ঋতুদার আরও একটা ছবিতে অভিনয় করার কথা হয়েছিল: রাতুল
RBN Web Desk: ‘উৎসব’ ছাড়াও পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের আরেকটি ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি, জানালেন পারকশনিস্ট রাতুল শংকর ঘোষ। আজ থেকে ঠিক কুড়ি বছর আগে, ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘উৎসব’-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাতুল। এই ছবির অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন প্রসেনিজৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, মাধবী মুখোপাধ্যায়, মমতা শংকর, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় ও দীপঙ্কর দে। ২০১৩ সালে আজকের দিনে প্রয়াত হন ঋতুপর্ণ।
কী ছিল সেই না হওয়া ছবির বিষয়?
প্রয়াত পরিচালকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রেডিওবাংলানেট-কে রাতুল জানালেন, “’উৎসব’-এর প্রিমিয়র হয়েছিল আটলান্টিক সিটিতে। প্রিমিয়রের পরেরদিন ঋতুদা আমাকে একটা নতুন ছবির কাহিনী শোনান। তখনও চিত্রনাট্য তৈরি হয়নি। একটা নাচের দলের গল্প। আমি এবং মা (মমতা শংকর) দুজনেরই অভিনয় করার কথা ছিল। আমার চরিত্রটা ছিল একটি ছেলের যে নাচের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেটা সকলে মেনে নেয় না। আসলে আমি তখন এতই ছোট ছিলাম যে মনে হয়েছিল এরকম একটা ছবি করা আমার পক্ষে খুব কঠিন হবে।”
অভিনয় নয়, সঙ্গীত জগতেই থাকতে চেয়েছেন রাতুল। মামা আনন্দ শংকর তাঁর আদর্শ। “যদি অভিনেতা হতে চাইতাম তাহলে হয়ত ছবিটা লুফে নিতাম। আমি হ্যাঁ/না কিছুই বলিনি। ঋতুদাও আর কিছু বলেনি। এখন ভাবলে মনে হয় ছবিটা হলে হয়ত আরও একটা অবিস্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকত আমার কাছে,” বললেন রাতুল।
আরও পড়ুন: রক্তবরণ মুগ্ধকরণ
কীভাবে এসেছিল উৎসব-এ অভিনয়ের প্রস্তাব?
“তখন আমি হায়ার সেকেন্ডারি দেব। ঋতুদা মাকে ফোন করে বলেছিল, ‘তুই যদি রাতুলকে রাজি করাতে পারিস তাহলে ছবিতে তোর জন্য একটা রোল থাকবে। আমি কি ওকে ফোন করব?’ মা বলেছিল, ‘তুই বলিস না, আমি বলে দেখি একবার।’ মা আমাকে জিজ্ঞাসা করতে আমি না বলে দিয়েছিলাম। আসলে ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে অনেক শুটিংয়ে গিয়েছি। ভীষণ একঘেয়ে লাগত। তাই প্রথমেই না বলে দিই। হায়ার সেকেন্ডারির রেজ়াল্ট বেরোনার পর মাকে বললাম ‘তুমি ঋতুদাকে হ্যাঁ বলে দাও, আমি করব।’ ভাবখানা এমন যেন আমি রাজি হয়ে ঋতুদাকে উদ্ধার করে দিচ্ছি,” হাসতে-হাসতে বললেন রাতুল।
‘উৎসব’-এ, অর্পিতার সঙ্গে
ছবি শুরুর আগে নিজের চিত্রনাট্য পড়ে শোনাতেন ঋতুপর্ণ। “সেখানে প্রতিটা দৃশ্য ঋতুদা দেখিয়ে দিয়েছিল—কে কোন টোনে কথাটা বলবে—ওই এক্সপ্রেশনগুলো মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। ওটা মেনে কাজ করতে হতো না, অজান্তেই হয়ে যেত যেন,” জানালেন রাতুল।
“সেটে আমার বন্ধু ছিল অর্পিতা। বাকি সবাই তো তাবড় অভিনেতা। ও আর আমি একেবারেই নতুন। একটা বড় সুবিধা ছিল ফ্লোরে মন্টুমামা মানে সুমন্ত মুখোপাধ্যায়কে পাওয়া। ছোটবেলা থেকেই উনি আমার খুব প্রিয় মানুষ। চিত্রনাট্য হাতে পেলেই আমি ওনার কাছে চলে যেতাম, বলতাম ‘তুমি একবার পড়ে দাও।’ রিহার্সালটা ওইভাবেই হয়ে যেত,” স্মৃতি হাতড়ে বললেন রাতুল।
আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে
ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছে জয় (রাতুল) ও শম্পা (অর্পিতা)। যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই শিশির (দীপঙ্কর) এসেছে বাড়িতে। শিশিরকে নিয়ে মা-বাবার মধ্যে শৈশব থেকেই অশান্তি দেখে এসেছে জয়। এই অশান্তি তার এখনও কতটা আতঙ্কের, সেই কথাই সে জানায় শম্পাকে। “মনে আছে শটটা শেষ হতে ঋতুদা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। খুব খুশি হয়েছিল। এটা আমি কোনওদিনও ভুলতে পারব না। ভীষণ মিস করি মানুষটাকে। পরিচালক হিসেবে এত পান্ডিত্য, সবদিকে এত খেয়াল, আর কারোর মধ্যে দেখিনি।”
বিনোদন জগতের সব খবর পেতে জয়েন করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল