”ছবি তৈরির ক্ষেত্রে কোথাও বোধহয় হিপোক্রিসি করছিলাম”
ছবির নাম ‘ভাগ্যলক্ষ্মী‘! ছবির ট্রেলার দেখে হাড়হিম হয়ে যাওয়ার জোগাড়। মধ্যবিত্ত বাঙালি স্বপ্নপূরণের জন্য এতদূর যেতে পারে? পরিবারকেন্দ্রিক ছবির ছক ভেঙে এ কোন অবতারে হাজির হলেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক (Mainak Bhaumik)? খোঁজ নিল রেডিওবাংলানেট
প্রশ্ন: ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’র ট্রেলারে চমক! রিভিউ বলছে মৈনাক ইজ় ব্যাক! ঠিক দু’দিন পর মুক্তি পাবে ছবি। কী মনে হচ্ছে?
মৈনাক: আমি তো কোথাও যাইনি, যে ব্যাক করব।
প্রশ্ন: এই যে এত ভিউজ়, লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, এগুলো কি সব মিথ্যে?
মৈনাক: এটার একটা কারণ হতে পারে যে আমি মাঝে পারিবারিক ছবি বা মহিলাকেন্দ্রিক ছবি বানাচ্ছিলাম। দর্শক ওই ছবিগুলোই দেখছিল। ‘চিনি’ বা ‘একান্নবর্তী’র মতো ছবি ঠিক পুরষ দর্শকের দেখার কথা নয়। ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ করতে গিয়ে মনে হলো এটা সকলেই উপভোগ করবেন।
প্রশ্ন: পরিবারকেন্দ্রিক ছবি ছেড়ে এই ছকভাঙার প্রয়োজন বোধ করলেন কেন?
মৈনাক: আসলে আমি সবসময়ই সম্পর্কের গল্প বলতে ভালোবাসতাম। এখনও ভালোবাসি। কোথাও মনে হচ্ছিল যে গত পাঁচবছর ধরে প্রেক্ষাগৃহে বা ওটিটিতে আমি যে ধরনের কাজ দেখছি বাছাই করে, সেগুলো বেশিরভাগই ক্রাইম অথবা হরর সংক্রান্ত। তবু ছবি তৈরি করার সময় আমি পারিবারিক বিষয়ই বেছে নিচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন কোথাও একটা হিপোক্রিসি করছি। দেখছি এক, বানাচ্ছি আরেক। সেটা কোথাও হওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুন: অভিনব উদ্যোগ, রাজ কপূর স্মরণে সার্কাসের তাঁবুতে ‘সিনেমার সমাবর্তন’
প্রশ্ন: পর্দার সত্য-কাবেরীর মতো চরিত্রদের আজকাল আমাদের চারপাশে হামেশাই দেখা যায়। এর কারণ কি সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাব বলে আপনার মনে হয়?
মৈনাক: কোথাও একটা নেগেটিভিটি চলে এসেছে পৃথিবীতে। সোশ্যাল মিডিয়ার একটা পজ়িটিভ দিকও আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী হঠাৎ করে কোনও জিনিস জেনে নিতে পারছি। সে প্রযুক্তি হোক বা অন্য কিছু। তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু কোথাও না কোথাও সবসময় মানুষকে জেলাস ফিল করাচ্ছে। মানে মানুষ সর্বক্ষণ দেখতে পারছে যে কে তার থেকে ভালো আছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি আপলোড করার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে একটা শো-অফ ভীষণরকম কাজ করছে। সেখান থেকেই হিংসাত্মক এমনকী খুন করার প্রবণতাও বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। এবং সেটি কোথাও ছবির বিষয় হয়ে উঠছে। ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’র ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
প্রশ্ন: ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে আপনার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। এই প্রথম আপনার ছবিতে কাজ করল শোলাঙ্কি রায়। শোলাঙ্কিকে কাস্ট করার কোনও বিশেষ কারণ ছিল কি?
মৈনাক: শোলাঙ্কির অভিনয় আমার অনেকদিন ধরেই ভালোলাগে। এই ধরনের চরিত্রে ওকে দেখার ইচ্ছে ছিল। ওর মধ্যে এই শান্ত, সৌম্য ব্যাপারটাই কাবেরী চরিত্রের জন্য দরকার ছিল। ও আমাকে ফোন করে বলেছিল, কাজ করতে চায়। সেই মুহূর্তে আমার কাছে কিছু ছিল না। পরে আমিই ওকে ফোন করি।
আরও পড়ুন: মুম্বইও কি “ঘটিয়া”? প্রথম ছবি মুক্তির আগেই পাততাড়ি গোটালেন অনুরাগ কশ্যপ
প্রশ্ন: সুজিত দত্তের ‘খাদান’, রাজ চক্রবর্তীর ‘সন্তান’, ওদিকে ‘পুষ্পা ২’, এর মধ্যে একটাও ছবি দেখেছেন?
মৈনাক: না, আমার দেখা হয়নি। শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
প্রশ্ন: সবক’টা ছবিই কিন্তু রমরমিয়ে চলছে। পরিচালক হিসাবে আপনার কী মনে হচ্ছে?
মৈনাক: অনেক ছবিই রমরমিয়ে চলে। মানুষ সিনেমা দেখছে, সে তো ভালো কথা। আমার মনে হয়, মিডিয়া মাঝেমধ্যে রোল প্লে করে। মানুষ যাতে বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামায়, সেই জন্য। আমি মিডিয়াকে ছোট করছি না। তবে খেয়াল করে দেখবেন মাঝেমধ্যেই হুজুগ ওঠে যে সিনেমা চলছে না। অথচ সেটা হয়তো চলছে। মানে, বিষয়টা এমন নয় যে এত বছর ছবি চলছিল না, এবছর থেকেই মানুষ ছবি দেখছেন।
আরও পড়ুন: বাস্তুচ্যুত প্রান্তজন, নর্মদা ‘পরিক্রমা’য় দেখালেন গৌতম
প্রশ্ন: মানসী সিংহের পরপর দুটো ছবি টানা হাউজ়ফুল করেছে। ওয়েব সিরিজ় ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ও প্রশংসিত। অন্যরকম ছবি দর্শক পছন্দ করছেন। ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ নিয়ে আপনি কি ভাবছেন?
মৈনাক: ১৯৯০ সালে বাঙালি অঞ্জন দত্তের গিটার বাজানো গানও শুনেছে। আমার ‘বেডরুম’ দেখেছে। সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) ‘হেমলক সোসাইটি’ দেখছে। বাঙালি আপগ্রেডেড। এটা মাঝেমধ্যে মনে হয়, ওরা নয়। তবে বাঙালি চিরকালই নতুন জিনিস পছন্দ করেন।
প্রশ্ন: এ মাসে পরপর অনেকগুলো ছবি মুক্তি পাবে। বক্সঅফিসে লড়াই জারি থাকবে বলে মনে হচ্ছে?
মৈনাক: সবকিছুতে লড়াই খুঁজলে তো মুশকিল। তবে মনে রাখতে হবে সব ছবির দর্শক এক নয়। যাদের যেটা পছন্দ তারা সেটা ঠিকই দেখবে বলে আমার ধারণা।
ছবি: RBN আর্কাইভ