ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ঙ্কর মোবাইল গেমিংয়ে আসক্তি: রাজ
RBN Web Desk: ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, আজকাল বিজ্ঞপ্তিতে প্রায় সর্বত্র লেখা থাকে এ কথা। বছর কুড়ি আগেও সবাই হয়তো ব্যাপারটা নিয়ে ততটা সচেনতন ছিলেন না। তেমনই হয়তো আরও কয়েক বছর পরে এরকমই কোনও বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকবে, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, এমনটাই মনে করেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী।
বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ছাড়া প্রায় সবার কর্মজীবন অচল। কিন্তু কাজের বাইরে স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা? একটা গোটা প্রজন্ম যে মোবাইল ফোন ব্যবহারের নেশায় ডুবে গিয়ে জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলছে, আশেপাশের পৃথিবীকে দেখতে ভুলে যাচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনলাইনে গেম খেলার অভ্যাস সমাজের এক বিরাট অংশকে তাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
এই ভয়াবহ সমস্যাকে সামনে রেখেই আসছে রাজের পরবর্তী ছবি ‘হাবজি গাবজি’। ছবিতে অভিনয়ে রয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ও সামন্তক দ্যুতি মৈত্র। সম্প্রতি কলকাতায়, এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে, অভিভাবকদের সামনে এই নিয়ে কথা বললেন পীযুষ পান্ডে, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, রাজ, শুভশ্রী ও অন্যান্যরা।
নিজে এক সন্তানের মা হিসেবে শুভশ্রী জানালেন, “আমার বাচ্চা খুব ছোট। আমাদের ইচ্ছে, আমরা ওকে যা কিছু শেখাতে চাই, তা কাজের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখাব। আজকাল প্রায়ই শুনি যে মোবাইল ফোন দেওয়া হবে না বলেছে বলে কোনও কিশোর আত্মহত্যা করেছে বা বাবা-মাকে আঘাত করেছে।”
আরও পড়ুন: শেষ যাত্রায় ব্রাত্য, পথ হেঁটেছিলেন মাত্র কয়েকজন
শিশু-কিশোরদের একটা বড় অংশের কোনও সঙ্গী নেই বলে বাবা-মায়েরাই তাদের স্মার্টফেন ব্যাবহার করা শেখাচ্ছেন বলে মনে করেন শুভশ্রী। এমনকি স্কুল থেকে ফিরে অনেক বাচ্চাই তাদের অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকতে দেখে।
“এই ছবিটা সব অভিভাবক ও সন্তানদের কথা ভেবেই বানানো হয়েছে। এমন নয় যে ছবিটা রাতারাতি সবকিছু পাল্টে দেবে। তবে এটুকু বলতে পারি ছবিটা দেখার পর বাবা-মায়েরা হয়তো তাঁদের সন্তানকে সময় দিতে চেষ্টা করবেন। আর বাচ্চাও গেম খেলার আগে অন্তত একবার ভাববে,” বললেন শুভশ্রী।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
“ছবিটা করার সময় গেমিং ডিসঅর্ডার নিয়ে আমি অনেক কিছু জানতে পারি,” বললেন রাজ। “যে বাচ্চার স্ক্রিনটাইম বেশি, তাকে কোনও বইয়ের পাতা থেকে পড়তে বললে সে কয়েকটা লাইন বাদ দিয়ে পড়বে। লিখতে বললে দেখা যাবে তার হাতের লেখা খারাপ আর প্রচুর বানান ভুল হচ্ছে। আমার তো মনে হয় এই মুহূর্তে ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ঙ্কর রোগ গেমিং ডিসঅর্ডার।”
বেশিরভাগ বাচ্চা ফোনে যা খেলছে তা হলো পাবজি ধরণের কিলিং গেম। অর্থাৎ মানুষ মারার খেলা। সেখান থেকে তাদের খারাপ ব্যবহার, খারাপ ভাষা, মিথ্যে বলা, হিংস্র হয়ে ওঠা এসবের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেন রাজ।
আরও পড়ুন: বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে চরম অবসাদ, হোমসে ‘ডুবে’ গিয়েছিলেন জেরেমি
“এই ঘটনাগুলো আমার ছবিতে আছে। এগুলো কাল্পনিক নয়, সত্যি ঘটনা। আমি এই ছবিটা থেকে কোনও মেসেজ দিতে চাই না। আমি চাইছি না এই ঘটনা আপনার বাড়িতে ঘটুক। সময় থাকতে সাবধান না হলে ভবিষ্যত কত ভয়ঙ্কর হতে পারে আমরা জানি না। এই ছবিটা বাচ্চাদের জন্য তো বটেই, তবে তার চেয়েও অনেক বেশি তাদের অভিভাবকদের। এই গল্পটাই বলতে চেয়েছি। যে বাচ্চা বোঝে তাকে নিয়ে ছবিটা দেখুন। আশা করি বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের উন্নতি হবে ছবিটা দেখলে,” বললেন রাজ।
ছবির কাহিনী লিখেছেন রাজ নিজে, চিত্রনাট্য করেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। সুরকারের দায়িত্বে রয়েছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। সম্পাদনা করেছেন মোঃ কালাম ও চিত্রগ্রহণে রয়েছেন মানস গঙ্গোপাধ্যায়।
৩ জুন মুক্তি পাচ্ছে ‘হাবজি গাবজি’।
ছবি: স্বাতী চট্টোপাধ্যায়