বাঙালি ভূতের আকাল দূর করার প্রয়াস
ছবি: ব্রহ্মদৈত্য
পরিচালনা: অভিরূপ ঘোষ
অভিনয়ে: সায়নী ঘোষ, রুদ্রনীল ঘোষ, সৌমাল্য দত্ত, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ২৪ মিনিট
RBN রেটিং: ৩/৫
অনেক বছর আগে এক বিশাল গ্রামের বাইরে একটা বটগাছে এক ব্রহ্মদৈত্য থাকত। গ্রামের মানুষ সন্ধ্যাবেলা ভয়ে সেই পথ দিয়ে যাতায়াত করত না। কিন্তু সেই গ্রামেরই এক চাষী একবার খুব বিপদে পড়ায় ওই ব্রহ্মদৈত্য তাকে সাহায্য করে। ছোটবেলায় ঠাকুমা, দিদিমার কাছ থেকে এরকম গল্প আমরা সবাই শুনেছি। মনুষ্য সমাজের মতো ভূতেদের সমাজেও শ্রেণীবৈষম্য চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে তা যদি হয় বাঙালি ভূত।
তবে এই সমাজের অন্যতম সেরা ভূত হলো ব্রহ্মদৈত্য। সাধারণত কোনও ব্রাহ্মণ মারা গেলে সে ব্রহ্মদৈত্য হয় এবং বটগাছে বাস করে। ঠাকুরমার ঝুলির বেশ কিছু গল্পে এই ব্রহ্মদৈত্যের স্বভাবের নানা কথা জানা যায়। কিন্তু সবিস্তারে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ব্রহ্মদৈত্যর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য কি? কেউ জানে না এর উত্তর। সবাই গল্পের ‘হ্যাপি এন্ডিং’টাই মনে রাখে। শুরুতে কী হয়েছিল কেউ বলতে পারবে না। সেই ব্রহ্মদৈত্যের গল্পের গোড়ার দিকের খোঁজটাই করলেন অভিরূপ।
আজকাল ভূতের কথা উঠলেই কিছু বিদেশি ছবির নাম উল্লেখ করা হয়। সে এমন এক একটা ছবি যা রাতের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বাংলায় বসে বিদেশের ভূত দেখা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। বাংলায় ভূতের প্রকারভেদ বলে শেষ করা যাবে না। মেছো, মামদো, শাকচুন্নি, ব্রহ্মদৈত্য, পেত্নী আরও কত কী। এদের নিয়ে ছবি হয় না কেন? এরা কি তবে কম ভয়ঙ্কর?
পেশায় সাংবাদিক সায়ন্তিকা (সায়নী) যখন তার সম্পাদকের দেওয়া এরকমই এক অদ্ভুতুড়ে অ্যাসাইনমেন্টে নাজেহাল, ঠিক তখনই তার মেলবক্সে একটা মেসেজ আসে ‘বাই আ ঘোস্ট ডট কম’ থেকে। মজার ছলে সেখান থেকেই ৯০ শতাংশ ছাড়ে ৯৯৯ টাকায় একটি সাড়ে তিনশো বছরের পুরোনো ব্রহ্মদৈত্য কিনে ফেলে সায়ন্তিকা। পরের দিন সায়ন্তিকার বাড়ি পৌঁছে যায় ব্রহ্মদৈত্য এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নিয়মাবলী। শত চেষ্টা করেও সায়ন্তিকা কিছুতেই সেই ব্রহ্মদৈত্যকে বশে আনতে পারে না। ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। ব্রহ্মদৈত্য মানেই যে খুব ভালো একজন ভূত, সেই ধারণা ভেঙে যায় সায়ন্তিকার। মৃত্যুভয় ঘিরে ধরে তাকে। শেষ পর্যন্ত কি হয়, তাই নিয়েই অভিরূপের ‘ব্রহ্মদৈত্য’।
বরাবরই নতুন বিষয়ের ওপর ছবি করে এসেছেন অভিরূপ, তা সে ‘জ়ম্বিস্থান’ হোক বা ‘রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ়’। তাই বাঙালি ভূতের আকাল দূর করার প্রয়াসের জন্য পরিচালককে কুর্নিশ। ভূত নিয়ে বাংলায় ছবি সেভাবে তৈরি হয় না। সেদিক থেকে একদম টাটকা একটা বিষয় দেখতে পাবেন দর্শক।
আরও পড়ুন: খেল দিখা সকোগে না?
অভিনয়ে প্রত্যেকেই যথাযথ। ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুদ্রনীল। সায়নী বরাবরের মতোই সাবলীল। আবহ সঙ্গীত এবং শিল্প নির্দেশনা এ ছবির ভৌতিক পরিবেশকে জোরালো করতে সাহায্য করে। কিছু-কিছু জায়গায় জাম্পকাটগুলো আগে থেকে আন্দাজ করা যায়।
তবে ‘ব্রহ্মদৈত্য’ দেখতে-দেখতে তৈরি হওয়া প্রত্যাশার ফানুসটা অনেকটাই চুপসে যায় ছবির শেষে। সোজা বাংলায়, শেষটা তেমন জমল না। তবু এ ছবি দেখে এটুকু বলা যায় যে বাড়িতে ব্রহ্মদৈত্য রাখার একটা দারুণ উপকারিতা আছে। সায়ন্তিকার ব্রহ্মদৈত্য ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড আর লিভারপুলের ফুটবল ম্যাচে কে জিতবে, সেই ভবিষ্যৎবাণী করে দিতে পারে। এরকম আরও কোনও ভবিষ্যৎবাণী জানতে গেলে একবার অন্তত ‘বাই আ ঘোস্ট ডট কম’ থেকে একটি ব্রহ্মদৈত্য অর্ডার করে দেখাই যেতে পারে। তবে বিফলে মূল্য ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, তা জানাননি পরিচালক।