শুধু উপন্যাস নয়, ইতিহাসটাও থাকবে: শুভ্রজিৎ

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে শুভ্রজিৎ মিত্রের আগামী ছবি ‘দেবী চৌধুরানী’র ঘোষণা হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো। মূল দুই চরিত্রে থাকছেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আগের ছবি ‘অভিযাত্রিক’-এর জন্য জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন শুভ্রজিৎ। তাই বড়পর্দায় ‘দেবী চৌধুরানী’র আবির্ভাবের অপেক্ষা থাকছেই। কীরকম চলছে ছবির প্রস্তুতি? শ্যুটিং শুরুর আগে রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে কথা বললেন শুভ্রজিৎ। 

কেমন চলছে প্রিপ্রোডাকশন?

শুভ্রজিৎ: ফাইনাল রেকি চলছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে লোকেশন দেখার কাজ চলছে গত কয়েক মাস ধরে। প্রচুর খুঁজে তবে পছন্দের লোকেশন পাওয়া গেছে।



উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি অঞ্চল। সেইসব জায়গাতেই কি শ্যুটিং হবে? 

শুভ্রজিৎ: না, সেটা সম্ভব নয়। ১৭৭০ সালের প্রেক্ষাপটে ছবিটা হতে চলেছে। সেই সময়ের মতো এখন ওখানে কিছুই নেই। আমাদের তাই অনেক খুঁজে লোকেশন বার করতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গে জঙ্গল থাকলেও সেখানে শ্যুট করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া সরকারি অনুমতিও পাওয়া যাবে না। তাই আপাতত বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড আর কলকাতার আশেপাশে কিছু জায়গায় সেট তৈরি করে শ্যুট করা হবে। 

ছবিতে দেবী চৌধুরানীর ভূমিকায় শ্রাবন্তীকে বেছে নেওয়ার কোনও বিশেষ কারণ ছিল কি? 

শুভ্রজিৎ: দেবী চৌধুরানী বা প্রফুল্লর জন্য একজন পরমাসুন্দরী অভিনেত্রীর প্রয়োজন ছিল। কারণ সেই সময়ের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে পড়াশোনা করলেই বোঝা যায় সুন্দরী না হলে তখন কোনও কুলীন বা ধনী পরিবারে কোনও গরীব ঘরের মেয়ের বিয়ে হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই ধরে নেওয়া যায় প্রফুল্ল অসাধারণ রূপবতী ছিল। সেই চরিত্রে ভাবতে গিয়ে আমার প্রথমেই শ্রাবন্তীর কথা মনে পড়ে। 

আরও পড়ুন: “ আর ভালো লাগছে না”

সেক্ষেত্রে ভবানী পাঠকের চরিত্রে প্রসেনজিৎকে নেওয়ার কী কারণ? উপন্যাসে বর্ণিত চরিত্রের সঙ্গে তো তাঁকে মেলানো যায় না 

শুভ্রজিৎ: অসলে ভবানী পাঠক বলতেই আমাদের চোখে বসন্ত চৌধুরীর চেহারা ভেসে ওঠে। উপন্যাসের বর্ণনার সঙ্গেও মিলে যায়। কিন্তু আসল ভবানী পাঠক ১৭৭০ সালের সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের মূল নায়ক। দশনামি সম্প্রদায়ের একজন ভৈরব সাধু। উত্তরপ্রদেশ বা বিহারে যে ধরণের সন্ন্যাসী সম্প্রদায়কে দেখা যেত, তাঁরা একদিকে যেমন ঈশ্বরের আরাধনা করতেন, তেমনই প্রয়োজনে হাতে অস্ত্র তুলে নিতেও পিছপা হতেন না। আমি সেই চরিত্রের আদলে আমার ভবানী পাঠককে সাজাতে চলেছি। উপন্যাসের প্রফুল্ল, যার আসল নাম জয়দুর্গা, আমার ছবিটা তাকে নিয়েই। ছবিটা উপন্যাস অবলম্বনে হলেও আমার ছবিতে ইতিহাসটাও থাকবে, কারণ সেটা অস্বীকার করা যায় না। তাই এটুকু বলতে পারি এ ছবি বীর রসাত্মক হতে চলেছে। আর আমার ছবিতে মূল প্রতিপক্ষ ইংরেজ সরকার তথা ওয়ারেন হেস্টিংস। 

ইতিহাসটাও থাকবে

লোকেশনের খোঁজে

১৭৭০ সালের সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নিয়ে লেখা ‘আনন্দমঠ’ অবলম্বনে একটি দক্ষিণী ছবি হতে চলেছে। সেটা কি কোনওভাবে তোমাকে ‘দেবী চৌধুরানী’ করতে অনুপ্রাণিত করেছে? 

শুভ্রজিৎ: একেবারেই না। আমার ছবিটা তার অনেক আগেই ভাবা হয়েছে। ১৭৭০ সালের প্রেক্ষাপটে একটা ছবি করা মানে সেটা একটা পিরিয়ড পিস। ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে সেরকম একটা গল্প ভাবতে গেলেও তো অনেকটা সাহস লাগে। সবথেকে বড় কথা বাজেট নিয়ে একটা পরিকল্পনা লাগে। এটা তো এক-দু’দিনের ব্যাপার নয়। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পরেই আমি ছবিটা করব বলে ঠিক করি। 

আরও পড়ুন: ‘মাসুম’-এর সিক্যুয়েল করবেন শেখর?

বাজেটের প্রসঙ্গ যখন এল তখন প্রযোজকের ব্যাপারেও প্রশ্ন এসেই যায়। মাঝে শোনা যাচ্ছিল প্রযোজক নিয়ে কিছু সমস্যার কথা, সেটা কতটা সত্যি? 

শুভ্রজিৎ: কোনও সমস্যা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রযোজনা সংস্থা ছবিটার দায়িত্ব নিয়েছে। যেহেতু ছবিটা শুধু বাংলায় নয়, আরও ছ’টা ভাষায় হতে চলেছে তাই কতটা বড় স্কেলে হবে সেটা আন্দাজ করা যায়। ছবির বাজেট আড়াই মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওদের ইচ্ছে ছিল সর্বভারতীয় পরিচিতি আছে এমন অভিনেতাদের নেওয়া হোক। তবে আমি শুরু থেকেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতাদের দিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। ‘কান্তারা’ তো সারা দেশের মানুষ দেখেছে। সেখানে কিন্তু সবাই আঞ্চলিক অভিনেতা। তাই অভিনেতা কোথাকার সেটার থেকেও বড় হচ্ছে ছবির মেকিং। 



প্রায় তিনশো বছর আগের পটভূমিতে তৈরি একটা ছবিতে সেই সময়ের শরীরীভাষা বা কথ্যভাষা একেবারেই আলাদা হওয়ার কথা। সেটা ছবিতে রাখছ কি? 

শুভ্রজিৎ: নিশ্চয়ই। সেই সময়ের হাঁটাচলা বা কথাবার্তা বলার ধরণ এখনকার মতো হবে না। আবার একেবারে প্রাচীন ভাষা তুলে আনলে সেটাও সিনেম্যাটিক হবে না। তাই আমরা একটা মধ্যপন্থা নেওয়ার কথা ভেবেছি। যেহেতু রংপুর থেকে এই বিদ্রোহ শুরু হয়ে ক্রমশ বৃহত্তর বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে, তাই পূর্ববঙ্গের ভাষার পাশাপাশি এদিককার ভাষাও রাখতে হবে। এই পূর্ববঙ্গীয় ভাষা সংক্রান্ত ওয়ার্কশপ করাচ্ছে মিথিলা (রাফিয়াত রশিদ) এবং অন্যান্য তালিম দিচ্ছেন সোহাগ সেন। 

শ্যুটিং কবে শুরু হচ্ছে?

শুভ্রজিৎ: বৃষ্টি শেষ হলেই আমরা শ্যুট শুরু করব। পুজো না কাটলে যেহেতু বৃষ্টি থামার ব্যাপার নেই, তাই ততদিন অপেক্ষা করতেই হবে। কারণ সেট বানিয়ে লম্বা সময় নিয়ে আমাদের শ্যুটিং চলবে। তিনটে খেপে, আড়াই মাস ধরে শ্যুটিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের টার্গেট ২০২৪-এর শরৎকালে ছবিটা রিলিজ় করার।

আরও পড়ুন: সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের কথা নিয়ে ছবি

প্রযোজনা সংস্থা সর্বভারতীয় অভিনেতা চাইলেও তুমি বাংলার শিল্পীদের নিয়েই কাজ করতে চেয়েছ। এরকম একটা সুযোগ পেয়েও ছেড়ে দেওয়ার কারণ কী? বাকি চরিত্রের কাস্টিং কি চূড়ান্ত হয়ে গেছে?

শুভ্রজিৎ: ওরা দীপিকা পাডুকোনকে চেয়েছিল। আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। তাই আমার মনে হয়েছিল দেবী চৌধুরানীর চরিত্রে কোনও বাঙালিকেই চাই। বাংলার ইতিহাস বাইরের কাউকে দিয়ে বলাবার দরকার হবে কেন? তবে মজনু শাহ চরিত্রটি, যিনি সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের আর এক প্রধান মুখ, তাতে কাকে নেওয়া হবে সেটা এখনও ভাবা হয়নি। ওই চরিত্রে হয়তো সেরকম কাউকে নেওয়া হতে পারে যেহেতু সেখানে হিন্দি সংলাপ বলার কিছু ব্যাপার থাকবে।  

‘অভিযাত্রিক’ মুক্তির আগে থেকেই ‘মায়ামৃগয়া’ নিয়ে তুমি কাজ করছিলে। সেটা কি তাহলে মুক্তি পাবে না? 

শুভ্রজিৎ: সেটাও আসবে, তবে কিছুদিন পরে। তার আগে আপাতত আমি ‘দেবী চৌধুরানী’তেই মনোযোগ দিতে চাই। এটা শেষ হলে ছোট স্কেলে কোনও একটা ছবি করার ইচ্ছে রয়েছে। তারপর আবার নতুন কিছু ভাবব। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *