বিশ্বের সবথেকে বড় দুর্গাপুজোর প্রেক্ষাপটে আসছে পাভেলের ‘অসুর’
কলকাতা: আজ থেকে চার বছর আগের কথা। দেশপ্রিয় পার্কে তৈরী হয় বিশ্বের সবথেকে বড় দুর্গা প্রতিমা। অন্তত সংগঠকদের দাবি ছিল সেরকমই। বিজ্ঞাপনে ঢেকে যায় গোটা শহর। প্রায় ৯০ ফুট উঁচু সেই প্রতিমা দেখতে চতুর্থী থেকেই মানুষের ঢল নামে মণ্ডপ চত্বরে। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় কয়েক হাজার দর্শনার্থীর লাগামহীন ভিড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা দক্ষিণ কলকাতার যান চলাচল। ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর গুজবও ওঠে। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে প্রশাসন থেকে শেষমেশ বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশপ্রিয় পার্কের পুজো।
২০১৫ সালের সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটেই আসছে পরিচালক পাভেলের পরবর্তী ছবি ‘অসুর’। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন জিৎ, নুসরত জাহান ও আবীর চট্টোপাধ্যায়।
“‘অসুর’ আসলে তিন বন্ধুর গল্প,” সম্প্রতি শহরে তাঁর ছবি সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমকে জানালেন পাভেল। “এই তিনজনের মধ্যে বন্ধুত্ব, ভালোবাসার টানাপোড়েন ও সম্পর্কের দ্বন্দ্ব নিয়েই তৈরী হয়েছে ছবিটা। এর সঙ্গে বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোও থাকছে।”
পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে ভূমিপুত্র হিসেবে পূজিত হন অসুর। সেই সম্প্রদায়ের অনেকে অসুর পদবীও ব্যবহার করেন। কর্নাটকের মহীশূরেও মহিষাসুরের পুজো করা হয়ে থাকে। অসুর সম্পর্কে মানুষের মনে প্রচলিত ধারণাটাই কি তাহলে ভাঙতে চলেছেন পাভেল?
আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে
“দেখো, অসুর মানে অসীম শক্তিধর কোনও মানুষ। আদিবাসীদের কাছে অসুর হলো ভারতে আর্যদের অগ্রগমনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক। এমনকি অসুরের চিরাচরিত যে ছবি আমরা দেখে এসেছি, সেখানেও কিন্তু আদিবাসী ছাপ স্পষ্ট। অসুর কোনওভাবেই নেগেটিভ চরিত্র নয়। আমরাই তাকে নেগেটিভ বানিয়েছি। তার বীরত্ব নিয়ে একাধিক লোকগাথা আছে। তার কিছুটা রেশ থাকছে এই ছবিতে। তবে ‘অসুর’ মূলত বন্ধুত্বের গল্প,” জানালেন পাভেল।
ছবিতে শিল্পী কিগান মান্ডির চরিত্রে রয়েছেন জিৎ। নুসরত ও আবীরের অভিনীত চরিত্রের নাম যথাক্রমে অদিতি ও বোধী।
আরও পড়ুন: তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে
“আমি নিজে ছবি আঁকতে ভালোবাসি। তাই অদিতি চরিত্রটির সঙ্গে আমার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি,” বললেন নুসরত। “শিল্পী বলেই অদিতি খুব ইমোশনাল। এই ছবিতে কিগান, অদিতি ও বোধী ছোটবেলার বন্ধু এবং তিনজনেই আর্ট স্কুলের ছাত্র। ট্রেলার মুক্তির পর আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন ‘অসুর’ কোনও ত্রিকোণ প্রেমের গল্প কি না। তিনটি নারী-পুরষ চরিত্র নিয়ে ছবি হলেই সেখানে ত্রিকোণ প্রেম থাকবে, এমন কোনও মানে নেই। গভীর বন্ধুত্বের মধ্যেও ভালোবাসা থাকে। ‘অসুর’-এ সেরকমই একটা গল্প বলতে চেয়েছি আমরা।”
পাভেলের ছবিতে একেবারেই অন্যরকম লুকে দেখা যাবে জিৎকে। “আমার এই লুকটা দেখে সবাই চমকে গেছে। এটার জন্য পাভেলই দায়ী। অনেকেরই মনে হয়েছে এটা আমাকে ঠিক মানাচ্ছে না। কিন্তু ‘অসুর’-এ আমি একজন আদিবাসী শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছি এবং তার জন্য এই লুকটাই প্রয়োজন ছিল। আশা করছি ছবিটা দেখার পর দর্শক সেটা বুঝতে পারবেন,” বললেন জিৎ।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’-এর পর আবারও এক ফ্রেমে দেখা যাবে জিৎ ও আবীরকে। “একটা পুজো দাঁড় করানোর পেছনে যাঁরা দিনরাত করে কাজ করেন, তাঁদের প্রায় কাউকেই আমরা চিনি না। সেরকমই তিনজন মানুষকে নিয়ে তৈরী হয়েছে ‘অসুর’। একটা দূর্ঘটনা কী ভাবে এই তিনজনের জীবন ও সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে, সেটাই বলতে চেয়েছে এই ছবি,” বললেন আবীর।
বহু বছর পর আবার বড় পর্দায় দেখা যাবে প্রবীণ অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে। ‘অসুর’-এ অদিতির বাবার চরিত্রে থাকছেন তিনি। এই দীর্ঘ বিরতির কারণ কি? “কেউ ডাকে না তো। জিৎ, পাভেল ডেকেছে তাই করছি। ওরা ছবিটা নিয়ে ভেবেছে, গল্পটাও একেবারে অন্যরকম। ছবির প্রতি প্রযোজক-পরিচালকের যদি আন্তরিকতা না থাকে তাহলে কী কাজ করা যায়,” প্রশ্ন বিপ্লবের।
‘অসুর’-এর সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিক্রম ঘোষ। ছবিটি সম্পাদনা করেছেন মলয় লাহা।
৩ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ‘অসুর’।