এত ‘অরণ্য’ কেন?
আজ থেকে ৩৬ বছর আগে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটি উক্তি সে সময় সাংঘাতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। বহুল প্রচারিত এক বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে লেখা নিবন্ধে শক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘এত কবি কেন?’ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বয়ে যায় বাংলা সাহিত্যমহলের একাংশে। শক্তি ছাড়াও শঙ্খ ঘোষ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, উৎপলকুমার বসু, তারাপদ রায়, শরৎ মুখোপাধ্যায়রা তখন নিয়মিত কবিতা লিখছেন। নবীনদের মধ্যে উঠে আসছেন জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার ও আরও অনেকে। তাহলে শক্তি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলেন কেন?
২ আগস্ট ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত সেই নিবন্ধেই লুকিয়ে ছিল শক্তির খেদোক্তির কারণ। তিনি লিখেছিলেন, কবিতার মূল্য আর গুণগত মানের উপর নির্ভর করে না। তা অনেক বেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। কবিতাকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। মনে রাখা দরকার, ভারতে মুক্তবাজার অর্থনীতি আসতে তখনও চার বছর দেরি।
আরও পড়ুন: “রায় পরিবারের পছন্দের ফেলুদা আমিই”
শক্তি আজ বেঁচে থাকলে হয়তো প্রশ্ন করতেন, এত ‘অরণ্য’ কেন? ঘনিষ্ট বন্ধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ অবলম্বনে ১৯৭০ সালে একই নামের ছবি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। মূল গল্প ছিল চার বাউণ্ডুলে বন্ধুর হঠাৎ ট্রেনে উঠে ধলভূমগড় যাত্রা নিয়ে। বাস্তব জীবনে তেমনটাই করেছিলেন সুনীল, শক্তি, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও সমীর রায়চৌধুরী।
সত্যজিতের ছবিতে চার বন্ধু অসীম, সঞ্জয়, হরি ও শেখর হঠাৎ কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে পালামৌয়ের উদ্দেশ্যে। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শমিত ভঞ্জ, রবি ঘোষ, শর্মিলা ঠাকুর, কাবেরী বসু, সিমি গরেওয়াল ও পাহাড়ি সান্যাল। পরবর্তীতে এই কাল্ট ছবির সিক্যুয়েল তৈরি করেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আবার অরণ্যে ‘ ছবিতে আগের ছবিটির অনেকের সঙ্গে ছিলেন টাবু, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, রজতাভ দত্তরা। অসীম-সঞ্জয়-হরির পরবর্তী প্রজন্ম ও বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ ছিল ছবির বিষয়।
আরও পড়ুন: “আর ভালো লাগছে না”
এখানেই শেষ নয়। বর্তমানে আরও দুটি ছবি তৈরি হচ্ছে মূল ছবির নাম ধার করেই। প্রথমটির নাম ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। জিতু কমল, কিঞ্জল নন্দ, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, সোহিনী সরকার অভিনীত ছবিটির প্রস্তাব প্রথমে গিয়েছিল পরিচালক অঞ্জন দত্তের কাছে। সত্যজিতের ছবির রিমেক করতে রাজি হননি অঞ্জন। পরে পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন অরুণ রায়। ছবিটি এ বছরেই মুক্তি পাওয়ার কথা।
এদিকে আরও একটি ছবির ঘোষণা হয়েছে যার নাম ‘আবার অরণ্যের দিনরাত্রি’। সুমন মৈত্রের এই ছবিতে থাকবেন পায়েল সরকার, অলিভিয়া সরকার, আরিয়ান রায়, তনিমা সেন। তবে নামে মিল থাকলেও এই ছবির গল্পের সঙ্গে নাকি আগের ছবিগুলির কোনও সাদৃশ্য থাকবে না।
আরও পড়ুন: বয়স ষাটোর্ধ্ব, সম্পূর্ণ অচেনা লুকে অভিনেত্রী
প্রশ্ন হলো বাংলা ছবিতে নামের কি এতই অভাব হয়েছে যে একটি ছবির নাম থেকে পরের পর ছবি হতে থাকবে? দর্শক আদৌ এই ছবিগুলিকে গ্রহণ করেন কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
তবে বিক্রির দিক থেকে সত্যজিৎ-সম্পর্কিত কোনওকিছুর বোধহয় ‘মার’ নেই। আর সেই কারণেই বাংলা ছবির এই মন্দাবাজারে নির্মাতারা সেফ খেলতে চাইছেন।
ছবি: নিমাই ঘোষ/আইএমডিবি