বাষ্প হয়ে যাচ্ছে ধূসর অতীত, শেষ পোস্টে লিখেছিলেন সুশান্ত
RBN Web Desk: ‘সুলঝায়েঙ্গে উলঝে রিস্তো কা মাঞ্জা’র সুরে আশার আলো জাগাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবের জীবনে তা পারলেন না অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। আজ সকালে আত্মঘাতী হলেন ৩৪ বছর বয়সী এই অভিনেতা। বাড়ির পরিচারক পুলিশকে ফোন করে জানানোর পর তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।কিন্তু কেন এই মৃত্যু? নাম, অর্থ, যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তির দিকে পদে-পদে এগিয়ে যাওয়ার মাঝে কেন এই পথ বেছে নিলেন সুশান্ত? তাঁর বাড়ি থেকে পাওয়া যায়নি কোনও সুইসাইড নোট। সূত্রের খবর, বেশ কিছুদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুর পর তাঁর ঘর থেকে বেশকিছু কাগজপত্র ও ওষুধ পাওয়া গেছে যা থেকে স্পষ্ট যে অবসাদের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন সুশান্ত। লকডাউন চলাকালীন একাই থাকতেন তিনি। কিছুদিন আগেই ঘনিষ্ট বন্ধু অঙ্কিতা লোখাণ্ডের বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসে। তবে কি চূড়ান্ত অবসাদই হয়ে দাঁড়াল সুশান্তের জীবনের ইতিচিহ্ন?
১৪ জুনের এই মেঘলা সকালের অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ ভুলতে পারবেন না কেউই। সুশান্তের বেশ কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্ট আচমকাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে কি তিনি কিছু জানিয়ে যেতে চেয়েছিলেন? বলে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর যাওয়ার সময় আসন্ন? ৩ জুন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা তাঁর মায়ের ও নিজের একটি ছবিতে তিনি লেখেন, ‘স্মৃতির ঝাপসা হয়ে যাওয়া পাতা থেকে ধূসর অতীত যেন অশ্রুধারার সঙ্গে মিশে বাষ্প হয়ে যাচ্ছে। অপূর্ণ স্বপ্নগুলোর ক্লেশ হাসির বৃত্তে বন্দী । একই সঙ্গে বয়ে চলেছে দ্রুতগামী জীবন।’ এই দুয়ের মাঝে দোদুল্যমান সুশান্ত হয়ত তাই বেছে নিলেন চিরশান্তির পথ।
আরও পড়ুন: সব কান্নার শব্দ হয় না, বেজে উঠল পটদীপ
এত সাফল্য, এত বৈভবের মধ্যে থেকেও অতীতের সুমধুর স্মৃতি আর অজানা ভবিষ্যতের আতঙ্কেই হয়ত নিজেকে শেষ করে দিলেন নায়ক। কিন্তু ‘পিকে’র সরফরাজ়ের তো ধোকা দেওয়ার কথা ছিল না! সে বলে গিয়েছিল, ‘চার কদম…বস চার কদম চল দো না সাথ মেরে’। সত্যিই, মাত্র চার কদমের সঙ্গী ছিলেন তিনি আমাদের।
২০০২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মাকে হারান সুশান্ত। তারপর থেকেই শুরু জীবনযুদ্ধ। ইঞ্জিনিয়রিং এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সারা ভারতে সপ্তম, পদার্থবিদ্যার অলিম্পিয়াডে প্রথম, দিল্লীর কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন সুশান্ত। আচমকাই রূপোলি পর্দার হাতছানিতে তৃতীয় বর্ষে এসে কলেজ ছাড়লেন তিনি। এরপর বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয়, জনপ্রিয় ছবির নেপথ্য নৃত্যশিল্পী হিসেবে দেখা গেছে তাঁকে। শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেলেন ২০১৩ সালে অভিষেক কাপুরের ‘কাই পো চে’ ছবিতে। এও এক হার না মানার গল্প। ঈশান ওরফে ইশ তো থেমে যাওয়ায় বিশ্বাসী ছিল না। তাই তো সে সিলেবাসের বাইরে গিয়ে জীবনে শেখার কথা বলত। বরাবরই সব ছবিতে হেরে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হাল না ছেড়ে জিতে যাওয়া মানুষটা জীবনযুদ্ধে এত সহজে হার মানলেন কেন?
আরও পড়ুন: সিনেমার মতোই ছিল যে জীবন
মহেন্দ্র সিং ধোনির বায়োপিকে অভিনয় করে বহুল প্রশংসা পান সুশান্ত। যার অভিনয় দেখে সিনেমা হলে সবাই চিৎকার করে উঠেছিল, ‘মাহি মার,’ সেই সুশান্ত নিজের জীবনের ফিনিশিংয়ে ওভারবাউন্ডারি না হাঁকিয়ে খুব সহজে হিট উইকেট হয়ে গেলেন।
‘ছিছোড়ে’ অনিরুদ্ধ বলেছিল জীবনে হার, জিত, ব্যর্থতা নিয়ে আমরা অত্যধিক ভাবনাচিন্তা করি। আর সেই কারণেই আমরা বাঁচতে ভুলে যাই। গল্পের মূল বক্তব্যই তো ছিল আত্মহত্যা শেষ সমাধান নয়। তাহলে? যে অনিরুদ্ধ শিখিয়ে গিয়েছিল, ‘জ়িন্দেগি মে অগর কুছ সবসে যাদা ইম্পরট্যান্ট হ্যায়, তো ও হ্যায় খুদ জ়িন্দেগি,’ আজ সে নিজেই সেই সমস্ত কথাকে শুধুমাত্র ফিল্মি সংলাপ বানিয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিল।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
তাঁর শেষ অভিনীত ছবি ‘দিল বেচারা’ এখনও মুক্তি পায়নি। মুক্তির অপেক্ষায় আরও কত জিতে যাওয়ার গল্প। মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা তাঁর নিজের কবিতার দু লাইন উঠে আসে বারবার। ‘মা, তোমার মনে আছে, তুমি কথা দিয়েছিলে সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে, আমিও তোমার সঙ্গে সারাজীবন হাসিমুখে জীবন কাটাব?”
হয়ত সেই কথা রাখতেই এই পরিণতি বেছে নিলেন সুশান্ত। হয়ত নয়। জানা যাবে না কোনওদিনই।