব্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। ‘ড্রাকুলা স্যার’-এ এরকম অনেক বক্তব্য আছে। সব ছবিতে হয়তো সেটা সম্ভব হয় না। কিন্তু এই ধরণের ফরম্যাটে সেটা করা সবথেকে সহজ ছিল। আসলে আমাদের সকলের ভেতরেই সমাজের প্রতি অনেক রাগ জমা থাকে। সেই রাগ তো আমরা সোজাসুজি সমাজকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। সেই রাগ বার করার সবথেকে উৎকৃষ্ট উপায় হলো হিউমার। অন্তত আমার তাই মনে হয়।

আরও পড়ুন: স্পর্শের অপেক্ষায় থাকা বার্ধক্য

দীপকের চরিত্রে আবীরকে (চট্টোপাধ্যায়) নেওয়ার কারণ কী? যদিও আবীরকে দারুণ মানিয়েছে কিন্তু ও নিজেও তো এর আগে অন্য গোয়েন্দা চরিত্র করেছে

দেবালয়: আবীর ছাড়া আর কাউকে আমি ভাবতে পারিনি। তাছাড়া একইসঙ্গে ওর ফেলুদা, ব্যোমকেশ এবং সোনাদা হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। এই ব্যাগেজটাই আমার দরকার ছিল। এই ধরণের চরিত্রগুলো করতে-করতে বা দেখে-দেখে সকলেই ক্লান্ত। আবীর খুব সিনসিয়র অভিনেতা। পরিচালক যেটা চাইছে ও সেটাই দেবে। আমি যখন লিখেছিলাম সেই সময় থেকেই মাথায় ছিল আবীর এটা করবে। কারণ আবীরের চেয়ে বেশি কাউকে এখানে মানাত না।  

স্বপনকুমারের গল্প তো সেই পঞ্চাশের দশকে লেখা। কিন্তু ছবিটা তুমি করলে এই সময়ে দাঁড়িয়ে। অথচ এটাকে অনায়াসে পিরিয়ড ছবি করা যেত। এমন কিছু আউটডোর ছিল না, তবু ছবিটাকে বর্তমানে নিয়ে এলে কেন? 

দেবালয়: ভালো প্রশ্ন করেছ। আমি ওই নস্টালজিয়া থেকে বেরোতে চেয়েছিলাম। বাঙালি নস্টালজিয়ায় ডুবে থাকা জাত। আমি নিজেও হয়তো তার থেকে আলাদা নই। ‘ইন্দুবালা’ করে সেটা আমি আরও বেশি করে বুঝেছি। ‘ইন্দুবালা’ আমার খুব প্রিয় কাজ, দর্শকেরও। কিন্তু একইসঙ্গে এই কাজটা কোথাও একটা আমাকে অপরাধবোধ দিয়েছে। কারণ সেই নস্টালজিয়াকেই আমি আবার ফিরিয়ে এনেছি। আসলে নস্টালজিয়া থাকবেই, মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এটা। কিন্তু সেটা একটা রোগের পর্যায়ে চলে গেলে তাকে থামানো দরকার। একটা সময়ের পর যখন নস্টালজিয়া বিক্রি করা শুরু হয় তখন বুঝতে হবে আমাদের নতুন কিছু দেওয়ার নেই। বাঙালি তার অতীত আঁকড়ে বেঁচে আছে। আমরা পিছনদিকে তাকিয়ে আছি। আমি এই শহরটার কোনও ভবিষ্যত দেখতে পাই না। কারণ কেউ নতুন কিছু ভাবছে না। নস্টালজিয়া ধার করে যা সাহিত্য হচ্ছে বা সিনেমা হচ্ছে, সব হিট। তাই সবাই সেফ খেলছে। এখানে নতুন কিছু চলে না। এটা একটা গোটা জাতির পক্ষে খুব একটা আশার কথা নয়। এটাই আমি বলতে চেয়েছি ছবিটা দিয়ে। আর তাই সময়টা বর্তমান। অতীত নয়।

দীপক চ্যাটার্জির ভূমিকা এবং পরিচয়ের জন্য এই ছবির ফরম্যাটটা অন্যরকম। এর পরবর্তী ছবিতে কি কোনও বিশেষ গল্প নিয়ে এগোবে? 

দেবালয়: আমি চাইব এরপর দীপক চ্যাটার্জিকে নিয়ে অন্য কেউ ছবি করুক। আমি স্বপনকুমারকে নিয়ে আর ছবি করব না। 



সেকি! কেন? সবাই তো গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি বানাতে চায়

দেবালয়: কাজটা ভালো হয়েছে আমি জানি। কিন্তু বক্স অফিস তো সে কথা বলছে না। এখনও পর্যন্ত ‘ইন্দুবালা’ আমার কেরিয়ারের সবথেকে বড় হিট। ‘বাদামী হায়না’ দেখে বিশেষ কিছু দর্শক যে প্রশংসাটুকু করেছেন, হলে হাততালি পড়েছে, দর্শক উল্লসিত হয়েছেন দীপক চ্যাটার্জিকে বড়পর্দায় দেখে, এগুলো নিয়ে আমি খুশি। কিন্তু সাধারণ দর্শক হলে যায়নি। তারা বদল চায় না। তাই স্বপনকুমার আর আসবে না। আমার মনে হয়েছিল এই অচলায়তনে আঘাত করার দরকার তাই আমি তাকে নিয়ে এসেছিলাম। আমার পরবর্তী প্রজন্ম যদি মনে করে স্বপনকুমারকে আনার প্রয়োজনীয়তা আছে তাহলে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই নিয়ে আসবে। 

মানুষ ইদানিং হলে কম যাচ্ছে এটা সত্যি। তাছাড়া নতুন একটা চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করতেও তো সময় লাগে। সেই সময়টুকু তো দিতেই হবে

দেবালয়: আমার ধারণা এই ছবিটা ওটিটিতে এলে ভালো ফল করবে। আরও অনেকে দেখবেন তখন। কিন্তু সাধারণ দর্শক জানলই না যে এটা বড়পর্দায় দেখার মতো একটা ছবি। কারণ তারা ওই গোয়েন্দা, নস্টালজিয়া আর পরকীয়ার গল্প নিয়েই থাকতে চায়। আমি নিজের পছন্দের একটা ছবি বানিয়েছি। যে কোনও পরিচালকই সেই অর্থে সারাজীবনে চার-পাঁচটার বেশি কাজ করতে পারে না। মানে যেটা করে সে তৃপ্তি পাবে। আমি ‘ড্রাকুলা স্যার’ করেছি, ‘শ্রীস্বপনকুমার’ও করলাম। এরপর আবার আমি গল্পে ফিরে যাব। জানি না আবার কোনওদিন নিজের পছন্দের কোনও বিষয় নিয়ে ফিরতে পারব কিনা। ইচ্ছেটা থাকবে, বাকিটা সময় বলবে।

ছবি: প্রতিবেদক




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *