শেষ যাত্রায় ব্রাত্য, পথ হেঁটেছিলেন মাত্র কয়েকজন
এক মুখ ময়দা
মঞ্চে অভিনয়ের সময় জহর যেটা হামেশাই করতেন সেটা হলো সামান্য একটা সংলাপকে টেনে বাড়িয়ে এমন করে বলতেন যে হলে হাসির বন্যা বয়ে যেত। অন্যদিকে অপ্রস্তুত হতেন সহঅভিনেতা। দুই দশক জুড়ে রঙমহল মঞ্চের মূল আকর্ষণ ছিল জহরের অভিনয়। একবার মঞ্চে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ চলছে। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছেন হাজারি ঠাকুর আর মতি চাকর জহর। সত্যবাবু মঞ্চ থেকে ‘মতি মতি’ বলে ডেকে চলেছেন ওদিকে জহরের দেখা নেই। অনেকক্ষণ ডাকার পর মতি এসে হাজির হলো, কিন্তু তার সারা মুখে ময়দা মাখানো। নাটকে এমন কিছু ছিল না। তবু দক্ষ অভিনেতা সত্যবাবু ব্যাপারটা সামলে দিলেন। বললেন, ‘এ কী চেহারা হয়েছে তোর?’ মতির উত্তরও তৈরি, ‘আমি সবে গামলায় ময়দাটা ঢেইলেছি মাখব বলে, এমন সময় তুমি এমন জোরে ‘মতি’ বলে ডাইকলে যে আমি ওই এক গামলা ময়দার উপর মুখ থুইবড়ে পইড়ে গেলুম।’ দর্শক আনন্দ পেলেও অনেক সময় নাটকের ভরাডুবি হতো জহরের এই ‘এক্সটেম্পোর’ দেওয়ার অভ্যেসে। আর সেটা যে অতিরিক্ত ফাংশন করার ফলে সেটা জহর নিজেও স্বীকার করেছেন। ‘ফাংশনের সময় স্টেজে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিক নানা ঘটনা নিয়ে এক্সটেম্পোর বলে-বলে এমন বদ অভ্যাস হয়ে গেছে যে নাটক করার সময়েও সেই জাতীয় কথা মুখ থেকে হুড়হুড় করে বেরিয়ে আসে।’ তবে এই রঙমহলকে সিনেমাহল হওয়া থেকে বাঁচাবার জন্যই সে সময় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন চিরকাল নির্বিরোধী জহর। নিজে নেতৃত্ব দিয়ে সেবারের মতো রঙমহলকে বাঁচিয়েও দিয়েছিলেন তিনি।
<—ভানু-জহরের বিচ্ছেদ | দুটো হোল্ডঅল—>