নিখোঁজ ব্লগার, আসছে রিঙ্গোর ‘বারাণসী জাংশন’

এক ব্লগারের রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়া এক সাংবাদিকের রোমহর্ষক কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে পরিচালক অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়েব সিরিজ় ‘বারাণসী জাংশন’। অভিনয়ে রয়েছেন অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, জিতসুন্দর চক্রবর্তী, যুধাজিৎ সরকার, ঋদ্ধীষ চৌধুরী, কোরক সামন্ত, অভিজিৎ সেনগুপ্ত, অরূপ জাইগিরদার, মহম্মদ করীম ও অগ্নীভ বন্দোপাধ্যায়। বারাণসীর আউটডোরে আগাগোড়া মোবাইল ফোনে শুট করা এই সিরিজ়ের নানা বিষয় নিয়ে একান্ত আড্ডায় রেডিওবাংলানেট-এর প্রশ্নের উত্তর দিলেন রিঙ্গো।

সিরিজ়ের গল্প, পরিচালনা, চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা সবটাই তোমার একার হাতে। কীভাবে শুরু হলো এই কাজটা? 

এটা বারাণসীর ওপর তৈরি করা একটা চেজ় থ্রিলার। আমি কিছুদিন আগে একটা শর্ট স্টোরি শুট করছিলাম বারাণসীতে। সেটা করতে গিয়ে আমার মনে হলো বারাণসী এমন একটা জায়গা যেখানে অনেকরকম জিনিস একসঙ্গে পাওয়া যায়। ধর্ম ছাড়াও এখানে এমন অনেক কিছু আছে যেখানে একটা থ্রিলার খুব সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারে। আমি চেয়েছিলাম সিরিজ়টা মোবাইল ফোনে শুট করতে। সেটা নিয়ে অনেকেরই শুরুতে একটু অস্বস্তি ছিল। তবে কাজটা দেখার পর সকলে বলতে বাধ্য হবে যে এটাই ছবি তৈরির ভবিষ্যত। কারণ যারা দেখেছে তারা একবাক্যে স্বীকার করেছে ক্যামেরার চেয়ে গুণমান কোনও অংশে কম হয়নি।



গল্পটা তো থ্রিলার। গল্পের বিষয়টা কী? আর বারবার থ্রিলারে ফেরাই বা কেন?

থ্রিলার এই কারণেই যে সারা ভারতে যে কটা ওটিটি আছে, সকলের থ্রিলার কনটেন্টই বেশি। কারণ দর্শক থ্রিলারধর্মী কাজ বেশি দেখতে চায়। সেখানে একটা অপেক্ষা থাকে আগামী পর্বে কী হবে। আমার এই সিরিজ়েও পরের এপিসোডের জন্য সেই অপেক্ষাটা থাকছে। কারণ ওই টানটান ব্যাপারটা ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে থাকা জরুরি। গল্পটা একজন ব্লগারকে নিয়ে, যে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার ছবিগুলোর আউটডোর স্পটে গিয়ে শুট করে। বারাণসীতে সে যায় ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ ছবির শুটিংয়ের জায়গাগুলো দেখাতে। অথচ সেটা করতে গিয়েই সে একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে যায় এবং নিরুদ্দেশ হয়। আর একজন সাংবাদিক সেই নিখোঁজ ব্লগার ছেলেটিকে খুঁজতে এসে কীভাবে নানা বিপদের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে, সেটা নিয়েই পাঁচ পর্বের এই সিরিজ়।

নিখোঁজ ব্লগার

বারাণসীর খোলা আকাশের নিচে শুট করার অভিজ্ঞতা কেমন হলো বলো

প্রথমেই বলি আমরা দিনে ১৬-১৭ কিলোমিটার হেঁটে কাজ করেছি। গঙ্গার ধারে কাজ করতে গেলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আবার রাতে ২-৩ ডিগ্রি ঠাণ্ডার মধ্যেও কাঁপতে-কাঁপতে শুট করেছি। প্রত্যেক অভিনেতাকে ধন্যবাদ তাঁরা আমাকে সবরকম সহযোগিতা করেছেন। গঙ্গারতির সময় হাজার-হাজার মানুষের ভিড়ের ভেতর দিয়ে হেঁটে গিয়ে আমরা শুট করেছি, একটা লোকও ফিরে তাকায়নি। মোবাইল ফোনে শুট করার এটা সবথেকে বড় সুবিধা ছিল। যেভাবে সবাই ভিডিও শুট করে, ফোনে আমিও সেভাবেই করেছি। কেউ ভাবতেও পারেনি আমি ফিল্মের শুট করছি। বড় ক্যামেরা নিয়ে ওই জায়গায় কাজ করা প্রায় অসম্ভব। একজন সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে বলতে পারি বারাণসী এমন একটা জায়গা যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই খুব সুন্দর দেখা যায়। সেটা ছবিতে ব্যবহার করেছি আমরা। তবে আমি বারবার বারাণসীতে নানা কাজের জন্য শুট করতে গেছি। তাই নিজের কাছেও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল যে আমার দুটো কাজের মধ্যে যেন তফাৎ থাকে, যেন একরকম না হয়ে যায়। আর বারাণসীর মানুষ, বা ওখানকার পুলিশ ভীষণভাবে আমাদের সাহায্য করেছে। কলকাতার মানুষ হয়েও বলছি, এখানে আমরা সেইভাবে সাপোর্ট তো পাই-ই না, উল্টে পাবলিক প্লেসে শুট করা নিয়ে খুব চিন্তা থাকে। এগুলোর ক্ষেত্রে বারাণসীতে খুব সাহায্য পেয়েছি। 



তোমার নিজের সিরিজ় বা ছবি মানেই টেকনিক্যাল দিক দিয়ে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা থাকবেই। এবার নতুন কী ছিল?

প্রথমত তো মোবাইলে একটা গোটা সিরিজ়ের শুট। তাছাড়া আমি মোবাইল ফোনে ক্যামেরার লেন্স লাগিয়ে কাজ করেছি। ফলে কাজটা হয়েছে ক্যামেরার মতোই। ইদানিং ফোন কোম্পানিগুলো সেভাবেই মোবাইল ক্যামেরা বানাচ্ছে। যতদিন যাবে বড় ক্যামেরার প্রয়োজন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর থাকবে না। তবে আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল এটাই যে প্রতিদিন শুটের সময় ভিড়টা বদলে যেত। কাজেই একটা দৃশ্য দু’দিন টানা সম্ভব ছিল না, তাতে কন্টিনিউইটির সমস্যা হয়ে যেত। কাজেই যে করে হোক দিনের দিন কাজ শেষ করতে হতো।

আরও পড়ুন: প্রেমে-অপ্রেমে জুটি বাঁধছেন ঋতুপর্ণা ও ইন্দ্রনীল

এই সিরিজ়টা কি পাঁচ পর্বেই শেষ হচ্ছে? নাকি পরবর্তী সিজ়নও আসবে?

যেটা আসবে সেটা আগের গল্প অর্থাৎ প্রিক্যুয়েল। এখানে যেমন ওই ব্লগার আসছে ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’-এর শুটের জায়গাগুলো দেখাতে, পরেরটায় দেখা যাবে সে এর আগে ‘সোনার কেল্লা’র জায়গায় গিয়েও শুট করেছে। গল্পের শুরুটা সেখানেই হয়েছিল। এই সিরিজ়টা সকলের ভালো লাগলে প্রিক্যুয়েলও আসবে। 

মার্চে ক্লিক ডিজিট্যাল চ্যানেলে মুক্তি পাচ্ছে ‘বারাণসী জাংশন’।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *