‘সিনেমার গল্প লেখকদের নাম কেউ জানতে চান না’
আবু ধাবির চাকরি ছেড়ে লেখালেখির জন্য কলকাতার মাটিতে ফেরা। কিছুটা ঘরে ফেরার টানেও। এখন অর্ণব ভৌমিক বললেই চিনে যাবেন অনেকেই। সম্প্রতি রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘পরিণীতা’ ছবির গল্পকার তিনি। পিতৃপক্ষের শেষ সপ্তাহের এক সন্ধ্যায় পাওয়া গেল তাঁকে। রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে আড্ডা দিলেন অর্ণব।
লেখালেখি শুরু করলে কবে থেকে?
শুরু বলতে ২০১৭ সালে। সোশ্যাল মিডিয়াতেই লেখা শুরু করি। প্রথম প্রথম আমার লেখা বিশেষ পরিচিতি পেত না কারণ আমি ভীষন সোজাসাপ্টা গল্প লেখায় বিশ্বাসী। আমার গল্পে নায়ক, নায়িকা আর খলনায়ক থাকতে হবে। তাদের নিয়েই গল্প এগোবে। তথাকথিত সাহিত্যিক বিশ্লেষণ ভিত্তিক লেখা আমি লিখতে পারি না। এভাবেই চলছিল। ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ারই একটি পেজে হঠাৎই আমার একটা গল্পে প্রায় সাড়ে চারশোর বেশি পাঠকের প্রতিক্রিয়া পাই। সেটা আমাকে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পাই এবং তারপর এখনও চলছে সবার ভালোবাসায়।
‘পরিণীতা’র ভাবনা মাথায় এল কিভাবে?
দেখো, প্রথমেই বলি ‘পরিণীতা’ আমার কলমের হলেও এই গল্প প্রিয়াঙ্কা পোদ্দারের মস্তিষ্কপ্রসূত। প্রিয়াঙ্কাই প্রথম আমাকে এই গল্পের আইডিয়াটা দেয়। ওর গল্পটা মফঃস্বলের প্রেক্ষাপটে ছিল। আমি যেহেতু ছোটবেলা থেকেই উত্তর কলকাতায় মানুষ, তাই আমার মনে হয়েছিল গল্পটাকে আমি যদি সেখানে নিয়ে ফেলি, তাহলে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে। ‘পরিণীতা’র মেহুল এবং বাবাইদা, এরা দুজনেই খুব চেনা দুটি চরিত্র। কমবেশি প্রায় প্রত্যেক পাড়ায় এরকম একটা ভীষণ ভালো ছেলে থাকে, যাকে না ভালোবেসে থাকা যায় না। আর মেহুলের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাবে সব মেয়েরাই।
আরও পড়ুন: পঁচিশে ‘উনিশে এপ্রিল’
সোশ্যাল মিডিয়ার লেখক অর্ণব থেকে আজ ‘পরিণীতা’র গল্পকার অর্ণব, এই যাত্রাটা ঠিক কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমি দেখিনি জানো। গল্পটা যখন প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় দিই, তখন সেটা পড়ে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের (‘পরিণীতা’র নায়িকা) দিদি দেবশ্ৰী আমাকে জানান যে লেখাটা তাঁর ভালো লেগেছে এবং তিনি সেটা তাঁর বোনকে পড়তে দিয়েছেন। এরপর একদিন রাজ চক্রবর্তীর (‘পরিণীতা’র পরিচালক) অফিস থেকে ফোন আসে আমার কাছে। ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ছবিটি। গোটা ব্যাপারটাই আমার কাছে স্বপ্নপূরণের মতো।
সোশ্যাল মিডিয়াতে তো অনেক উঠতি লেখক লেখিকা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নিজের পরিচিতি অর্জন করা কতটা কঠিন ছিল?
কঠিন তো ছিলই। আবু ধাবিতে থাকাকালীন আমার অফিস ছুটির পর আমি লেখালিখি নিয়ে বসতাম। প্রথমদিকে আমার লেখা সেভাবে কেউ পড়তই না। তারপর ধীরে ধীরে লোকজনের ভালোলাগা শুরু হলো। আমি আমার বেশিরভাগ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম রাখতাম রাতুল এবং শ্রী। এরপর এমন একটা সময় এল যখন গল্পে রাতুল দেখলেই পাঠকরা বুঝত সেটা অর্ণব ভৌমিকের লেখা। এটা কিন্তু আমাকে অনেক সাহস দেয় লেখার সময়। একটা কথা কি জানো, একটা ছবি যখন তৈরী হয়, তখন তার অভিনেতা, অভিনেত্রী বা খুব বেশি হলে পরিচালকের কথা লোকজন জানে। কিন্তু কতজন সেই ছবির গল্পকারের নাম জানে বলো তো? আমার তো মন হয় আমাদের নাম কেউ আদৌ জানতে চান না।
আরও পড়ুন: তাশি গাঁওয়ে একদিন
তোমার ক্ষেত্রে তো উল্টোটাই হয়েছে বলা যায়
হ্যাঁ, সেটা বলতে পারো। ‘পরিণীতা’র দৌলতে কিছুটা হলেও আমার নাম জেনেছে অনেকে। এটার একটা ভালো লাগা তো আছেই।
পরবর্তী কাজ?
অনেকগুলো গল্প নিয়েই কথাবার্তা চলছে। সামনেই মুক্তি পাচ্ছে অরুদীপ্ত দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘মোনালিসা’। এছাড়া ‘দুলহে রাজা’ নিয়েও কথা এগোচ্ছে। আমার এটা ভেবে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে যে পরিচালক, প্রযোজক সবাই আমার ওপর আস্থা রাখছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ
নিজের লেখা নিয়ে কোনও বই প্রকাশের চিন্তাভাবনা নেই?
এই মুহূর্তে সেটা নিয়ে ভাবছি না। ১০-১৫টা গল্পের সংকলন প্ৰকাশের ইচ্ছা আমার নেই। আমার কাছে বই মানে একটাই সুন্দর গল্প থাকবে যেটা পড়ার পর একটা দীর্ঘ রেশ থাকবে মনে। আর সেই রকম একটা গল্প লিখতে গেলে প্রচুর সময় দরকার। বই হয়তো প্রকাশ করব কিন্তু এখনই নয়। যখন বয়স হয়ে যাবে, সেভাবে আর কাজের চাপ থাকবে না, তখন সময় নিয়ে একটা সুন্দর গল্প লিখব।