বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র
পৃথিবী মরু সাহারায় হারিয়ে গেলেও তিনি আকাশ রাঙাতে চেয়েছিলেন প্রদীপ শিখায়। নব্বই দশকের বাংলা ছায়াছবির ভিলেন তিনি। নায়কের মতো চেহারা, শরীরী ভাষা, নাচগানে পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে সারাজীবন নায়কের হাতে মার খেয়েই কাটাতে হয়। ছোটখাটো কয়েকটি ছবিতে কাজ করার পর সৌমিত্র প্রথম বড় সুযোগ পেলেন নায়ক হিসেবে। গৌতম মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ত্রয়ী’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী ও দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই ছবিতে দেবশ্রীর সঙ্গে বিখ্যাত গান ‘আরো কাছাকাছি, আরো কাছে এসো’ ছিল তাঁরই লিপে। তুমুল হিট হয় সেই ছবি।
তবে বাংলা ছবিতে তাঁর স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হয় অঞ্জন চৌধুরীর ‘গুরুদক্ষিণা’তে খলনায়কের চরিত্রে। এই ছবির জনপ্রিয় গান ‘পৃথিবী হারিয়ে গেল মরু সাহারা’তে লিপ মেলানোর পাশাপাশি তাঁর নাচও দর্শকের মন কেড়েছিল। সেই সময়ের বেশিরভাগ বাংলা ছবিতে বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলের ভূমিকায় পরিচালকরা সৌমিত্র ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতে পারতেন না। ফোলা-ফোলা ফরসা মুখশ্রী, ঝাঁকড়া চুল, লাবণ্যময় চেহারা অথচ চোখে ক্রুরতার কারণে পরিচালকরা সহজেই তাঁর মুখে বসিয়ে দিতেন কিন্তু অবাঞ্ছিত কুরুচিপূর্ণ শব্দ। অঞ্জন চৌধুরীর ছবি মানেই খলনায়ক সৌমিত্র। ‘গুরুদক্ষিণা’ ছাড়াও অঞ্জনের সঙ্গে তাঁর অন্যান্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মঙ্গলদীপ’, ‘হীরক জয়ন্তী’, ‘নবাব’ ও ‘ইন্দ্রজিৎ’। এই সব ছবিতে সৌমিত্রর সংলাপ ডেলিভারি ছিল মনে রাখার মতো।
আরও পড়ুন: ‘নৈবেদ্য’ নিয়ে এলেন মেখলা
তবু ‘অমর সঙ্গী’, ‘আশীর্বাদ’-এর মতো সুপারহিট ছবি যাঁর ঝুলিতে, সেই সৌমিত্রকে সেভাবে মনে রাখেনি বাংলা ছবির দর্শক। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়ত তাঁর নামটা পর্যন্ত শোনেননি। অথচ সিনেমার মতোই সৌমিত্রর জীবনও ছিল বেশ রঙীন।
রইল সৌমিত্রকে নিয়ে কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
পড়াশোনা ও প্রথম জীবন
হুগলির একটি বর্ধিষ্ণু পরিবারে জন্ম হয় সৌমিত্রর। ভালো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনার পর পরিবারের অমতে গান গাওয়া দিয়ে তাঁর কেরিয়ার শুরু হয় কলকাতার একটি পানশালায়। অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। কিশোর কুমারের গান অবিকল গাইতে পারতেন। তাই নাচে গানে মাতিয়ে রাখতেন পানশালার প্রতিটি রাত।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিড়ম্বনা—>