দিন ও সময় এক রেখেই মুক্তি পেল ‘৮/১২’-এর ট্রেলার
কলকাতা: দুপুর সাড়ে বারোটা। বিনা বাধায় রাইটার্স বিল্ডিংসের ফটক পেরিয়ে, দৃপ্ত পায়ে ভেতরে ঢুকলেন সাহেবী পোশাক পরিহিত তিন যুবক। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলায় তৎকালীন ইংরেজ শাসনের প্রাণকেন্দ্রের অলিন্দ থেকে শোনা গেল পরপর গুলির আওয়াজ। বন্দুক হাতে ছুটে এল বিরাট পুলিশ বাহিনী। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশচন্দ্র গুপ্তের ছোঁড়া গুলিতে লুটিয়ে পড়েছেন ইন্সেপক্টর জেনারেল এন এস সিম্পসন। কারাগারে স্বদেশী আন্দোলনকারীদের উপর অমানবিক অত্যাচারের জন্য কুখ্যাত ছিলেন সিম্পসন। পুলিশের সঙ্গে অসম যুদ্ধে মোকাবিলা করা অসম্ভব বুঝতে পেরে একটা সময় মুখের ভেতর রাখা সায়ানাইড ক্যাপসুলে কামড় দিলেন বাদল আর গুলি ছুঁড়ে আত্মহত্যা করলেন বিনয় ও দীনেশ।
নয় দশক পার করে, অগ্নিযুগের তিন সেনানীকে স্মরণে রেখে, একই দিনে একই সময়ে গতকাল মুক্তি পেল অরুণ রায় পরিচালিত ‘৮/১২’ ছবির ট্রেলার। স্থানও সেই এক, রাইটার্সের বিপরীতে বিনয়, বাদল ও দীনেশের মূর্তির পাদদেশ। পুলিশের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিচালক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কিঞ্জল নন্দ, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, রেমো, গুলশনারা খাতুন, অনুষ্কা চক্রবর্তীরা। ছিলেন ছবির সুরকার সৌম্য ঋতও।
আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
ছবিতে বিনয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিঞ্জল। তিনি বললেন, “ইতিহাসে আজকের এই দিনটার তাৎপর্য কী সেটা হয়তো অনেকেই জানেন। তবে অরুণদা না ভাবলে এই ইতিহাসটা এত গভীরভাবে জানা হতো না।”
এর আগে অরুণের ‘হীরালাল’-এর নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কিঞ্জল। “তবে ‘৮/১২’-এর মতো ‘হীরালাল’ অ্যাকশনধর্মী ছবি ছিল না। সেদিক দিয়ে এই ছবিটা আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল। এরকম ঘটনা নিয়ে আরও বেশি ছবি হওয়া উচিত।”
বাদলের চরিত্রে রয়েছেন অর্ণ। বিনয়-বাদল-দীনেশের মূর্তিতে মালা দেওয়াকে ‘রোমহর্ষক’ অভিজ্ঞতা বললেন তিনি। “একটা লাইফটাইম চরিত্রে অভিনয় করলাম। এই ধরনের চরিত্র করার জন্য আমরা অভিনেতারা সবসময় মুখিয়ে থাকি। তবে এটা তো শুধু একটা ছবি করা নয়, বরং কিছুটা ইতিহাসেরও সাক্ষী হয়ে থাকা,” বললেন অর্ণ।
দেশপ্রেম কী হতে পারে সেটা এই ছবির রিসার্চ ওয়ার্ক করার সময় বুঝতে পেরেছেন বলে জানালেন অর্ণ। “যখন শেষ দৃশ্যে অভিনয় করছি, তখন ভেতর থেকে সেই উত্তেজনাটা অনুভব করতে পারছিলাম। এটা আমার কাছে একটা স্মরণীয় ছবি হয়ে থাকবে এটুকু বলতে পারি,” বললেন তিনি।
“যখন ওই মূর্তিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছিলাম, তখন বুকের ভেতর কেমন অনুভূতি হচ্ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না,” বললেন দীনেশের চরিত্রাভিনেতা রেমো। “এটা তো কোনও সাধারণ চরিত্র নয়। কাজটা করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। দীনেশ গুপ্তর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে চরিত্রটাকে বোঝা, এছাড়াও ওই সময়টাকে নিয়েও পড়াশোনা করতে হয়েছে। আমার ধারনা এটা আমাদের সকলকেই অনেকটা পাল্টে দিয়েছে।”
ঐতিহাসিক বিষয় নিয়েই একের পর এক ছবি করছেন অরুণ। ‘এগারো’, ‘হীরালাল’-এর পর এবার ‘৮/১২’। আজকাল প্রযোজকরাও তাঁকে দিয়ে এরকম ছবিই করাতে চাইছেন বলে জানালেন তিনি। “আমি অন্য ধরনের ছবি করতেও আগ্রহী, কিন্তু তাঁরা আমাকে এর বাইরে কিছু ভাবতেই পারছেন না,” বললেন তিনি।
তাঁর তিন মুখ্য অভিনেতাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন অরুণ। “এই তিনজন এত ভালো অভিনেতা যে এরা নিজেদের আগ্রহেই শিখে নিয়েছে। নিজেরাই নিজেদের তৈরি করেছে বলে যায়। আমাকে বিশেষ কিছু করতে হয়নি। আশা করব দর্শক ছবির মাধ্যমে সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারবেন,” বললেন তিনি। তাঁর পরবর্তী ছবিটাও পিরিয়ড ড্রামা নিয়েই হবে বলে জানালেন অরুণ।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
দেশপ্রেমের ছবিতে গান সবসময়েই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে থাকে। “এই ছবির কাজটা পাওয়ার ঘটনাও খুব অদ্ভুত,” বললেন সৌম্য ঋত। “আগে অন্য একজন ছবির সঙ্গীতের দায়িত্বে ছিলেন। শ্যুটিং শুরু হওয়ার চারদিন আগে অরুণদা আমাকে ডেকে পাঠান। তিনদিন সময় নিয়ে তিনটে গান লিখেছি ও সুর করেছি। এটা কী করে পারলাম আমি নিজেও জানি না। অরুণদা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, সেটা আমি ঠিকঠাক পালন করতে পেরেছি এটাই সবথেকে ভালো লাগছে। এই গানগুলো আমার কাছেও খুব স্পেশ্যাল হয়ে থাকবে।”
জানুয়ারিতে মুক্তি পেতে চলেছে ‘৮/১২’।
ছবি: স্বাতী চট্টোপাধ্যায়