তরুণবাবু সন্দেশটা দিয়ে বললেন, এই নিন আপনার পুরস্কার: প্রচেত গুপ্ত
RBN Web Desk: তাঁর শেষ দুটি ছবি ‘চাঁদের বাড়ি’ ও ‘ভালবাসার বাড়ি’র কাহিনীকার ছিলেন তিনি। স্বাভাবিক কারণেই বাংলা ছবির কথাশিল্পী তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ প্রচেত গুপ্ত। গতকাল ৯২ বছর বয়সে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাঙালির অন্যতম প্রিয় চলচ্চিত্রকার। পরিচালক হিসেবে দীর্ঘ ৬৩ বছরের কর্মজীবনে ৩৫টিরও বেশি ছবি পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
“তরুণবাবু চলে যাবেন আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি,” রেডিওবাংলানেট-কে বললেন প্রচেত। “কিছুদিন আগে যখন ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই তখনও দেখে মনে হয়েছিল উনি সেরে উঠবেন। তবু চলে গেলেন। আমার ভেবে খুব আনন্দ হতো যে তরুণবাবু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী (‘গণদেবতা’) নিয়েও ছবি করেছেন আবার আমার গল্প নিয়েও কাজ করেছেন। আমি নিজেকে ধন্য মনে করতাম। তবে আজ ভাবলে খুব মনখারাপ লাগছে যে ওঁর শেষ দুটি ছবি আমার গল্প থেকে করা। কেন যে আমাকে দিয়ে শেষ হলো। আমি তো চেয়েছিলাম উনি আরও ছবি করুন, আরও অনেক গল্প উঠে আসুক ওঁর হাত ধরে। শেষটা এত তাড়াতাড়ি হবে ভাবতে পারিনি। আমার গল্প নিয়ে উনি ছবি করেছেন, এটা একটা রূপকথার মতো।”
আরও পড়ুন: ঘাট সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ুক, তথ্যচিত্রে উদ্দেশ্য দুই তরুণীর
একটা গল্প নিয়ে কাজ করার সময় সেই কাহিনীর ভেতরে ঢুকে গিয়ে তার প্রতিটি স্তরকে স্পর্শ করে, প্রত্যেকটি চরিত্রের আচরণ ও ব্যবহার সবটাই তিনি বুঝতেন এবং ব্যবহার করতেন বলে মনে করেন প্রচেত। তাঁর কথায়, “তাঁকে শুধু একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে দেখা ভুল হবে। ছবির মাধ্যমে যেভাবে সাহিত্যকে তিনি পর্দায় তুলে ধরতেন, সেই অর্থে তিনি নিজেও একজন সাহিত্যিক ছিলেন।”
ব্যক্তিগত পরিসরে কেমন মানুষ ছিলেন তরুণবাবু?
“ওঁর মতো ভদ্র মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। যোগাযোগ আমাদের সবসময়েই ছিল। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ফোনে কথা হতো। ওঁর কাছে অনেক কিছু শেখার ছিল। তরুণবাবুর নিজস্ব কিছু ধারণা ছিল সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে। তবে উনি সেটা কখনও অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতেন না,” বললেন প্রচেত।
আরও পড়ুন: পদবী পরিবর্তন সমর্থন করেন না মধুমিতা
“২০০৬ সালে, তখন ‘চাঁদের বাড়ি’ শুটিং হচ্ছে, লাঞ্চ ব্রেকে চারদিক অন্ধকার করে রাখা হয়েছে, কারণ সেটে খুব বেশি আলো ছিল। তরুণবাবু একটা আলাদা ঘরে বসে লাঞ্চ করছিলেন, আমি সেখানে গিয়েছি গল্প করতে। গিয়ে দেখি উনি টিফিন বাক্সে একটা আপেল আর একটা সন্দেশ নিয়ে বসে লাঞ্চ করছেন। নানা কথা হতে-হতে আমি বললাম, আপনাকে বলতে খুব ভালো লাগছে, আমার একটা বই বাংলা অ্যাকাডেমি পুরষ্কার পেয়েছে। উনি সঙ্গে-সঙ্গে ওঁর ওই টিফিন বাক্স থেকে সন্দেশটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, এই নিন এটা আপনাকে দেওয়া আমার পুরষ্কার। ওই সন্দেশ যে আমার কাছে কত বড় পুরষ্কার, বলে বোঝানো যাবে না। সেই প্রাপ্তির স্বাদ আজও আমার কাছে অমূল্য,” বললেন প্রচেত।
ছবি: উইকিপিডিয়া