নারীবাদের অযথা লেকচারে হারিয়ে গেল রহস্যসন্ধানী মিতিন

ছবি: মিতিন মাসি

দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৫২ মিনিট

পরিচালনা: অরিন্দম শীল

অভিনয়ে: কোয়েল মল্লিক, বিনয় পাঠক, জুন মালিয়া, শুভ্রজিত দত্ত, রিয়া বণিক, অনির্বাণ চক্রবর্তী

RBN রেটিং: ২.৫/৫

বাঙালি পুরুষ গোয়েন্দাদের ভিড়ে বরাবরই স্বতন্ত্র মিতিন মাসি। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের এই জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ়ের ‘হাতে মাত্র তিনটি দিন’ কাহিনী অবলম্বনে অরিন্দম পরিচলনা করেছেন ‘মিতিন মাসি’। মূল গল্প কমবেশি সকলেরই জানা হলেও, অরিন্দমের ছবি শুরু হয় একটা দৌড়ের দৃশ্য দিয়ে, যেখানে মিতিনরূপী কোয়েলকে ধাওয়া করেছে বেশ কিছু বলশালী চেহারার লোক। শহর কলকাতার বিভিন্ন অলিগলির মধ্যে দিয়ে ছুটছেন সবাই। হঠাৎই মিতিন সবাইকে মেরে কুপোকাত করে দিলেন। নাহ, কোনও বদমায়েশ গুন্ডার কবলে পড়েননি তিনি, বরং কলকাতা পুলিশের অধিকর্তা অনিশ্চয় মজুমদারের (অনির্বাণ) আহ্বানে মেয়েদের আত্মপ্রতিরক্ষার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন।




এই অ্যাকশন দৃশ্য ও তার পরে মিতিনের মুখে নারীবাদের অযথা লেকচার বেশ বিরক্তিকর লাগে। মিতিনের কাছে কোনও কেস নেই, তাই সে ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’ জাতীয় কাজকর্ম করে দিন কাটাচ্ছে বলে মজা করে তার স্বামী পার্থ (শুভ্রজিত)। স্কুলে গরমের ছুটি, তাই মাসির বাড়ি বেড়াতে এসেছে টুপুর (রিয়া)। সন্ধ্যেবেলা পার্থর আনা মিত্র ক্যাফের ব্রেন চপ খেতে খেতেই মিতিনের ব্রেনের খেলা দেখানোর সুযোগ অকস্মাৎ এসে হাজির। ধনী ব্যবসায়ী রুস্তম জরিওয়ালার (বিনয়) একমাত্র সন্তান রৌনককে কারা যেন স্কুল থেকে অপহরণ করেছে। রহস্যে জড়িয়ে পড়ে মিতিন, টুপুর আর পার্থ।

মিতিনের ভূমিকায় কোয়েলের চরিত্রায়নে কিছুটা আশাহতই হবেন দর্শক। কোয়েলকে দেখে মনে হল সবটাই যেন তিনি ভীষণ জোর করে করছেন। অভিনয় থেকে অ্যাকশন, সবটাই আরোপিত ঠেকল। এমন কি পার্থর চরিত্রে শুভ্রজিতের অভিনয় আরও একটু বেশি স্বতঃস্ফূর্ততার দাবি রাখে। অরিন্দম সারা ছবি জুড়ে একটু বেশিই নারীবাদের সহনশীলতার বুলি আওড়ালেন, আর সেই কারণেই ছবির টানটান উত্তেজনায় ভাঁটা পড়ল।

আরও পড়ুন: পুরোনো প্রথায় ফিরতে চেয়ে ইমনের নতুন গান

মূল গল্পে মিতিন-পার্থর ছেলে বুমবুমের উল্লেখ থাকলেও, তাকে না এনে পরিবর্তে তাদের বৈবাহিক জীবনে সন্তানহীনতার দুঃখ কেন দেখানো হলো ঠিক বোঝা গেল না। নারীর জীবনে মাতৃত্বের আস্বাদের এই সুড়সুড়ি দেওয়াটা কি খুব জরুরী ছিল? ফেমিনিজ়মের বুলি যখন আওড়ানোই হলো, তখন মাতৃত্ব যে আজকের একজন শহুরে, শিক্ষিত নারীর কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেটা পরিচালক ভুলে গেলেন কি করে?

এছাড়া ছবির বিভিন্ন দৃশ্যে কন্টিনিউটি এবং ডিটেইলিংয়ের অভাব বেশ চোখে পড়ল। যেখানে সুচিত্রার গল্পের মূল আকর্ষণ তার ডিটেইলিং, সেখানে এই খামতিটা কি তাড়াতাড়ি ছবির কাজ শেষ করার কারণে? না হলে সকাল ১০-১১টা নাগাদ রুস্তমজির অফিস থেকে বেরোনোর সময় অত কুয়াশা থাকে কি করে? দেখে মনে হলো খুব ভোরে শ্যুটিং হয়েছে এই দৃশ্যের।

আরও পড়ুন: পুজোয় রবীন্দ্র সদনে বাংলা ছবি, সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের

ছবিতে মিতিনের পোশাক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যে কোনও অ্যাকশনের দৃশ্যেই জিন্স শার্ট পরে হাজির হচ্ছেন তিনি। যেন বুঝেই গেছেন এবার তাকে মারপিট করতে হবে। আর যখন বুঝে যাচ্ছেন, এখন বেরোলে তাকে কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে হবে না, তখনই তিনি শাড়ি পড়ছেন। স্বাভাবিক, শাড়ি পড়ে তো আর কুংফু ক্যারাটে করা যায় না।

কোয়েল তাঁর চরিত্রটা নিয়ে খেটেছেন খুব। তবুও তা অনেকটাই ফলপ্রসূ হলো না। সবটাই যেন ভীষণ গতানুগতিক। সুচিত্রার মিতিন নিজ চরিত্রেই সাবলীল। তাই ছবির ক্লাইম্যাক্সে মিতিনের মধ্যে একগাদা হিরোইজ়ম পুরে দেওয়াও অনর্থক। এছাড়া ছবিতে রুস্তমের স্ত্রী লীলার চরিত্রে জুনের সংলাপে হিন্দি টান এল কোথা থেকে? চরিত্র অনুযায়ী লীলা তো বাঙালি। টুপুরের চরিত্রে রিয়ার বিশেষ কিছু করার ছিল না। ছবিতে রৌনকের স্কুলের প্রধান অধ্যাপিকার অভিনয়ও ভীষন মেকী ঠেকল। তাঁর স্কুল থেকে একটি বাচ্চা অপহরণ হয়েছে শুনে বেশ অতিরঞ্জিত একটি অভিব্যক্তি দিলেন তিনি। 

আরও পড়ুন: পঁচিশে ‘উনিশে এপ্রিল’

তবে ‘মিতিন মাসি’র অন্যতম পাওনা এই ছবির আবহসঙ্গীত। বিশেষত মিতিনের অ্যাকশনের দৃশ্যগুলির পিছনে বিক্রমের তবলার আওয়াজ এই ছবিকে অন্যান্য ছবির অ্যাকশন দৃশ্য থেকে আলাদা করে দেয়। রশিদ খানের গান ছবির রহস্যের পুঞ্জিভূতকরণে সাহায্য করে। 

সব মিলিয়ে চেষ্টার ত্রুটি রাখনেনি পরিচালক। তবে ব্যোমকেশ বা শবরের মতো রহস্যছবি যিনি উপহার দিয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল। চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত হল কি না তা দর্শক বলবেন। তবে পুজোর মরশুমে বড় পর্দায় রহস্য কাহিনীর স্বাদ পেতে গেলে একবার অন্তত ‘মিতিন মাসি’ দেখাই যায়।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *