‘পথের পাঁচালী’র প্রভাবেই মূলধারার ছবি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছি: রঘুবীর যাদব
বহু ছবিতে মনে রেখে দেওয়ার মতো চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন দুটি অস্কারে মনোনীত ছবিতেও। সম্প্রতি সিকিমে ইন্দ্রনীল ঘোষের ‘সিনিওলচু’ ছবির শুটিং সেরে কলকাতায় এসেছিলেন রঘুবীর যাদব। ছবি ও থিয়েটারে অভিনয় নিয়ে রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে কথা বললেন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার (এনএসডি) এই প্রাক্তনী।
বহু বছর পর কলকাতায় এলেন
হ্যাঁ। মাঝখানে করোনা অতিমারীর জন্য সময়টা আরও দীর্ঘ হলো। কলকাতায় আসতে বরাবরই ভালো লাগে। এখানে মানুষগুলো খুব ভালো।
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এত ভালো যে বলে বোঝাতে পারব না। একে তো হিমালয়, দিনের একেক সময় তার একেক রূপ। আর শুধু তো বরফে ঢাকা পাহাড় নয়। ছোট পাহাড়ী গ্রাম, পাকদণ্ডি, মেঘ-রৌদ্রের খেলা, এ ঐশ্বর্য তো আর শহরে পাওয়া যায় না। তাছাড়া ইন্দ্রনীলের ইউনিটের প্রত্যেক কলাকুশলী এত ভালো যে আমরা দারুণ আনন্দে কাজ করেছি। এরকম সহকর্মী সবসময় পাওয়া যায় না। এই ছবিতে আমি গান গেয়েছি, বাঁশিও বাজিয়েছি।
এনএসডিতে ফিরলেন অনেকদিন পর
‘সিনিওলচু’তে আমি ছাড়া সব অভিনেতা সিকিমের। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নবাগত। আমিই ইন্দ্রনীলকে বলেছিলাম এনএসডি গ্যাংটক ক্যাম্পাস থেকে অভিনেতা নিতে। ওদের সঙ্গে ওয়ার্কশপও করলাম। কী সাংঘাতিক প্রতিভা রয়েছে ওদের মধ্যে। গিয়েছিলাম শিক্ষক হিসেবে কিন্তু নিজে অনেক কিছু শিখে ফিরছি। এও এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। আসলে এনএসডিতে যাওয়া আমার কাছে অনেকটা ঘরে ফেরার মতো ছিল।
আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান
বাংলা ছবি দেখেন?
‘পথের পাঁচালী’ আমার সিনেমাদর্শন বদলে দিয়েছিল। দেখার পর মনে হয়েছিল, সিনেমা এমনও হয়? এভাবেও একটা গল্প বলা যেতে পারে? তাই আমি সেই সব চরিত্রেই কাজ করি যেগুলো মাটির কাছাকাছি, যে চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে পারি। এই ভাবনা থেকেই ২৬ বছর আগে ‘দামু’ করেছিলাম।
তারপর আর বাংলা ছবি করলেন না কেন?
(হেসে) কেউ ডাকল না। তবু শেষমেশ ইন্দ্রনীল ডাকল। বাংলায় না হলেও, বাঙালি পরিচালকের ছবিতে কাজ করছি।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
‘সালাম বম্বে’ বা ‘লাগান’-এর মতো অস্কারে মনোনীত ছবিতে আপনি অভিনয় করেছেন। তবু মূলধারার হিন্দি ছবিতে আপনাকে দেখা যায় না কেন?
এর জন্যেও ‘পথের পাঁচালী’ দায়ী। এছাড়া বহু বাংলা ছবি দেখেছি আমি। বলতে পারেন তার প্রভাবেই আমি সচেতনভাবে মূলধারার ছবি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। প্রস্তাব যে আসে না তা নয়। কিন্তু বেশিরভাগ চরিত্রের সঙ্গেই নিজেকে মেলাতে পারি না। অর্থ নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ তবে আমি অল্পেতেই খুশি। কোনও বিরাট প্রযোজকের বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় করতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা আমার নেই। এটাও ঠিক যে মুঙ্গেরিলালের পর প্রধানজীর মতো একটা চরিত্র পেতে ৩৪ বছর লেগে গেল। তবে তা নিয়ে আমার কোনও আফসোস নেই। আমার কাজ দর্শকের মনে থাকল কিনা, সেটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: প্রতিবেদক