সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের মোড়কে প্রাসঙ্গিক, সংবেদনশীল

ছবি: ইকির মিকির

পরিচালনা: রাতুল মুখোপাধ্যায়

অভিনয়ে: রূপাঞ্জনা মিত্র, রজতাভ দত্ত, সৌরভ দাস, তিয়াশা সাহা, অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, দেবপ্রসাদ হালদার, অনিন্দিতা রায়চৌধুরী, মণীশ শর্মা, গোলাম মোহাম্মদ, বিজয় রায়

দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৪১ মিনিট 

RBN রেটিং: ৩.৫/৫

রাজারহাটের একটি বহুতল আবাসনে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে স্বামীর থেকে আলাদা থাকে সুরাশা (রূপাঞ্জনা)। আলাদা থাকলেও, দুজনের যোগাযোগ রয়েছে তাদের মেয়ে মিলির (তিয়াশা) জন্য। একে করোনা মহামারীর সময়, তার ওপর ছোট বাচ্চা সামলে সবদিক বজায় রাখা মানে একরকম হিমশিম অবস্থা। তারই মধ্যে মেয়ের দেখাশোনা করা, অনলাইন ক্লাস, দোকান-বাজার, সুরাশাকে সব একা হাতে সামলাতে হয়। অবশ্য এই পরিস্থিতিতে খাবার-দাবার ও ওষুধের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো একেবারে দোরগোড়ায় নিয়ে হাজির করছে বিভিন্ন অনলাইন ই-কমার্স সংস্থা। যারা দিনরাত, ঝড়জল, বাধা-বিপর্যয় সব উপেক্ষা করে বাড়ি-বাড়ি জিনিসগুলো পৌঁছে দেন, তারা যেন সাক্ষাৎ আলাদিনের প্রদীপ ঘষে বেরিয়ে আসা জিন। রঞ্জন সান্যাল (রজতাভ) তেমনই একটি সংস্থার কর্মী। ছিমছাম, সাদামাটা চেহারার মানুষ, সুরাশাকে জিনিস দিতে এসে সে একটি অবাঞ্ছিত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।




‘ইকির মিকির’ মূলত সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের মোড়কে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ছবি। সুরাশার চরিত্রে রূপাঞ্জনা এককথায় অনবদ্য। ছোটপর্দায় খলনায়িকার চরিত্রে অধিক পরিচিত রূপাঞ্জনা। এখানে একেবারে উল্টো স্রোতে হেঁটে তিনি প্রমাণ করে দিলেন তাঁর অভিনয়ের পরিধি বহুদূর বিস্তৃত।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, জীবনযুদ্ধে সদ্য পা রাখা কাঁচা বয়সের ছেলেমেয়েরাই এই ধরণের ই-কমার্স সংস্থার ডেলিভারি পার্টনার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কোভিড অতিমারীতে বহু মানুষই হারিয়েছেন তাঁদের নিশ্চিত রোজগার। অনিশ্চিত জীবনের বদলে তাঁরা বেছে নিয়েছেন বাড়ি-বাড়ি জিনিস বিলি করার এই উঠতি রোজগারের পথ। বলা বাহুল্য মাঝবয়সী রজতাভ সেই চরিত্রে যথাযথ।

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের মোড়কে

নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে, শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণ শব্দটির সঙ্গে যখন একটু-একটু করে সাধারণ মানুষের পরিচয় হচ্ছে, ঠিক সেই সময় ধনঞ্জয়-হেতাল পারেখের ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। ধনঞ্জয়ের মতোই এক নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকায় দেখা যাবে দেবপ্রসাদকে। পোড়খাওয়া, দুঁদে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে সৌরভ ভালো। তবে অযথা অকথ্য ভাষার ব্যবহার, সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে।

আরও পড়ুন: কানে সত্যজিতের দশ

ছবির চিত্রনাট্যের বুনোট ভালো হলেও কয়েকটা জায়গায় খটকা লাগল। যেমন, আজকাল স্বামী-স্ত্রীর আলাদা থাকা নতুন কিছু নয়। তা সত্ত্বেও সিঙ্গল মাদার সুরাশা ফোনে স্বামীর নাম কেন ‘যাযাবর’ বলে সেভ করল তা বোধগম্য হলো না। অন্যদিকে ঘরে টেলিভিশন চলছিল না, কোনও হইচইও হচ্ছিল না। তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র প্রেসার কুকারের সিটির আওয়াজে কলিংবেল শুনতে না পাওয়ার যুক্তিটা বড়ই বেমানান। অন্য একটি দৃশ্যে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুজন অপরাধীর সামনে বসে গল্প শুনতে-শুনতে, দুঁদে পুলিশ অফিসার সমর (সৌরভ) প্রায় ঘুমিয়েই পড়ছিলেন। ভাবখানা এমন যেন পুরো ঘটনাটা তার জানা। নির্ধারিত সময় জিজ্ঞাসাবাদ করে কাটাতে হবে বলেই বসে থাকা।

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের মোড়কে

চিত্রগ্রহণে রক্তিম মন্ডল। ছবির শুরুতেই হিমাদ্রি সরকারের হাতের ছোঁয়ায় পুরো ঘটনার যে সংক্ষিপ্ত বিবরণ অ্যানিমেশনে দেখা যায় তা খুবই ভালো। ছবির কাহিনীকার রাহুল মুখোপাধ্যায়। তবে মনস্তত্ত্ব, সাসপেন্স, থ্রিলারের মিশেল ঘটাতে গিয়ে বিষয়টি একটু জটিল হয়ে গেছে। সহজ হলেও পারত। দেবজ্যোতি মিশ্রের আবহ ও সঙ্গীত ছবির সঙ্গে মানানসই। ছবির তিনটি গান গেয়েছেন নিকিতা গান্ধী, দেবজ্যোতি ও তিতাস ভট্টাচার্য। ঈশান শীলের সম্পাদনা আরও একটু মেদহীন হলে ভালো লাগত।

ছোটখাটো ভুলত্রুটি বাদ দিলে রাতুলের ‘ইকির মিকির’ সেই অর্থে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। শুধুমাত্র রূপাঞ্জনা এবং রজতাভর জন্য এই ছবি একবার দেখাই যায়।  



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Ankeeta

Sleep, travel, eat, repeat! Anchor, presenter, news reader, editor by profession. Long drives and exploring life are my favorite options. Stuck between food and fitness. Intoxicated by music. Painting, singing, photography and Rabindranath are my soulmates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *