সিনেম্যাটিকভাবে উত্তমকুমারকে ফিরে পাওয়াই উদ্দেশ্য: সৃজিত
কলকাতা: প্রয়াণের ৪৩ বছর কেটে যাওয়ার পর আজও এ কথা স্পষ্ট যে বাঙালি দর্শকের কাছে উত্তমকুমারের মৃত্যু নেই। তাঁর অভিনয় জীবনে তিনি যত ছবিতে কাজ করেছেন তা আজও দর্শককে মোহাবিষ্ট করে রাখে। তাই আজও তাঁর কাজ নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সেই পরীক্ষামূলক ছবি ‘অতি উত্তম’ মুক্তি পেতে চলেছে এ বছরেই। গতকাল ভবানীপুরে, উত্তমকুমারের বাসভবন প্রাঙ্গনে দেখা গেল এই ছবির এক ঝলক। ছবিতে অভিনয় করেছেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রোশনি ভট্টাচার্য, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, লাবণী সরকার, জিনা তরফদার এবং অবশ্যই উত্তমকুমার।
ছবিতে উত্তমকুমারকে পাওয়া যাবে প্ল্যানচেটের মাধ্যমে। তাঁর বিভিন্ন ছবির দৃশ্য থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে ছবিটি তৈরি করেছেন সৃজিত। পাঁচ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই ছবির প্রস্তুতি। তারপর ৬১ বার চিত্রনাট্য বদল করার পর অবশেষে গতকাল দেখা গেল ছবির প্রথম ঝলক।
আরও পড়ুন: কুয়াশায় মেখে একাকীত্ব
যে দুজন মানুষের তিনি অন্ধ ভক্ত—সত্যজিৎ রায় ও উত্তমকুমার—সেই দুজনকে সৃজিত তাঁর প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’-এর মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছিলেন। তবে ‘অতি উত্তম’ সবদিক থেকেই তাঁর কাছে খুব স্পেশাল, বললেন তিনি।
“আমরা সকলেই তো ওঁকে খুব মিস করি। জুলাই আর সেপ্টেম্বরে সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে বোঝা যায় যে এখনও ওঁর কত ভক্ত রয়েছে । আমি আমার মতো করে একটা চেষ্টা করলাম যদি সিনেম্যাটিক ল্যান্ডস্কেপ দিয়ে তাঁকে ফিরে পাওয়া যায়,” বললেন সৃজিত।
আরও পড়ুন: রূঢ় বাস্তব, চমকে দেওয়া অভিনয়
বারবার চিত্রনাট্য বদলের প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “প্রতিটা ছবি দেখার পরে একবার করে চিত্রনাট্য বদলে গেছে। বিভিন্ন ছবির বিশেষ-বিশেষ দৃশ্যে ওঁর এক্সপ্রেশন দেখে সেই মতো সিন সাজিয়ে, লংশটের জন্য লংশট, মিডশটের জন্য মিডশট বা ক্লোজআপের জন্য ক্লোজ শট তৈরি করে সেইভাবে চিত্রনাট্য বদলের কাজটা সহজ ছিল না।”
শুধু বাংলায় নয়, দেশেও এই ধরণের ছবির নজির নেই। তাই প্রযুক্তিগত দিক থেকে ‘অতি উত্তম’ খুবই কঠিন এবং একদম ব্যতিক্রমী কাজ। “এখানে একটা সুন্দর গল্পও রয়েছে। প্রতিটা সিন দেখে ব্যাক ক্যালকুলেশন করে সেই ফুটেজগুলোকে কাজে লাগিয়ে দৃশ্যগুলোকে তৈরি করা হয়েছে,” জানালেন সৃজিত।
উত্তমকুমারের বাসভবনে টিম ‘অতি উত্তম’
এই ছবি দিয়ে বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোশনি। তিনি জানালেন, “আমি ছোট থেকেই উত্তমকুমারের সিনেমার ভক্ত। বড়পর্দায় আমার প্রথম কাজ হতে চলেছে ওঁর সঙ্গে একই স্ক্রিনে থেকে, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। তবে ভয়ও যে করছে না তা নয়। ওরকম একজন অভিনেতার সামনে দর্শক আমাদের কীভাবে নেবেন সেটা ভেবে একটু ভয় তো করছেই।”
অনিন্দ্য রয়েছেন এই ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্রে। এই ছবি দিয়ে তাঁরও বড়পর্দায় আসার কথা ছিল। তবে ঘটনাচক্রে তার আগেই সৃজিতের ‘X=প্রেম’ মুক্তি পেয়ে যায়। “এটা আমার কাছে একটা ম্যাজিক রিয়ালিজ়ম বলা যায়। আমি এমন একটা চরিত্র করছি যার সমস্যা সমাধান করতেই উত্তমকুমারের আবির্ভাব হচ্ছে। এটা কল্পনারও বাইরের ব্যাপার,” বললেন অনিন্দ্য।
আরও পড়ুন: ‘মাসুম’-এর সিক্যুয়েল করবেন শেখর?
কীভাবে হলো শ্যুটিং?
“সাধারণত এই ধরণের কাজ একজন ডামি রেখে করা হয়। খুবই টেকনিক্যাল, যান্ত্রিক একটা মাপ ধরে কাজ করতে হয়। কতটা দেখব, কোনদিকে তাকাব বা তাকাবার অ্যাঙ্গেলটা কী হবে, এগুলো হিসেব করে নিতে হয়। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি যেন এই টেকনিক্যাল খুঁটিনাটিগুলো ছবিতে না বোঝা যায়। ছবিতে ব্যাপারটা সহজ, স্বাভাবিক লাগা দরকার। সেটাই সকলে মিলে চেষ্টা করেছি,” জানালেন অনিন্দ্য।
ছবিতে সুরারোপ করেছেন সপ্তক সানাই দাস। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সৌমিক হালদার। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন সাবর্ণী দাস। সম্পাদনা করেছেন প্রণয় দাশগুপ্ত।
ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে ‘অতি উত্তম’।
ছবি: RBN আর্কাইভ ও স্বাতী চট্টোপাধ্যায়