সৌমিত্রবাবুর মধ্যে কোনওরকম মানসিক বার্ধক্যের চিহ্ন দেখিনি: শুভেন্দু
RBN Web Desk: কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘অভিযান’। মুক্তির পরেই ছবির কিছু অংশ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অভিনেতার কন্যা পৌলমী বসু। ছবিতে অসংখ্য তথ্য বিকৃতি রয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন পৌলমীর আত্মীয়া শ্রমণা ঘোষ। পৌলমী সেই অভিযোগকে সমর্থনও করেছেন। ২০১৭ সালে তাঁর পুত্র রণদীপ বসু এক বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। সেই ঘটনা সংক্রান্ত ও তাঁদের জীবন নিয়ে উঠে আসা নানা কথার মাধ্যমে ছবিতে বিকৃত সত্য পরিবেশিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পৌলমী। এমনকি সৌমিত্রের বার্ধক্যের সুযোগ নিয়ে তাঁকে দিয়ে ছবিতে ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের একাংশ।
এই প্রসঙ্গে ছবির মূল গবেষক ও সংলাপ লেখক শুভেন্দু সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রেডিওবাংলানেট-কে জানান, “আমি এতদিন সৌমিত্রবাবুকে কাছ থেকে দেখেছি, ওঁর নানা কথা রেকর্ড করেছি। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ওঁর মধ্যে কোনওরকম মানসিক বার্ধক্যের চিহ্ন আমি কোনওদিন দেখিনি। আমাদের অনেকের থেকে অনেক বেশি শার্প একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। তাই ওঁর জীবনের গল্পে যে কোনও দৃশ্যে ওঁকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে নেওয়া যাবে, এই কথাটা মেনে নেওয়া যায় না। উনি যা করেছেন সম্পূর্ণ সচেতনভাবেই করেছেন।”
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
পেশায় চিকিৎসক শুভেন্দু ‘শ্রাবণের ধারা’ ছবির কাহিনীকার ছিলেন। সেই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র। ‘অভিযান’-এ শুভেন্দুর চরিত্রে রূপদান করেছেন পরমব্রত।
নিউ জার্সি থেকে টেলিফোনে শুভেন্দু জানালেন, “কয়েক বছরে সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে আমার এক অন্যরকম সখ্য গড়ে উঠেছিল। ওঁর গদ্য সংগ্রহ বইগুলির অনুবাদ সূত্রে নানা বিষয়ে কথা হতো। রণদীপের বিষয়েও বহুবার কথাবার্তা হয়েছে। তখন ‘শ্রাবণের ধারা’র কাজ চলছে। একদিন উনি নিজেই ওঁর আলিপুরের বাড়িতে আমাকে ডেকে পাঠালেন রণদীপকে দেখার জন্য। ডঃ দীপেন্দ্র কুমার প্রধান রণদীপের চিকিৎসা করছিলেন। উনি খুবই ভালো ডাক্তার । আমি ওকে দেখে একটা ওষুধ শুরু করতে বলেছিলাম। ডঃ প্রধানও আমার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। তবে যেহেতু কলকাতা আমার কর্মক্ষেত্র নয় তাই ডঃ প্রধানই সেই ওষুধ লিখে দেন। এই কথাগুলো বলার একটাই কারণ, নানা সূত্রে আমি ওঁর পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম।”
আরও পড়ুুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
তবে পাশাপাশি পৌলমীর বক্তব্যকেও অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখছেন শুভেন্দু। “আমি পৌলমীর অবস্থাটা বুঝতে পারছি,” বললেন শুভেন্দু। “এরকম একটা দুর্ঘটনার ফলে ছেলে দীর্ঘদিন অসুস্থ, আজ সেই নিয়ে একটা ছবি হয়েছে, যেটা বহু মানুষের কাছেই বিনোদনের উপকরণ, যে কোনও মায়ের পক্ষে এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া অত্যন্ত অস্বস্তিকর। মা হিসেবে পৌলমী যে কী অসামান্য তা ভাবা যায় না। দরকারে রাত তিনটের সময় উঠেও ছেলের জন্য যা করণীয় করেছে। সবসময় ছেলের পাশে থেকেছে। ওকে একটু খুশি দেখার জন্য আকুল হয়ে থেকেছে সারাক্ষণ। আমি সামনে থেকে এগুলো দেখেছি। একদিকে হাসছে আবার একইসঙ্গে কাঁদছেও। এক মায়ের তার ছেলেকে সুস্থ করে তোলার জন্য এই যে লড়াই, এটা তো আর কেউ বুঝবে না। আজ সেই ঘটনা মানুষ ছবিতে দেখছে।”
পরিচালক যে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কীভাবে ছবিটাকে আরও ভালো করা যায় সেটা দেখবেন, মেনে নিচ্ছেন শুভেন্দু। তবে পৌলমীর অভিমান হওয়াও খুব স্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি। “ডাক্তার হিসেবে আমি পৌলমীর মাতৃত্বকে একেবারে সামনে থেকে দেখেছি। এই অবস্থায় আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছে ব্যাপারটা নিয়ে,” বললেন শুভেন্দু। তবে এই ঘটনা নিয়ে কাউকে দোষারোপ না করে সহানুভূতির সঙ্গে পরিস্থিতিকে দেখা উচিত বলেই মনে করেন তিনি।
পৌলমী জানিয়েছেন ছবি শুরুর আগে তিনি চিত্রনাট্য পড়েননি। পরমের অফিসে চিত্রনাট্য পড়ার সময় সৌমিত্র ছাড়াও শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, সোহিনী সেনগুপ্ত ও সুরকার প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
“পৌলমী সেদিন ওখানে ছিল না। ওখান থেকে আমি আর সৌমিত্রবাবু একটা রেস্তোরাঁয় যাই। চিত্রনাট্য নিয়ে কোনও আপত্তি থাকলে উনি তখনও আমাকে বলতে পারতেন। বরং মজা করে বলেছিলেন, সঞ্জয়ের চরিত্রটা তো একদম আপনি! ছবিতে নাটকের অংশটুকুই পৌলমী জানত। আর সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে টাকার কোনওরকম লেনদেন আমার হয়নি। তবে ছবিতে সেই দৃশ্যে উনি সজ্ঞানেই অভিনয় করেছেন। সৌমিত্রবাবুর পরিবারকে মানসিকভাবে আঘাত দেবার কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। তবু মনে হচ্ছে পৌলমীর জায়গায় থাকলে এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এ কথা আমাদের সকলের সঙ্গে পৌলমীও জানে সৌমিত্রবাবু তাঁর কাজের ব্যাপারে কতটা সচেতন ছিলেন। না বুঝে যে কোনও দৃশ্যে, বিশেষ করে তাঁর নিজের জীবনের গল্পে অভিনয় করার মানুষ তিনি ছিলেন না,” দাবি শুভেন্দুর।