প্রবাসী জীবনে মনকেমনের সেতু বাঁধার লক্ষ্যে ইশা-পরম জুটি

RBN Web Desk: নিজের বাড়ি, নিজের পাড়া, বা নিজের সমগ্র গণ্ডি ভালো লাগার জায়গা হলেও মাঝে-মাঝে বেশ একঘেয়েমিও এনে দেয়। নিজের জায়গাটুকু দিনের শেষে একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় দিলেও, কখনও হয়তো চেনা গণ্ডি থেকে একটু বিরতি চায় মন। তবু এই চেনা দিনরাত ঠিক কতটা প্রিয় সেটা বোঝা যায় নিজের আস্তানা ছেড়ে বিদেশে গেলে। নিজের দেশ, মানুষগুলোকে আরও বেশি করে তখন আপন মনে হয়। নিজের দেশের চেনা আরামের সামনে বিদেশের ঝাঁ চকচকে ঔজ্জ্বল্যও ম্লান হয়ে যায়। এমনই এক মনকেমনের ছবি অরিত্র সেনের ‘ঘরে ফেরার গান’। অভিনয়ে রয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইশা সাহা, গৌরব চট্টোপাধ্যায় ও রেশমী সেন। 

ছবির প্রেক্ষাপট লন্ডন। কল্যানী থেকে বিবাহসূত্রে সুদূর লন্ডনে আসতে হয় তোড়াকে (ইশা)। সে চেষ্টা করে নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে। তবু কোথাও যেন তাল কাটতে থাকে। তোড়া গান গায়। সেই গানের সূত্রেই তার আলাপ হয় ইমরানের (পরমব্রত) সঙ্গে। ইমরান একজন সঙ্গীতশিল্পী। সে নিজের ভাষার মাটির গানকে পৌঁছে দিতে চায় সে দেশের মানুষের কাছে। তোড়া আর ইমরান গানের মাধ্যমে এক নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে, খুঁজে পায় হারিয়ে যাওয়া নিজেদের। 

আরও পড়ুন: সম্পর্ক অস্বীকার জ়িনতের

“আমরা যারা নিজেদের বাড়ি থেকে দূরে থাকি,” বললেন পরমব্রত, “সে কর্মসূত্রে হোক বা অন্য যে কোনও কারণে, তারা সেখানেই নিজস্ব একটা ঘর তৈরি করার চেষ্টা করি। ইমরান আর তোড়া তেমনই দুটি মানুষ যারা নিজেদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে বসে নিজেদের জন্য একটা ঘর তৈরি করতে চায়। সেই কাজে সেতু হয়ে দাঁড়ায় তাদের গান। যে ধরনের গানে তারা বিশ্বাস করে সেটাকে আঁকড়ে ধরে তারা এগিয়ে যেতে চায়। এটা একটা আদ্যন্ত প্রেমের ছবি।”

এই প্রথমবার ইশা লন্ডনে গিয়ে কোনও ছবির শুটিং করলেন। তিনি জানালেন, “এটা প্রেমের গল্প, অবশ্যই বন্ধুত্বও আছে সেখানে। সঙ্গে এটা একটা গানের ছবিও। কীভাবে গানের মধ্যে দিয়ে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটা এই ছবিতে রয়েছে।”

প্রথমবার লন্ডনে কাজ করতে গেলেও সেভাবে বেড়ানো হয়নি বলে জানালেন ইশা। “আমি কিন্তু শুট করতে গিয়ে একটুও শপিং করিনি, ঘোরাঘুরিও করতে পারিনি। খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাজ হয়েছে। তবে প্রথমবার লন্ডন গিয়েছি কাজ নিয়ে এটাও আমার কাছে খুব আনন্দের ছিল। আর এই প্রথমবার কোনও ছবিতে আমাকে এতগুলো গানে লিপ দিতে হলো। এটা আমার কাছে একটা নতুন অভিজ্ঞতা কারণ এর আগে আর কোনও ছবিতে আমি লিপ দিইনি। আমার এমনিও গানের কথা মনে থাকে না, তাই সেদিক থেকে বেশ চাপের ছিল ব্যাপারটা।”

আরও পড়ুন: নিখোঁজ ব্লগার, আসছে রিঙ্গোর ‘বারাণসী জাংশন’

ছবিতে গানের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেল। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রবুদ্ধ বন্দোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, “সিনেমাতে গান থাকলে অনেকসময় গল্পটা থেমে যায়। গান শেষ হলে আবার গল্প শুরু হয়। এখানে তেমন হয়নি। বরং গান এখানে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সেইভাবেই গানগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। দুজন মানুষ দেশের বাইরে গিয়ে গানের মাধ্যমে নিজের দেশকে তুলে ধরছে, তাই গানের বিশুদ্ধতার দিকটা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। আবার সেটা পশ্চিমী দুনিয়ার মানুষ শুনবে সেটাও মাথায় রাখতে হয়েছে। তবে শুরু থেকেই গানগুলো যেন রিমিক্স মনে না হয় সেই চেষ্টাটা আমাদের ছিল। গানগুলোর মধ্যে দিয়ে বর্তমান যুগের আধুনিকতার সঙ্গে গানের মূল আভিজাত্যকেও ধরে রাখতে চেয়েছি আমরা।” 

ছবিতে বেশ কিছু লোকসঙ্গীতের সঙ্গে রয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং দুটি নতুন গানও। গানের কথা লিখেছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। গেয়েছেন তিমির বিশ্বাস এবং সমদীপ্তা। 

আরও পড়ুন: পরিণত প্রেমকাহিনী, হিন্দি ছবিতে ঋতুপর্ণা

নিজের ছবি নিয়ে অরিত্র জানালেন, “ঘরে ফেরা মানে আক্ষরিক অর্থে ঘর নয়, সেটা নিজের শেকড়ে ফেরা বা নিজের সম্মতির জায়গায় ফেরা এমনও হতে পারে। ইমরান বাংলা গানকে আন্তর্জাতিক করে তুলতে চায়। এই গল্পটা লন্ডনে না ফেলতে পারলে প্রবাসী জীবনের প্রতিকূলতা বোঝানো যেত না।”

ছবির নামকরণ মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডকে ট্রিবিউট দিয়েই করা হয়েছে বলে জানালেন অরিত্র। তাঁর আগামী ছবির নাম ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ও এই ব্যান্ডের গানের কথা থেকেই নেওয়া। 

১৭ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে ‘ঘরে ফেরার গান’।

ছবি: প্রবুদ্ধ নিয়োগী




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *