দক্ষ অভিনেতা নিয়েও প্রাপ্তি শুধুই হতাশা

ছবি: পরিচয় গুপ্ত

পরিচালনা: রন রাজ

অভিনয়ে: ঋত্বিক চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, জয় সেনগুপ্ত, দর্শনা বণিক, অয়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ ভট্টাচার্য, রৌনক ভট্টাচার্য

দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★☆☆☆☆☆☆

প্রাচীন জমিদারবাড়ি। নানা সম্পর্কের জটিল সমীকরণ। পুরোনো নায়েব, পুরোনো চাকর। অতীতের রহস্য। একাধিক অস্বাভাবিক মৃত্যু। জমজমাট পটবয়লার হওয়ার রসদ মজুত ছিল। মুক্তির দিন দু’বার পিছিয়ে অবশেষে তৃতীয়বারের চেষ্টায় প্রেক্ষাগৃহে এল ‘পরিচয় গুপ্ত’ (Porichoy Gupta)। ছবির নাম এবং ট্রেলারে দেখানো চুম্বকের ফলে আশা জেগেছিল পিরিয়ড ড্রামা এবং রহস্য কাহিনি হিসেবে জমজমাট এক ছবি উপহার দিতে চলেছেন পরিচালক। অভিনেতার তালিকা দেখেও আগ্রহ জাগা স্বাভাবিক ছিল। কতটা আশা পূরণ করতে পারল ছবিটি? 



কাহিনি সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া যাক। শরদিন্দু সেন (ঋত্বিক) এক দৃষ্টিহীন জমিদার। তার স্ত্রী স্নেহলতা আধুনিকা ও স্বেচ্ছাচারী। স্বামীর সঙ্গে তেমন বনিবনা নেই। হঠাৎই খুন হয়ে যায় শরদিন্দুর এক কাছের বন্ধু এবং পুলিশ কর্তা, যিনি স্নেহলতারও বিশেষ বন্ধু ছিলেন। শহরের অভিজাত এক ক্লাবে শরদিন্দুর সঙ্গে আলাপ হয় উপাসক (ইন্দ্রনীল) নামে এক আর্কিওলজিস্টের। নতুন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শরদিন্দু পাড়ি দেন গ্রামের বাড়ি নিশ্চিন্দিপুরে। প্রাচীন সেই জমিদার বাড়িতে শরদিন্দুর অপেক্ষায় থাকে তার বৌঠান মণিকুন্তলা (অয়ন্তিকা) আর নারী বেশে পুরুষ সুবলা (জয়)। এই বাড়ির অন্দরমহলে রয়েছে অনেক রহস্য, রয়েছে প্রেমও। 

ছবির প্রেক্ষাপট ১৯৫০ সালের। ছবিতে রয়েছে গল্পের ভেতর গল্প। সেই গল্প যিনি বলছেন তিনি শুরুতেই বলে দিচ্ছেন এই কাহিনির সময়কাল ১৯৫০। অথচ চরিত্রদের পোশাকআশাক, কথাবার্তা কিংবা আচরণ কোনও কিছুতেই সে সময়ের ছাপ নেই। চিত্রনাট্যে না আছে কোনও বাঁধুনি, না আছে যুক্তি। প্রথমার্ধের শুরুতে তবু কিছুটা আশা থাকে, রিসার্চ কম হলেও নিশ্চয়ই হত্যারহস্য পরে গিয়ে জমে যাবে। কোথায় কী! যথা পূর্বম তথা পরম তত্ত্বকে মেনে পুরো ছবি জুড়ে শুধু হতাশাই উপহার দিলেন পরিচালক। 

আরও পড়ুন: সৌরভের বায়োপিকে তৃতীয়বার অভিনেতা বদল

ছবির নির্মাণ এবং কাহিনি, দুটোই সমান বিরক্তি উদ্রেক করে। স্নেহলতা অর্থলোভী ছিলেন, তাই প্রাক্তন প্রেমিককে ছেড়ে জমিদারকে বিয়ে করেন। কিন্তু দুজনের বনিবনা হলো না কেন তার কোনও স্পষ্ট কারণ বোঝা যায় না। শরদিন্দু তো প্রথম থেকেই অন্ধ ছিলেন না। প্রথম আলাপেই অচেনা উপাসককে বাড়িতে ডেকে সান্ধ্য আড্ডায় তার আদি বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন শরদিন্দু। যদি ধরেও নেওয়া যায় তিনি আগে থেকেই তার অপেক্ষায় ছিলেন তাহলেও উপাসকের সন্দেহ হলো না কেন? মণিকুন্তলার সঙ্গে উপাসকের সম্পর্ক কীভাবে হলো? হঠাৎ করেই একটি গানে দুজনকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা গেল। সেই সম্পর্ক কবে কীভাবে কখন হলো কিছুই স্পষ্ট হয় না। পিয়ানো বাজিয়ে মহেন্দ্র যে গানটি গাইল সেটির মধ্যে কিঞ্চিৎ নব্বইয়ের ছোঁয়া থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু পঞ্চাশের দশকের গান বলে মেনে নেওয়া যায় না।

এরকম হাজারো ভুল ছবির প্রতিটি দৃশ্যে। বিরতির আগেই বোঝা হয়ে যায় কী হতে চলেছে এবং অপরাধী কে। যদিও অপরাধীর সমস্ত অপরাধের মোটিভ আদৌ জোরালো নয়। জমিদারের স্ত্রীকে মারার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছিল না। স্নেহলতাকে মারতে খুনি কখন কলকাতায় এল আবার কীভাবে অত তাড়াতাড়ি ফিরে গেল তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। সবশেষে মূল অপরাধী কেনই বা গড়গড় করে গোয়েন্দাকে তার সমস্ত অপরাধের বিশদ বিবরণ দিল, তাও বোধগম্য হলো না।

আরও পড়ুন: তাঁকে ছাড়া কাস্টিং অসম্পূর্ণ, বললেন তব্বু

ছবিতে গোয়েন্দার বিশেষ কোনও দক্ষতা দেখা গেল না, বরং অপরাধীই তাকে নিমন্ত্রণ করে ধরা দিল বলা যায়। পুলিশকর্তা খুনের আগে আরও কয়েকটি খুন ওই একইভাবে হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়, যার কোনও কিনারা হয়নি। সেই খুনগুলি কার এবং কেন হলো তার উত্তর পাওয়া গেল না। কথায় বলে প্লটহোলস, কিন্তু এই গল্পে তাকে ছিদ্র না বলে বড়-বড় গর্ত বলাই ঠিক হবে মনে হয়। সবথেকে আশ্চর্যেয় বিষয়, অভিজ্ঞ অভিনেতারা এরকম একটি অতিদুর্বল চিত্রনাট্যে কাজ করতে রাজি হলেন কী করে! 

অভিনয়ের দিক থেকে ছবিকে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে গেছেন মূল অভিনেতারা সকলেই। ঋত্বিক ও ইন্দ্রনীল যথাযথ। রূপান্তরকামী চরিত্রে জয়ের প্রশংসা প্রাপ্য। পুরোনো চাকরের ভূমিকায় প্রদীপবাবু মানানসই। কিন্তু চিত্রনাট্য খারাপ হলে ভালো অভিনয় দিয়েও সেই ছবিকে উদ্ধার করা যায় না। যে পরিমাণ বাজেট, লোকেশন, প্রপস, অভিনেতা ইত্যাদি কারণে এই ছবিতে অপচয় করা হয়েছে, তা কোনও যোগ্য পরিচালক পেলে দর্শক নিঃসন্দেহে একটা ভালো ছবি উপহার পেত। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *