অপু-দুর্গার রেলগাড়ির স্মৃতি উস্কে প্রকাশিত হলো ‘অভিযাত্রিক’-এর টিজ়ার
কলকাতা: ‘আমি তোমার বন্ধু,’ সদ্য পরিচিত শিশুপুত্র কাজলকে বলেছিল অপু। এরপরের দৃশ্যটি পরম ভরসার। ‘বন্ধু’র কাঁধে চেপে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ায় কাজল। ১৯৫৯ সালে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’ উপন্যাস অবলম্বনে মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির শেষ এখানেই। সেই ছবির ছয় দশক পর আবারও বড় পর্দায় ফিরছে অপু। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের যে অংশটি সত্যজিৎ ‘অপুর সংসার’-এ রাখেননি, তাই নিয়েই শুভ্রজিৎ দত্ত পরিচালনা করেছেন অভিযাত্রিক। ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হলো ‘অভিযাত্রিক’-এর টিজ়ার। ছবির কলাকুশলী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিক্ষিকা, বিভূতিভূষণের পুত্রবধূ মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।
“প্রায় ১০-১১ বছর আগে ‘অপরাজিত’ পড়তে গিয়ে আবিস্কার করি যে এই উপন্যাসের প্রথম দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে সত্যজিৎ ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ করেন,” বললেন শুভ্রজিৎ। “বিভূতিভূষণের মূল রচনায় অপুর জার্নিটা কিন্তু তারপরেও চলছে। তখনই মনে হয়েছিল বাকি অংশটুকু নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।”
শুভ্রজিতের ছবিতে অপুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন চক্রবর্তী। “ছবিটা করব বলে ঠিক হওয়ার পর ‘অপু ট্রিলজি’ দেখিনি বা বইটাও পড়িনি,” বললেন অর্জুন। “আমি চাইনি ‘অপু ট্রিলজি’র কোনও ছাপ আমার কাজের মধ্যে পড়ুক। কারণ আমার কাছে ‘অভিযাত্রিক’-এর চিত্রনাট্যটা ছিল। সেটা এতই সুন্দর যে গল্পটা সেখানেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। সত্যজিৎ ‘অপরাজিত’র যে অংশ নিয়ে কাজ করেছেন সেটা আমাদের চিরকালের স্মৃতি। সেই অংশকে কাটাছেঁড়া না করে একেবারে আলাদা একটা গল্প হিসেবে এটাকে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।”
আরও পড়ুন: তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে
ছবিতে অপুর স্ত্রী অপর্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিতিপ্রিয়া রায়। তাঁর পক্ষে অপর্ণা হয়ে ওঠা বেশ কঠিন ছিল বলে স্বীকার করলেন তিনি। “চরিত্রটার জন্য পড়াশোনা করতে হয়েছে। আমি অনেক পরে ছবিটার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। তাই ওয়ার্কশপে অনেক বেশি খাটতে হয়েছে । তবে নিজের একশো শতাংশ দিয়ে অপর্ণা হয়ে উঠতে চেয়েছি এটুকু বলতে পারি,” বললেন দিতিপ্রিয়া।
‘অভিযাত্রিক’-এর ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিক্রম ঘোষ। একটা সময় বাংলা ছবিতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে কাজে লাগানোর কোনও সুযোগ পাচ্ছিলেন না বলে কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। “গত কয়েক বছরে ছবিটা অনেকটাই পাল্টে গেছে,” বললেন বিক্রম। “এখন রাগসঙ্গীত নিয়ে কাজ করতে পারছি আর সেটা মানুষের ভালো লাগছে। স্বাভাবিক কারণেই ‘অভিযাত্রিক’-এ সুর নিয়ে প্রোগ্রামিংয়ের সুযোগ খুব একটা ছিল না। সেতার, সরোদ, বাঁশির মতো সব আসল বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছে এই ছবিতে।”
ছবিতে রাণুদির চরিত্রে থাকছেন শ্রীলেখা মিত্র ও কাজলের ভূমিকায় দেখা যাবে আয়ুষ্মান মুখোপাধ্যায়কে। এছাড়া প্রখ্যাত সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষের আদলে একটি চরিত্রে থাকছেন বরুণ চন্দ।
সম্পূর্ণ সাদাকালোয় নির্মিত ‘অভিযাত্রিক’-এর চিত্রগ্রহণ করেছেন সুপ্রতীম ভোল।