কেমন হবে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’র গল্প? ঘরোয়া আড্ডায় অনীক, বিদীপ্তা, সৌমিত্র, অর্পিতা

কলকাতা: সিঁড়ি দিয়ে উঠে সুদৃশ্য কাঠের দরজার সামনে দাঁড়াতেই ওপার থেকে কানে এলো সুরেলা কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত। ডোরবেলটা বাজানো কী ঠিক হবে? ভেতরে গায়িকার মতো শ্রোতাও আছে নিশ্চয়ই। আচমকা বেল বাজালে তাঁদের রসভঙ্গ হবে না তো? কিন্তু নিজের উপস্থিতিটাই বা জানান দেব কী ভাবে? এই সব সাতপাঁচ ভেবে শেষমেশ আঙুলের চাপ দিয়েই ফেললাম বৈদ্যুতিন বোতামে।

কিছুক্ষণের অপেক্ষা। গান শেষ হলো, তারপর মৃদু হাততালি ও অভিনন্দন। তারপরেই খুলল দরজা। ভেতরে উঁকি দিতে প্রথমেই চোখে পড়ল এতক্ষণ যিনি গান গাইছিলেন তাঁকে। বিদীপ্তা চক্রবর্তীর অভিনয় ক্ষমতা কারোর অজানা নয়। কিন্তু তিনি যে এত ভালো গানও গাইতে পারেন সেটা জানা ছিল না।

‘ভেতরে এসো,’ ডাকলেন পরিচালক অনীক দত্ত।

শুধু অনীক এবং বিদীপ্তাই নন। দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত পাড়ায় অনীকের এই ফ্ল্যাটে তখন উপস্থিত অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ও, বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার যাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তবে আজকের এই ঘরোয়া আড্ডায় একেবারে অন্যরকম ভাবে পাওয়া গেল বিদীপ্তা ও অর্পিতাকে।

আরও পড়ুন: যে জন থাকে মাঝখানে

এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। চুরাশি পেরিয়েও যাঁকে দেখলে আপনা থেকেই ‘ফেলুদা’ বলে ডাকতে ইচ্ছে করে। এখনও যিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলা নাটক ও ছবির জগত। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অনীকের পরবর্তী ছবি ‘বরুণবাবুর বন্ধু’র কেন্দ্রীয় চরিত্র তিনিই।

কে এই বরুণবাবু?

পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা এক অশীতিপর চরিত্র বরুণ চক্রবর্তী। স্ত্রী ললিতা দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী। একগুঁয়ে ও বদমেজাজী বরুণকে তার পরিবারের সবাই এড়িয়ে চলে। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না। সঙ্গী বলতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাতি নিমো ও বাল্যবন্ধু সুকুমার।

আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে

“এহেন বরুণবাবুর জীবন একবারে পাল্টে যাওয়ার উপক্রম হয় যখন তার এক খ্যাতনামা বন্ধু দেখা করতে আসবে বলে জানায়। বরুণবাবু ও তার এই বন্ধুটি একসঙ্গে স্কুলে পড়তেন। এদিকে যারা এতদিন বরুণবাবুকে কোনও গুরুত্ব দেয়নি, তারাই এখন সেই খ্যাতির আলোয় নিজেদের হাত সেঁকে নিতে উঠেপড়ে লাগে। বরুণবাবুর কদর বেড়ে যায়। এইভাবেই এগোতে থাকে গল্প,” জানালেন অনীক।

এরকরম একটি চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ সচরাচর আসে না বলে জানালেন সৌমিত্র। “বরুণ প্রায় ছিটগ্রস্থ, নিজের ধ্যানধারণা আগলে বসে থাকা একটি মানুষ। সে বর্তমান সময়ের একবারেই অনুপযোগী, এমন কি একটা মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতে জানে না। সে নিজের কিছু আদর্শে বিশ্বাসী। একটা চরিত্রের মধ্যে এই যে বৈপরীত্য বা দ্বন্দ্বটা আছে, এটা যে কোনও অভিনেতারই খাদ্য। সেই জন্যই ভালো লেগেছে কাজটা করতে,” বললেন সৌমিত্র।

আরও পড়ুন: তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

ছবিতে বরুণের মেজপুত্রবধূ মাধুরীর চরিত্রে অভিনয় করছেন বিদীপ্তা। “বরুণবাবুর বিখ্যাত বন্ধুটি আসছেন, এই খবর পাওয়ার পর তার প্রতি পরিবারের সবার ভালোবাসা একেবারে উপচে পড়তে থাকে,” জানালেন বিদীপ্তা। “হঠাৎ করেই সবার কাছে বরুণবাবুর গুরত্ব বেড়ে যায়। তার মানে এই নয় যে পরিবারের বাকি মানুষগুলোর মধ্যে কোনও আন্তরিকতা নেই। কিন্তু সেই মুহূর্তে তারাও সেই প্রছন্ন খ্যাতির ভাগীদার হতে চায়। মাধুরী নিজেও স্বামী সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকে। ছবিটা যত এগোয়, তত বোঝা যায় পরিবারের মানুষগুলো কে কতটা বাবাকে ভালোবাসে।”

কোথাও গিয়ে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ বর্তমান সামাজিক চিত্রটাও তুলে ধরবে বলে মনে করেন সৌমিত্র। “পরিবারের মধ্যে এই সুবিধাবাদী আচরণটা একেবারেই মেনে নিতে পারেন না বরুণ,” জানালেন তিনি। “এছাড়াও চরিত্রটির একটি অতীত আছে যেটা তাকে হামেশাই তাড়িয়ে বেড়ায়। যৌবনে একটা সময় যখন তার প্রতিবাদ করার দরকার ছিল, বরুণ তখন সেটা করেননি। আজ যখন বরুণের সেরকমই প্রতিবাদী কাউকে প্রয়োজন পড়ে, তখন কেউই তার পাশে এসে দাঁড়ায় না। আসলে এই চরিত্রটা একমাত্রিক নয়, এর মধ্যে অনেকগুলো স্তর আছে। ছবিটা তাই ভীষণ প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে আমার।”

আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল

‘বরুণবাবুর বন্ধু’তে নিমোর মা, বরুণের ছোট পুত্রবধূ মৌসুমীর ভূমিকায় থাকছেন অর্পিতা। “নিমো এবং সুকুমারকে বাদ দিলে একমাত্র মৌসুমীর সঙ্গেই কিছুটা মনের মিল আছে বরুণবাবুর। আজকাল তো সবাই মনের দিক থেকে খুব জটিল হয়ে গেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে মাধুরী খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। মৌসুমীই ছবির একমাত্র চরিত্র যার কোনও চাওয়া পাওয়া নেই। সে তার শ্বশুরমশাইকে বোঝে, যেটা আর কেউ চেষ্টাও করে না,” বললেন অর্পিতা।

রমাপদ চৌধুরীর মূল কাহিনী ‘ছাদ’ অবলম্বনে ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন অনীক ও উৎসব মুখোপাধ্যায়। সুকুমার ও ললিতার ভূমিকায় থাকছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাধবী মুখোপাধ্যায়। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন কৌশিক সেন, শ্রীলেখা মিত্র, ঋত্বিক চক্রবর্তী, দেবলীনা দত্ত, অলকানন্দা রায়, চান্দ্রেয়ী ঘোষ ও সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন দেবজ্যোতি মিশ্র, ক্যামেরায় অভীক মুখোপাধ্যায় ও সম্পাদনায় অর্ঘ্যকমল মিত্র।

শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’।  

ছবি: গার্গী মজুমদার

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Prabuddha

Foodie, lazy, bookworm, and internet junkie. All in that order. Loves to floor the accelerator. Mad about the Himalayas and its trekking trails. Forester in past life. An avid swimmer. Also an occasional writer and editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *