বাস্তুচ্যুত প্রান্তজন, নর্মদা ‘পরিক্রমা’য় দেখালেন গৌতম
কলকাতা: নর্মদা ভারতের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র নদী। সেই নদী বা নর্মদামাঈকে পরিক্রমা করার প্রাচীন ঐতিহ্য আজও এই ভূখণ্ডের মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। প্রতি বছর হাজার-হাজার পুণ্যার্থী নর্মদা পরিক্রমা করতে উপস্থিত হন। সাড়ে তিনহাজার কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত নর্মদার এই গতিপথ সমস্ত নিয়ম মেনে পরিক্রমা করতে তিন বছর সময় লাগে। তবে তা ছ’মাসেও পরিক্রমা করা যায়। সেই নর্মদা পরিক্রমা নিয়ে ছবি বানাতে চেয়েছিলেন ইতালির আলেসান্দ্রো, ভারতীয় লেখিকা রূপার লেখা বই পড়ে। সেই কাহিনি নিয়েই গড়ে উঠেছে পরিচালক গৌতম ঘোষের (Goutam Ghose) ছবি ‘পরিক্রমা’ (Parikrama)। ৭ ডিসেম্বর ছবিটির এশিয়ান প্রিমিয়র হয়ে গেল নন্দনে। ছবিতে অভিনয় করেছেন মার্কো লিওনার্দি (Marco Leonrdi), চিত্রাঙ্গদা সিং (Chitrangada Singh), আরিয়ান বড়কুল, ইমানুয়েল এসপোসিটো, গৌতম সরকার ও অরিজিৎ দত্ত।
গতকাল বিকেলে নন্দনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিচালক ও কলাকুশলীরা। ছবির মূল লেখক ও উদ্যোক্তা সের্জিও স্ক্যাপাগনিনি (Sergio Scapagnini) কুড়ি বছর আগে এই বিষয়ক একটি ছোট উপন্যাস লেখেন। সেই বইয়ের সমস্ত ছবি এঁকেছিলেন সের্জিওর তিন কন্যা। সেই বই থেকে ছবি হোক এমন ইচ্ছা প্রকাশ করেই তিনি গৌতমকে বইটি উপহার দিয়েছিলেন। তারপর কেটে গেছে বহু বছর। অবশেষে সেই ছবির কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে। কোভিড শুরুর আগে জানুয়ারি মাসে ইতালির কাজ শেষ করে দেশে ফেরেন সস্ত্রীক গৌতম। ইতালি ছাড়াও ছবির শুটিং হয়েছে মুম্বই ও মধ্যপ্রদেশে।
আরও পড়ুন: পরনে ‘ভালো থেকো’র শাড়ি, প্রথম ছবির স্মৃতিচারণে বিদ্যা বালন
ছবিতে লালার চরিত্রে রয়েছেন কিশোর অভিনেতা আরিয়ান। ২০১৯-এ ছবির কাজ শুরু করার আগে বেশ কয়েকজন অল্পবয়সী ছেলের অডিশন নিয়েছিলেন গৌতম। কিন্তু কোভিড শেষ হওয়ার পর কাজ করতে গিয়ে দেখেন, তারা ততদিনে সবাই বড় হয়ে গেছে। সেই সময় ইন্দোরে তিনি আরিয়ানকে খুঁজে পান। প্রথম আলাপে গৌতম আরিয়ানকে বলেছিলেন আমি তোমার বন্ধু, আমাকে গৌতম বলে ডেকো। যদিও আরিয়ান গৌতমস্যার বলে ডাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আরিয়ান ছবিতে এক ভারতীয় হকারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি জানালেন শুটিংয়ের সময় তাঁকে আসল হকার ভেবে দুজন লোক তার থেকে জিনিস কেনেন। পরে অবশ্য তাদের জানানো হয় আরিয়ান আসল হকার নন।
সাংবাদিক সম্মেলনে টিম ‘পরিক্রমা’
‘Once Upon a Time in Mexico’, ‘Maradona’, ‘Cinema Paradiso’ ছবির অভিনেতা মার্কো এ ছবিতে আলেসান্দ্রোর চরিত্রে রয়েছেন। তিনি জানালেন, “গল্পটা শোনার পর আমি গুগল আর্থের মাধ্যমে নর্মদার গতিপথ দেখেছিলাম। তারপর শুটিং করতে এসে বুঝতে পারি কী অসাধারণ সুন্দর এই নদী, তার ধারের মার্বেল রক! নদীর স্বচ্ছ পরিশ্রুত জল, তার শব্দ, তার রং দেখে বোঝা যায় এ নদী জীবন্ত। কিন্তু তারপর যখন শুটিং করতে-করতে বিরাট একটা বাঁধের সামনে চলে এলাম, দেখলাম নদী সেখানে যেন মরে গিয়েছে। সেই বাদামি, শ্যাওলা রঙের জলের সঙ্গে প্রাণবন্ত নর্মদার কোনও মিল নেই। এই নিয়েই আমাদের ছবির গল্প। যেভাবে আমরা শুটিং করেছি, একটা সঠিক আলোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেছি সেটা একটা মনে রাখার মতো ঘটনা।”
আরও পড়ুন: ফেলুদা সিরিজ়ে বিশেষ চরিত্রে ঋদ্ধি
গৌতম জানালেন, “এই ছবি দুটি ছেলের কথা বলে। একজন ফ্রান্সিসকো যে সদ্যই তার মাকে হারিয়েছে, আর একজন লালা যে তার মাতৃভূমিকে হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। এই সিনেমার জার্নি যেন সেই দুটি ছেলেকে কোথাও গিয়ে মিলিয়ে দেয়। আমি এই ছবিতে গল্প বলিনি। আমার গল্প বলার কোনও দায় নেই। আমি নিজেকে স্টোরিটেলার বলতে চাই না। কারণ গল্প তো থাকবেই, আমার কাজ সেটাকে সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরা। সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ৫০০ বছরের ঘটনাকে একটা দু’ঘন্টার ছবিতে বেঁধে ফেলা যায় তেমনই পাঁচ মিনিটের ঘটনাও দু’ঘন্টা ধরে দেখানো যেতে পারে, সেটাই সিনেমার ক্ষমতা।”
ছবির সম্পাদনা করেছেন নীলাদ্রি রায়। আবহ সঙ্গীত দিয়েছেন গৌতম নিজে। গৌতম ছাড়াও চিত্রগ্রহণ করেছেন তাঁর পুত্র ঈশান ঘোষ।
ছবিটি জানুয়ারি মাসে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নির্মাতাদের।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য