পান থেকে চুন খসলেই মানিকদা ধরে ফেলতেন: বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা: পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ রায় ছিলেন ছাতার মতো এক ব্যক্তিত্ব, এমনটাই মনে করেন বর্ষীয়ান অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিতের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিতে এক চাকুরিপ্রার্থীর ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে।
সত্যজিৎ, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার থেকে শুরু করে স্বপন সাহা, অঞ্জন চৌধুরীর মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন বিপ্লব। তবুও ইদানিং এত কম ছবিতে তাঁকে দেখা যায় কেন? “আসলে এখন আর কেউ ডাকে না,” সম্প্রতি শহরে এক অনুষ্ঠানে রেডিওবাংলানেট-কে বললেন বিপ্লব। “ডাকলে নিশ্চয়ই কাজ করব। অনেক নতুন পরিচালকই ভালো কাজ করছেন। তবে কেউ-কেউ কাজটা না শিখে চলে আসছেন। আমার একটাই কথা, ছবি নিশ্চয়ই করুন, কিন্তু শিখে করুন। ক্লাস টেনের পরীক্ষা পাস না করে যদি ইলেভেন ক্লাস করতে চলে যাই, তাহলে তো কিছুই বুঝব না। সেরকমই হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা।”
আরও পড়ুন: ছবি পুনঃমুক্তি নির্বিঘ্নেই, আশাবাদী ইন্দ্রাশিস
গল্পের অভাবের জন্যই ভালো ছবি হচ্ছ না বলে মনে করেন বিপ্লব। “একটা সাহিত্যনির্ভর ভালো গল্প হলে সেটাকে কেউ কতটা আর খারাপ করবে? সেইসব গল্প নিয়ে তো আজকাল ছবিই হয় না।”
বিশিষ্ট অভিনেতা কমল হাসান একবার তাঁকে বলেছিলেন, বাংলা সাহিত্যের এই বিপুল ভান্ডার থাকা সত্বেও কেন দক্ষিণের ছবিকে নকল করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারেন না, জানালেন বিপ্লব। “এখন তো সকলেই লেখক, তাই প্রচুর ছবি হচ্ছে। তাছাড়া আজকাল খুব তাড়াহুড়ো করে ছবি তৈরি হয়। এতে ছবির গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব নয়। একটি বাচ্চাকে জন্ম দিতে গেলেও তো পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন,” বললেন তিনি।
‘জয়বাবা ফেলুনাথ’-এ তাঁর অভিনীত বিকাশ চরিত্রটির জন্য দর্শক আজও তাঁকে মনে রেখেছেন। “ওই একজন পরিচালকই ছিলেন যাঁর ‘সত্যজিৎ রায়ের ছবি’ লেখার যোগ্যতা ছিল। সবদিকে ওঁর নজর থাকতো। আমার অভিনয়ে পান থেকে চুন খসলেই মানিকদা ধরে ফেলতেন। এই দৃষ্টি সকলের থাকে না। আমার বিরাট সৌভাগ্য যে ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি,” বললেন বিপ্লব।