জমাটি থ্রিলার, তবু আরও ভালো হতে পারত

ছবি: ফেলুবক্সী

পরিচালনা: দেবরাজ সিংহ

অভিনয়ে: সোহম চক্রবর্তী, মধুমিতা সরকার, পরীমণি, শতাফ ফিগর, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, অনিন্দিতা সরকার, কৌশিক ভট্টাচার্য, পূজা সরকার

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২৭ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★★☆☆☆☆☆

‘ফেলুবক্সী’ নামকরণে একটা গোয়েন্দা গন্ধ আছে নিঃসন্দেহে। আবার একটু অন্যরকমভাবে দেখলে,  ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসা ছেলেটা বা ফেল করে যে এবং পদবী যার বক্সী, সে কিন্তু অনায়াসেই হয়ে উঠতে পারে সহপাঠীদের আদরের ফেলুবক্সী! কিন্তু পরিচালক দেবরাজের ‘ফেলুবক্সী’ আদতে কেমন?

আরও পড়ুন: ফলোয়ার বাড়ানোর আসক্তি নিয়ে সিরিজ়

সেই সত্যজিৎ রায়ের যুগ থেকে বাংলা ছবির গোয়েন্দা মানেই বেশ রাশভারী ব্যাপার। চোখেমুখে অভিজ্ঞতার ছাপ, হাঁটাচলা-কথাবার্তা তীক্ষ্ণ। এমনকী তার সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ার মধ্যেও থাকে এক এক্স-ফ্যাক্টর। বাংলার বহু অভিনেতাই বড়পর্দায় গোয়েন্দা হয়েছেন। অবশ্যই নিজস্ব ভঙ্গিতে। সোনাদা বললে যেমন একজনের মুখ ভেসে ওঠে, ঠিক তেমনই ব্যোমকেশ বলতে বাঙালির বুকের ভেতর চিনচিন করে ওঠে। এদিক থেকে দেবরাজের ফেলুবক্সী অনেকটাই আলাদা।

সোহম চক্রবর্তী

ছবির শুরুতেই,মুখার্জিবাড়িতে আনন্দ আয়োজন। অনিমেষ মুখার্জির একমাত্র ছেলে গৌরব ও তার স্ত্রী লাবণ্য (পরীমণি) ফিরেছে বোস্টন থেকে। সঙ্গে জোড়া সুখবর। রিসার্চে সফল হয়েছে গৌরব এবং তার আবিষ্কারের সত্ত্ব সে বিক্রি করবে এ দেশেই। আর সেও এবার পাকাপাকিভাবে থাকবে বাবার কাছে। তাতেই আনন্দে আত্মহারা অনিমেষ। বিবাহবার্ষিকীর আনন্দ আয়োজন তাই দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। লাবণ্যের রবীন্দ্রগানে মুখর হয়ে ওঠে সন্ধে। পরিচারিকা কমলা ব্যস্ত হয়ে ওঠে শরবত পরিবেশনে। গৌরব-লাবণ্য কেক কাটবে এমন সময় বুকে ব্যথায় কাতর হয়ে ওঠে গৌরব। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। বাড়িতে পুলিশ আসে। পোস্টমর্টেমে কিছুই প্রমাণিত হয় না।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে ওঠেন অনিমেষ। ছোটবেলার ডাক্তার বন্ধুকে নিয়ে অনিমেষ ফেলুবক্সীর বাড়ি যান। গোটা ঘটনা তাকে খুলে বলেন। জানান, গৌরব বাড়ি আসায় খুশি হননি তার ভাই ও ভাইয়ের বউ।

আরও পড়ুন: হিন্দি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অর্জুন চক্রবর্তী

মুখার্জিদের পারিবারিক ব্যবসা যা মূলত অনিমেষের নামেই। তবে সেই ব্যবসার বেশিরভাগটাই দেখাশোনা করে অনিমেষের ভাই। ভাইপো প্রাঞ্জল চাকরির চেষ্টা করছে। ভাইয়ের বউয়ের ইচ্ছে ব্যবসাটা যদি কোনওভাবে হাতানো যায়। সেই থেকেই কি খুন? আশঙ্কার কথা খোলাখুলি ফেলুবক্সীকে বলেন অনিমেষ। তবে এর মধ্যে তেমন কোনও রহস্যের গন্ধ পায় না ফেলুবক্সী। আবার একসমেয়র মাস্টারমশাইের মুখ চেয়ে অনিমেষকে সরাসরি নাও বলতে পারে না। 

সোহম চক্রবর্তী

গোয়েন্দাগিরিতে ফেলুবক্সীর সহকারী দেবযানী (মধুমিতা)। সে পেশায় রেডিয়ো জকি। ফেলুবক্সী খেতে ভালোবাসে চপ-কাটলেট থেকে মিষ্টি দই, সবকিছু। দুজনে একদিন বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় একটি দুর্ঘটনা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফেলুবক্সী কাছে গিয়ে দেখে সেই মাস্টারমশাই মরে পড়ে রয়েছেন গাড়িতে। এই ঘটনা ফেলুবক্সীর মনে সন্দেহের জন্ম দেয়। দেরি না করে দেবযানীকে নিয়ে সে রওনা হয় অনিমেষের বাড়ি। গিয়ে দেখে সেখানে হাজির গৌরবের দীর্ঘদিনের বন্ধু মেঘনাদ (শতাফ)। তদন্ত শুরু করে ফেলুবক্সী। বাড়ির সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তালিকা দীর্ঘ। তবু একের পর এক মৃত্যুতে সেই তালিকা ক্রমে ছোট হতে থাকে।

এই সব তথ্য বিষয়টিকে আরও জটিল তোলে। গৌরবের মৃত্যু কি স্বাভাবিক না তাকে খুন করা হয়েছিল? যদি খুন হয়, তাহলে খুনী কে? ফেলুবক্সীর পুলিশ বন্ধুও নামে ময়দানে।

সোহম চক্রবর্তী

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছবিতে রহস্যের জাল বিছিয়েছেন পরিচালক। তবে কোথাও-কোথাও সেই জাল গোটাতে অনেকটা সময় নিয়েছেন তিনি। শুটিং হয়েছে কলকাতাতেই। চেনা প্রেক্ষাপট, দর্শকের এই ছবির চিত্রনাট্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, এরকম একটা থ্রিলারে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার বেশ অন্যরকম মাত্রা দিয়েছে। এই ছবির সঙ্গীত আয়োজন করেছেন অদিতি বসু ও অম্লান চক্রবর্তী। চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনায় মুন্সিায়ানা দেখিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

ফেলুবক্সী-দেবযানীর প্রেম কোথাও-কোথাও বেশ জোলো মনে হয়েছে। বিশেষ করে কিছু গানের মাঝে অ্যাকশন দৃশ্য বেশ অপ্রাসঙ্গিক। চিত্রনাট্য থেকে কিছুক্ষণের জন্যও দর্শকের মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

আরও পড়ুন: ‘আশিকি ৩’ ছাড়লেন তৃপ্তি দিমরি

ফেলুবক্সীর চরিত্রে সোহমকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। এখানে তিনি কিছুটা ছকভাঙা। ভারী চেহারা নিয়েও বেশ সাবলীল। এ ছবিতে হিরোসুলভ পেশিবহুল চেহারা নয় তাঁর। ছক ভেঙেছেন বাংলাদেশী অভিনেত্রী পরীমণিও। গৃহবধূ মানেই যে অবলা, অত্যাচারিত, সেই মায়াজাল অনেকটাই সরিয়ে দিয়েছে পর্দার লাবণ্য।

সবমিলিয়ে, এই ছবিতে বিনোদনের অনেক উপকরণই মজুত আছে। তবু ছবিটি আরও ভালো হতে পারত। ‘ফেলুবক্সী’র সিক্যুয়েল আসতে পারে। অন্তত ছবির শেষে সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিচালক।

Anurag Kashyap

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Angana

A traveler and a lover with a musical heart. An avid reader and writer. Reads anything that falls on her hands. Has an analytical mind and is highly opinionated

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *