অঞ্জনদার বকুনি কাজে দিয়েছিল: শাওন চক্রবর্তী
RBN Web Desk: ‘চালচিত্র এখন‘ (Chalchitra Ekhon) ছবির রঞ্জন চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে অজান্তেই পরিচালক অঞ্জন দত্তের মতো করে কথা বলতে শুরু করেছেন অভিনেতা শাওন চক্রবর্তী (Sawon Chakraborty)। এর আগে দেবালয় ভট্টাচার্যের পরিচালনায় ‘পিআই মীনা’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছিলেন শাওন। তবে ছবিতে অভিনয়ের হাতেখড়ি অঞ্জনের হাত ধরেই।
“কবে থেকে অঞ্জনদার মতো করে কথা বলছি আমি সত্যিই জানি না”, রেডিওবাংলানেট-কে বললেন শাওন। “আমাকে অনেকেই এটা বলেছে। সচেতনভাবে করিনি। আসলে চরিত্রটার ভেতরে ছিলাম অনেকদিন, তখন হয়ে গেছে আর কী। আমি ইচ্ছে করে নকল করিনি, অঞ্জনদা কখনওই বলেননি করতে। ওইভাবে হাত নাড়ানো বা একটু ঘুরে বসা এগুলো দেখে-দেখে হয়তো মাথায় ঢুকে গেছিল। নকল করার জন্য নয়, বরং মানুষটাকে বোঝার জন্য। তবে সেটা করতে গিয়ে মনে হলো, আমি যাকে দেখছি তিনি তো ৭০ বছরের অঞ্জনদা, ২৬ বছরের অঞ্জন দত্ত নিশ্চয়ই হুবহু এরকম ছিলেন না।”
আরও পড়ুন: আবারও কানে ‘মন্থন’
তবে অঞ্জন দত্তের কম বয়সের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নিজেকে অনেকটাই বদলাতে হয়েছে বলে জানালেন শাওন। “সেই সময় আমার ওজন বেশি ছিল। তখন লকডাউনের সময়। ছবির জন্য দশ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম। যদিও যতটা কমানো উচিত ছিল ততটা পারিনি। তবে অতটা ওজন কমিয়ে কিছু মাসকুলার চেঞ্জ এসেছিল আমার মধ্যে। তখন হাত নাড়িয়ে কথা বলা অভ্যেস হয়ে গেছিল,” বললেন তিনি।
আরও পড়ুন: আদালতের দ্বারস্থ জ্যাকি শ্রফ
মৃণাল সেনের ‘চালচিত্র’ ছবিটি দেখে অঞ্জনের শরীরী ভাষা বুঝতে চেয়েছিলেন শাওন। “পরে বুঝলাম সেটা ঠিক নয়। ওটা তো একটা চরিত্র। অঞ্জনদার থেকে একেবারে আলাদা চরিত্র ওটা। ‘চালচিত্র’ আমার আগেই বেশ কয়েকবার দেখা ছিল। কিন্তু একেবারে হুবহু এক করতে চাইনি। অঞ্জনদাও বারণ করেছিলেন। কারণ সেটা হলে সেই ফুটেজ কেটে বসিয়ে দিলেই চলত। অঞ্জনের দীপুর থেকে রঞ্জনের দীপু কিছুটা তো আলাদা হবেই,” শাওন।
আরও পড়ুন: আবারও কৌশিকের ছবিতে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা?
ছবির রঞ্জনের মতোই শাওনেরও থিয়েটার দিয়েই অভিনয় শুরু। বললেন, “থিয়েটার করলেও যা ছবিতে দেখা গেছে, ওরকম নাটক আমি করিনি। পিটার ওয়াইসের ‘মারাতসাদ’ নাটকটা এমনিতেই খুব র্যাডিকাল। একটা পাগলা গারদের গল্প। যারা সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের পাগল সাব্যস্ত করা হয়। একটা লোক প্রতিদিন চাবুক খেতে-খেতে একসময় বলে সেটা ওর ভালো লাগে। খুব কঠিন একটা চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ‘মারাতসাদ’ যে কোনও সময়ে অভিনীত হলেই সেটা নিয়ে অনেকের সমস্যা হবে। অঞ্জনদা সেই সময় এই নাটক করেছিলেন। আমি এত কঠিন নাটক আগে করিনি।”
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পালান’ ছবির সেটে অঞ্জনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শাওন। অঞ্জন সেখানে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। “যেদিন প্রথম ফোন পেয়ে দেখা করতে গেলাম আমার কাছে তো অঞ্জন দত্ত মানে বিরাট একটা ব্যাপার,” বললেন শাওন। “গিয়ে দেখি একটা ঢোলা পাজামা আর ফতুয়া পরে সেটে বসে রয়েছেন। মানে অঞ্জন দত্ত (Anjan Dutt) বলতে যা বোঝায় তেমন কিছুই না। আমাকে ডেকে বসালেন। নিজে সিগারেট ধরিয়ে আমাকে বললেন, খেতে চাইলে খেতে পারো। আমি তো ভাবছি কী বলা যায়। যদিও সেদিন শুনতেই গেছি। উনি নানারকম কথা বলতে-বলতে এমন কিছু কথা বলে ব্যাপারটা হালকা করে দিলেন যেগুলো একেবারেই অঞ্জন দত্ত সুলভ নয়। আমাদের মতো সাধারণ কথা আর কী! উনি বুঝতে পেরেছিলেন এটা প্রথম দিনেই কাটিয়ে না দিলে আমার ভয়টা থেকে যাবে।”
আরও পড়ুন: ‘নকল’ মুকুলের দাবি মেনে শিক্ষিকাদের সরিয়ে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়
পরবর্তীতে শুটিং করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানালেন শাওন। “শুটিংয়ের সময় বকুনি খাইনি। সেটা খেলাম পরে অঞ্জনদার সঙ্গে একটা ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করতে গিয়ে। একদিন প্রচণ্ড বকুনি দিয়েছিলেন। প্রচণ্ড মানে প্রচণ্ডই। কয়েকদিন ধরে চলেছিল সেটা। প্রথমে খুব ঘাবড়ে গেছিলাম যে এমন কী হলো! তাহলে কী আমার দ্বারা কিছুই হবে না! তবে পরে বুঝতে পেরেছিলাম ওই বকুনিটার সত্যি দরকার ছিল। খুব কাজে দিয়েছিল ওই কথাগুলো,” হেসে বললেন শাওন।
ছবি: প্রতিবেদক