খোলে না রহস্যের জট

সিরিজ়: দুজনে

পরিচালনা: প্রমিতা ভট্টাচার্য

অভিনয়ে: সোহম চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার, রাজদীপ গুপ্ত, কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজী, অনিন্দিতা কপিলেশ্বরী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

দৈর্ঘ্য: ৪ ঘটা ১৩ মিনিট (১০ পর্বে)

RBN রেটিং: ৩/৫

পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে অহনা (শ্রাবন্তী) এবং অমরের (সোহম)পার্থিব সুখে এতটুকু ভাঁটা ছিল না। মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে পিছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে বসুঠাকুর পরিবার। তবু প্রত্যেক মধ্যবিত্ত পরিবারেরই অতিসাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার পেছনে একটা চোরাকুঠুরি থাকে। এই চোরাকুঠুরির চাবি থাকে গৃহকর্তার কাছে। সাত বছর আগে অমরের বাবা রজত বসুঠাকুর (দেবশঙ্কর) পারিবারিক ব্যবসা থেকে অবসর নিলেও, তার দেখানো পথ ধরেই অমর বসুঠাকুর জুট মিল এবং বসুঠাকুর ভিলার দায়িত্ব সামলে আসছে।




এদিকে, গোপনসূত্রে দেশে জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে দিল্লি থেকে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর পদস্থ কর্তারা কলকাতায় এসে খানাতল্লাশি শুরু করে। তারা জানতে পারে এই জঙ্গী সংগঠনগুলো এ রাজ্যের কোনও এক প্রভাবশালীর মদতপুষ্ট। তদন্তে উঠে আসে এক পাটকল মালিকের নাম।

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎই এক পথদুর্ঘটনায় অমরের মাথায় আঘাত লাগে। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর সকলকে চিনতে পারলেও, কিছু-কিছু বিষয় অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে অমর। নিজের পছন্দের সব জিনিসগুলো হঠাৎ করেই তার অপছন্দের তালিকায় চলে যায়। এতদিনের পরিচিত অমরকে চিনতে অসুবিধে হয় অহনার। ডাক্তারবাবু নিশ্চিত যে আঘাত গুরুতর না হলেও সেদিনের দুর্ঘটনার ট্রমা এই বিপত্তির কারণ।

আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার

স্বাধীনচেতা, স্বাবলম্বী অহনার মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। বন্ধু প্রসিতের (রাজদীপ) পরামর্শে দুদিনের জন্য শহর ছাড়তেও রাজি হয় না অহনা। উল্টে অমরের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে সে গোয়েন্দা অশোক দত্তর (কৃষ্ণেন্দু) শরণাপন্ন হয়। আপাতদৃষ্টিতে শারীরিকভাবে সক্ষম মনে না হলেও কাজে সে তুখোড়। অমর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে অহনাকে তার চেম্বারে আসতে বলে অশোক। হঠাৎ করেই পরেরদিন থেকে অশোক নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে অহনা নিজেই তদন্তে নেমে পড়ে। বসুঠাকুর জুট মিলের গোপন কুঠুরি খুলে, সে এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ায়।

দশ পর্বের এই সিরিজ় মূলত থ্রিলার গোত্রের ছবি। ‘অমানুষ’ কিংবা ‘অমানুষ ২’-এর পর থেকেই ধূসর চরিত্রে দর্শকের মনে সোহম পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছেন। তথাকথিত প্রেমিকসুলভ চরিত্রের চেয়ে এ ধরণের চরিত্রেই তাকে ভালো মানায়। অহনারূপী শ্রাবন্তীকে ভালো লাগে তবে তাঁর অভিনয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে না। বরং পুলিশের সাহায্য ছাড়াই পরিচালক অহনাকে দিয়ে যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন তা একটু অবিশ্বাস্য। ঠাণ্ডা মাথায় কাজ হাসিল করতে সিদ্ধহস্ত এক মানুষের চরিত্রে দেবশংকরের অভিনয় অনবদ্য। তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অমরের মায়ের চরিত্রে অনিন্দিতা যথাযথ। ‘কাকাবাবু’ মার্কা বেসরকারী গোয়েন্দার চরিত্রে কৃষ্ণেন্দু বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখেন। ইন্দ্রজিৎ তাঁর সুঠাম চেহারায় ও কন্ঠে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর অফিসার হয়ে উঠতে পারলেও, পুলিশের বড়কর্তার চরিত্রে কমলেশ্বরকে বিশেষ মনে ধরেনি। এছাড়া রাজদীপ, অদ্রিজা রায় ও ঈশানি সেনগুপ্তর অভিনয় ভালো।

আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি

সিনেমার ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে আর্থিক লেনদেন, অর্থপাচার, জাতীয়তা বিরোধী কর্মকান্ড, সন্ত্রাসবাদের গল্প নতুন নয়। তবে, মিতালী ওঝা ও রোমিত ওঝার গল্পের বুনন এবং সেই অনুযায়ী চরিত্রের নির্মাণ দর্শককে গোটা সিরিজ়টাই দেখতে বাধ্য করবে। ‘অমানুষ’ ছবির ‘ও মাই লাভ’ গানের ব্যবহার এবং বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রায়ন নিঃসন্দেহে পুরনো সোহম-শ্রাবন্তীর কথা মনে করিয়ে দেয়। অন্ধকার ঘরে দর্শকের মনে সাসপেন্স তৈরিতে অমিত-ঈশানের আবহ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে, চরিত্র অনুযায়ী আবহে বদল আনলে ভালো হতো।

অহনাকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে প্রথম সিজ়নের দশটি পর্ব শেষ হলেও খোলে না রহস্যের জট। আশা করা যায় এই সিরিজ়ের পরবর্তী সিজ়নে মূল রহস্যের সমাধান হবে।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Ankeeta

Sleep, travel, eat, repeat! Anchor, presenter, news reader, editor by profession. Long drives and exploring life are my favorite options. Stuck between food and fitness. Intoxicated by music. Painting, singing, photography and Rabindranath are my soulmates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *