‘ভ্রমরের চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে প্রথমে যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম’

অবন ঠাকুরের ‘রাজকাহিনী’র সোলাঙ্কি রাজকুমারীর সঙ্গে মিল রেখেই নাম রেখেছিলেন বাবা। কিন্তু ‘ইচ্ছেনদী’র সুবাদে মেঘলা নামেই তিনি বেশি পরিচিতি পেলেন দর্শকমহলে। ধারাবাহিকটি চূড়ান্ত জনপ্রিয় হওয়ার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বিয়ের পর কিছুদিন বিরতি নিয়ে ফিরে এসে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। সম্প্রতি ‘মন্টু পাইলট’-এ ভ্রমর চরিত্রে অভিনয় তাঁর কেরিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী সোলাঙ্কি রায়।

মেঘলা আর ভ্রমরকে দর্শক মেলাতে পারছেন না

সেটাই তো হওয়ার কথা। দুটো একেবারেই ভিন্ন চরিত্র। মেলানো তো সম্ভব নয়।

‘মন্টু পাইলট’ তো ভীষণ ডার্ক একটা সিরিজ়। এরকম একটা চরিত্রে অভিনয় করতে সমস্যা হয়নি?

সত্যি কথা বলতে কী ‘মন্টু পাইলট’-এ কাজ করা নিয়ে আমি প্রথমে যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম। আমাকে এতদিন যে ধরণের চরিত্রে দর্শক দেখে এসেছেন, তাঁরা ভ্রমর হিসেবে আমাকে কতটা গ্রহণ করবেন, এটা নিয়ে সংশয় ছিলই। কিন্তু তারপর দেবালয়দার (ভট্টাচার্য, পরিচালক) সঙ্গে কথা বললাম। চরিত্রটা জানলাম, ভ্রমরের জার্নিটা বুঝলাম। তারপরেই মনে হলো এই কাজটা আমার করা উচিৎ। তাছাড়া চান্দ্রেয়ীদিও (ঘোষ) আমাকে বলেছিল যে কাজটা আগে ভালো করে বুঝতে। ও নিজেও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে অভিনয় করেছে এই সিরিজ়ে।




‘মন্টু পাইলট’ মুক্তির পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কী?

দর্শকদের তো দারুণ পছন্দ হয়েছে। সিরিজ়টা যখন স্ট্রিমিং শুরু হলো, প্রচুর মানুষ প্রশংসা করল, তখন বুঝলাম দর্শক আসলে অভিনেতা-অভিনেত্রীকে পছন্দ করেন। তাই অভিনয়টা যদি ভালো করা যায় তাহলে আমাদের অভিনীত চরিত্রগুলোকেও দর্শক ভালোবাসতে শুরু করবেন।

ভ্রমর ঠিক কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল অন্যান্য চরিত্রগুলোর থেকে?

সব চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং। তবে ভ্রমর করার ক্ষেত্রে আমার কাছে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা হলো এই চরিত্রটার সঙ্গে আমি একেবারেই রিলেট করতে পারিনি। ভ্রমর একদম আমার বিপরীত মেরুর একটা চরিত্র। আর সেটাই বোধহয় এই সিরিজ়ে আমার অভিনয় করার মূল কারণ। 

আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল

ভ্রমরকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলতে কোনও প্রস্তুতি নিয়েছিলে কী?

আলাদা করে কোনও প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাইনি। ‘মন্টু পাইলট’-এ ভ্রমর যে এলাকার কথা বলে, বাস্তবে সেরকম কোনও জায়গায় গিয়ে আমি একটা হোমওয়ার্ক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি। দেবালয়দার মূল বক্তব্য ছিল, ভ্রমরের ভালোলাগা মন্দলাগা, এই সব অনুভূতিগুলোকে যেন আমি ঠিকভাবে ধরতে পারি। দেখো, আমরা সবাই ইমোশনাল। আমার মনে হয়, দিনের শেষে আমাদের সবার সূক্ষ অনুভূতিগুলো এক, কোথাও যেন একটা সরু তার দিয়ে জোড়া। সেটা মাথায় রেখেই আমি ভ্রমর চরিত্রটাকে প্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

‘মন্টু পাইলট’ সোলাঙ্কির জীবনে কোনও প্রভাব রাখল কী?

অবশ্যই। রাতের কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় দেহপসারিনীর পেশায় যুক্ত অনেক মহিলাকে দেখা যায়। বলতে দ্বিধা নেই, ছোটবেলায় বা যখন একটু বড় হচ্ছি, তখন অনেকের মতোই এই জায়গাগুলো দিয়ে যাতায়াত এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা ছিল। কিন্তু ভ্রমর আমাকে মনের দিক থেকে এঁদের অনেক কাছাকাছি এনে দিয়েছে। এই সিরিজ়টা যেসব মানুষের গল্প বলে, বাস্তবে তাঁদের অন্ধকার জীবনের টানাপোড়েনটা আমি এই চরিত্রে অভিনয় করার পর উপলব্ধি করতে পেরেছি।

প্রথমে যথেষ্ট সন্দিহান

‘মন্টু পাইলট’-এ, সৌরভ দাসের সঙ্গে

সহঅভিনেতা হিসেবে সৌরভ কেমন?

সাংঘাতিক সিরিয়াস নিজের কাজ নিয়ে। একেবারে অন্য মাত্রার ডেডিকেশন। এমনও দিন গেছে যখন শুট চলাকালীন আমি ওকে ঘন্টার পর ঘন্টা নোংরার পাশে, জলের উপর বসে থাকতে দেখেছি। অভিনয়ের জন্য ও যে কোনও ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। একটা টুঁ শব্দও করে না।

আর বিক্রম চট্টোপাধ্যায়?

বিক্রমও তাই। সৌরভ সেটে অনেক সময় মজা করে। বিক্রমের সঙ্গে যখন ‘ইচ্ছেনদী’তে কাজ করতাম তখন দেখতাম ও খুব সিরিয়াস। আর অভিনয় নিয়ে বিক্রমও ভীষণ ডেডিকেটেড। যেহেতু কেরিয়ারের একেবারে প্রথম দিকে আমি বিক্রমের সঙ্গে কাজ করি তাই ওর থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি।

আরও পড়ুন: খেল দিখা সকোগে না?

একটু পেছনে ফেরা যাক। তোমার পড়াশোনা তো পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে। সেখান থেকে অভিনয়ে এলে কী ভাবে?

অভিনয়ে আসাটা একেবারেই প্ল্যান করে নয়। গ্র্যাজুয়েশনের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস নিয়ে মাস্টার্স করি। সেটা শেষ করে আমি তখন এমফিল-এর এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়েছি সবে। একদিন কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি, হঠাৎ একজন ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞেস করলেন আমি অভিনয় করতে ইচ্ছুক কী না। একটি নতুন ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন তিনি। তারপর অডিশন দিলাম, কিছুদিন পর জানতে পারলাম আমি সিলেক্টেড। ‘কথা দিলাম’ আমার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক।

তারপরেই কি ‘ইচ্ছেনদী’ ?

হ্যাঁ। ‘ইচ্ছেনদী’ আমার দ্বিতীয় ধারাবাহিক। ‘ইচ্ছেনদী’ করার পর থেকেই  আমার পরিচিতিটা বাড়ে। 

আরও পড়ুন: শেষ মোচড়ে বিরিয়ানি

এমফিল আর হলো না তাহলে?

এন্ট্রান্স তো দিয়েছিলাম। কিন্তু রেজ়াল্ট বেরোতে-বেরোতে ‘কথা দিলাম’-এর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর করা হলো না। তবে ভবিষ্যতে পিএইচডি করার ইচ্ছে আছে।

‘ইচ্ছেনদী’র সাফল্যের পর বিরতি নিলে কেন?

বিয়ে করলাম যে। তারপর তো বিদেশ চলে গেলাম। ওখানে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে দেশে ফিরি। আর ফিরেই তো কাজ শুরু করে দিই। খুব বেশি বিরতি নিইনি।

টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করে এখন ওয়েব সিরিজ়। দুটোর মধ্যে কোনও পার্থক্য পাও?

দেখো ধারাবাহিক বা ওয়েব সিরিজ়ে আমি আজ পর্যন্ত যে কটা চরিত্রে অভিনয় করেছি, প্রত্যেকটাই খুব জোরদার। সে তুমি মেঘলা বলো বা ‘ধানবাদ ব্লুজ়’-এর ঋদ্ধিমা অথবা ‘পাপ’-এর কিয়া। আমার প্রত্যেকটা চরিত্রে কাজ করতেই খুব ভালো লেগেছে। সেভাবে কোনও পার্থক্য চোখে পড়েনি।

আরও পড়ুন: পঁচিশে ‘উনিশে এপ্রিল’

ওয়েব সিরিজ় সম্পর্কে এখনও সবাই অবগত নয়। সেক্ষেত্রে তো ধারাবাহিকে নিয়মিত করলে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছোনো সম্ভব

আমার তো মনে হয় দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে তুমি যেটা বলছ সেটাও ঠিক। আমাদের দেশে এখনও এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে এই ওয়েব সিরিজ় বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ধারণাটাই পরিস্কার নয়। তাই ভ্রমরের থেকে মেঘলা তাদের অনেক বেশি কাছের মানুষ। কিন্তু প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা যেভাবে উন্নতি করছি, সেক্ষেত্রে সেইসব অঞ্চলেও ওয়েব সিরিজ় সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হতে বেশি সময় লাগবে না। আর কয়েক বছরের মধ্যেই ওয়েব সিরিজ়ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের মতোই জনপ্রিয় হবে।

এ তো গেল ক্যামেরার সামনের সোলাঙ্কির কথা। বাস্তবের সোলাঙ্কি কেমন?

(হাসতে হাসতে) এটা বলা খুব মুশকিল জানো। আমি যে বাস্তবে ঠিক কেমন তা এক কথায় বলতে পারব না। এমনিতে চুপচাপ, কিন্তু ভেতরে আমি খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। এরকম চরিত্র নিয়ে আমি নিজেই খুব সমস্যায় পড়ে যাই মাঝে-মাঝে। আমার আশেপাশের মানুষগুলো যে আমাকে কীভাবে সামলায় কে জানে!

পরবর্তী কাজ?

এই মুহূর্তে অনেকগুলো কাজের কথা চলছে। বাকিটা ক্রমশ প্রকাশ্য।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *