সাদাকালো পোশাকে সৃজিতের ছবির নাটকীয় ট্রেলার মুক্তি

কলকাতা: রাজভবনের পিছনের গেটের মুখোমুখি এসপ্ল্যানেড রোড ওয়েস্ট ইতিহাসে ঠাসা এক রাস্তা। প্রায় গোটা এলকাটাই হেরিটেজ জ়োন। সেই রাস্তায় সাদাকালো পোশাকের আনাগোনা প্রতিদিনের ব্যাপার, কারণ হাইকোর্ট চত্বর। কিন্তু গতকাল সেই সাদাকালোর ভিড় যেন একটু বেশিই চোখে পড়ছিল, তাও আবার দুশো বছর পার করা ঐতিহাসিক টাউন হলে। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে বিকেল চারটের সময় টাউন হলের সিঁড়ির ওপরের চাতালে একঝাঁক আইনজীবী সাদাকালো পোশাকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। থাকতেই পারেন। কিন্তু সামনে এত ভিড় কেন? রাস্তা থেকেও বহু লোক উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, তুলছে ছবিও। ব্যাপারটা কী? আসলে সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherji) পরিচালিত ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ (Shotyi Bole Shotyi Kichhu Nei) ছবির ট্রেলার মুক্তি ছিল কাল। সেই ট্রেলার মুক্তি পেল ঐতিহাসিক টাউন হলে, অজস্র সাদাকালো পোশাকের মাঝে।

কিন্তু কেন? কারণ ছবির বিষয় অপরাধ, তার বিচার এবং জুরিদের ভূমিকা। তাই সাদা এবং কালো ড্রেস কোডে সেজেছেন সকল অভিনেতা, পরিচালক এমনকী সাংবাদিকরাও।

‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’তে অভিনয় করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, অনির্বাণ চক্রবর্তী, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়, সৌরসেনী মৈত্র, কাঞ্চন মল্লিক, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, কৌশিক কর ও নূর ইসলাম।

আরও পড়ুন: বাস্তুচ্যুত প্রান্তজন, নর্মদা ‘পরিক্রমা’য় দেখালেন গৌতম

ট্রেলার মুক্তির ঠিকানার মতো এই ছবিও কম ঐতিহাসিক নয়। সৃজিতের বর্তমান ছবিটি ১৯৮৬ সালে বাসু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘এক রুকা হুয়া ফয়সলা’ (Ek Ruka Hua Faisla) অবলম্বনে নির্মিত। আবার সেই হিন্দি ছবিটি তৈরি হয়েছিল ১৯৫৬ সালে সিডনি লুমেট (Sidney Lumet) পরিচালিত ’12 Angry Men’ অবলম্বনে। এছাড়াও এই গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে দেশি-বিদেশী বহু নাটক।

তবে অন্য এক কারণেও বর্তমান ছবিটিকে স্মরণীয় বলা যেতে পারে। ট্রেলার মুক্তির আগে সৃজিত জানালেন কারণটি। “এই ছবির চিত্রনাট্য ২০১১ সালে আমি ঋতুদাকে (ঋতুপর্ণ ঘোষ) শুনিয়েছিলাম। ঋতুদার এই ছবিতে একটা চরিত্রে অভিনয় করারও কথা ছিল, যেটা পরম করেছে। অদ্ভুতভাবে ‘চতুষ্কোণ’ ছবিতে একই ঘটনা ঘটেছিল। ঋতুদার করার কথা ছিল যে চরিত্রটা, সেটা পরে পরম করেছিল,” জানালেন সৃজিত।

আরও পড়ুন: বাজিকা ভাষায় প্রথম ছবি, সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন আরিয়ান

তবে হিন্দি ছবিটির থেকে এই ছবি অনেকটাই আলাদা হতে চলেছে তার কারণ এই সময়ে দাঁড়িয়ে এ দেশের ও রাজ্যের বর্তমান আর্থ সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। 

ছবির শুটিং প্রসঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় অল্পকথায় মজা করে বললেন, “এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে যে পরিমাণ কঠিন পরিশ্রম আমাদের করতে হয়েছে সেটা পর্দায় বোঝা যাবে না, আশা করি দর্শকদের ছবিটা দেখতে ভালো লাগবে। তবে আমাদের শুটিং করতে গিয়ে মোটেও ভালো লাগেনি।”

আরও পড়ুন: রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশল স্যাটায়ার

রাহুল জানালেন, “এই বাড়িতে আমাদের ছবির ট্রেলার লঞ্চ হলো এটার জন্যই নির্মাতা- পরিচালককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্বর্ধনা সভা হয়েছিল, সেখানে যে আমার মতো এক সামান্য মানুষ ঢুকতে পেরেছে এটাই বিরাট প্রাপ্তি। আমার অভিনীত চরিত্রের নাম সাদেক। রেললাইনের ধারের এক বস্তি থেকে উঠে আসা মানুষ সে। তার জীবনে নানা উত্থান পতন আছে। এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে উঠে এসে সে আজ এই কেসের ব্যাপারে মতামত দিতে এসেছে। কাজেই ছবির মতো চরিত্রটাও বেশ অন্যরকম ছিল।” 

১৩ বছর আগে যখন ছবির চিত্রনাট্য লেখা হয় সেই সময় থেকে এই ছবিতে থাকার কথা ছিল কাঞ্চনের। “১৩ বছর আগেও এই ছবিতে যে চরিত্রে ভাবা হয়েছিল এখনও তাই আছি। চরিত্রের নাম তাপস, একজন বিচারপতির সহকারী হিসেবে কাজ করা এক আইনজীবী। বহুদিন অপেক্ষা ছিল এই ছবিটার। ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে, আমি খুব খুশি,” বললেন তিনি।

আরও পড়ুন: ‘আশিকি ৩’ ছাড়লেন তৃপ্তি দিমরি

মূল নাটকে নারী চরিত্র ছিল না, সৃজিতের ছবিতে থাকছে। কেন?

পাল্টা প্রশ্ন করলেন সৌরসেনী, “কেন নয়? আজকের দিনে নারীরা যখন সমস্ত ক্ষেত্রে দক্ষতা নিয়ে পুরুষের সঙ্গে কাজ করছে, তখন এই ছবিতেও নয় কেন? আমি ধন্যবাদ দেব সৃজিতদাকে কাহিনিতে দুটো নারী চরিত্র রাখার জন্য। আমার চরিত্রের নাম অরুন্ধতী, সে একজন ফিল্মমেকার। এমনিতে সে আঁতেল এবং নারীবাদী চরিত্র। এছাড়াও তার চরিত্রের একটা অন্যরকম আবেগের দিক আছে সেটা ছবি দেখলে বোঝা যাবে।”

২৩ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে ছবিটি। 

ছবি: স্বাতী চট্টোপাধ্যায়

Anurag Kashyap

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *