অন্ধকারটা রয়েই গেল, ভোরের জন্ম হতে গিয়েও হল না

ছবি: সিতারা

পরিচালনা: আশিস রায়

অভিনয়ে: রাইমা সেন, সুব্রত দত্ত, এম নাসার, মেঘনা নাইডু, জাহিদ হাসান, ফজলুর রহমান বাবু

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ৮ মিনিট

RBN রেটিং: ২.৫/৫

প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া বড়ই বেদনাদায়ক। এক প্যাকেট চিপস কিনে যদি দেখা যায় তার ভেতরে অর্ধেকই মিইয়ে গেছে অথবা অফিস যাওয়ার জন্য সাত তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসের সব সিট ভর্তি দেখলে মনের অবস্থা যেমন হয়, অনেকটা সেইরকমই হল ‘সিতারা’ দেখে। সাহিত্যিক আবুল বাশারের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ভোরের প্রসূতি’ অবলম্বনে আশিস পরিচালনা করেছেন এই ছবি। সিতারা নামক এক সাধারণ গ্রাম্য গৃহবধূর জীবনের টানাপোড়েনের গল্প ‘ভোরের প্রসূতি’।




বাংলাদেশ থেকে স্বামী জীবন শেখের হাত ধরে কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতে আসে সিতারা। সঙ্গে তার দেহরক্ষী দিলু এবং দিলুর প্রতিবন্ধী বোন নয়না। নিজের ব্যাবসায়িক স্বার্থে কবীর মহাজনের কাছে সিতারাকে বিক্রি করে দেয় জীবন। কবীর সিতারার শরীরকে হাতিয়ার করে তার চোরা কারবারকে বড় করার স্বপ্ন দেখে। এভাবেই একের পর এক মহাজনের বিছানায় হাতবদল হতে থাকে সিতারা। একসময় আসে ভাঁটার টান। সিতারার দেহে জন্ম নেয় এক গোপন রোগ। ভাঙতে থাকে শরীর। অসুস্থ সিতারাকে দিয়ে আর কোনও কাজ হবে না ভেবে তাকে কারবার থেকে সরিয়ে দেয় কবীর।

এমন সময় সিতারার আলাপ হয় সমাজসেবী মানব সরকারের সঙ্গে। মানবের চোখে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে সে। সিতারাকে ভালোবাসার মায়াজালে আবদ্ধ করে মানব নিজের কাজ হাসিল করতে চায়। উদ্বাস্তু মানুষদের জন্য কাজ করতে গিয়ে মানবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পথ চলতে শুরু করে সিতারা। কিন্তু মানবও তাদের সম্পর্ককে জনসমক্ষে স্বীকার করতে চায় না। সিতারার জীবনে পুরুষসঙ্গ এসেছে বহুবার। প্রতিবারই তাকে এই ঘৃণ্য পথ থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছে দিলু। কোথাও যেন সিতারাকে ভালোবাসি বলতে গিয়েও দিলুর গলায় আটকে গেছে কথাটা। শূন্য থেকে শুরু করে পুনরায় শূন্যে ফেরার এই পথে সিতারার ছায়াসঙ্গী হয়েই থেকে যায় দিলু।

স্বপ্ন দেখি, কলেজ ফেস্টে কেউ একদিন বাংলা খেয়াল গাইবে: সুমন

সিতারার চরিত্রে রাইমা সেনের অভিনয় ভালো হলেও তেমন অভাবনীয় কিছু নয়। নারীকেন্দ্রিক গল্পে তাঁর অভিনয় আরও দাপুটে হলে চরিত্রের প্রতি সুবিচার করা যেত। তাঁর উচ্চারিত পূর্ববঙ্গের ভাষাও ঠিক সুস্পষ্ট নয়। কখনও তিনি ওই ভাষায় কথা বলছেন আবার কখনও বা শহুরে ভাষায়। কবীরের চরিত্রে ‘বাহুবলী’ খ্যাত নাসারের ম্যানারিজ়মও মাঝে মাঝে একঘেয়ে লাগে। বেশ কিছু জায়গায় ডাবিংও কানে ব্যথা দেয়।

তবে এ ছবির শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার দিলুর চরিত্রে জাহিদ। বাংলাদেশী এই অভিনেতার মুখে পূর্ববঙ্গীয় ভাষা বড়ই মিঠে শোনায়। সিতারার স্বামী জীবন শেখের চরিত্রে ফজলুর রহমান এবং মানবের চরিত্রে সুব্রত যথাযথ। ছোট একটি চরিত্রে পার্থসারথি দেব তাঁর স্বকীয় স্টাইল বজায় রেখেছেন। কবীরের ব্যবসার আরেক ঘুঁটি লক্ষণার চরিত্রটি চিত্রনাট্যের দাবী অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন মেঘনা। নয়নার ভূমিকায় শিশুশিল্পী নৈরতা মজুমদারের উপস্থিতি ভালো লাগবেই। 

পুনরায় চালু হবে ইলোরা, জানিয়ে দিল মালিকপক্ষ

ভালো কাহিনী ও একঝাঁক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী থাকা সত্বেও কোথাও যেন গল্পটা তেমন জমাতে পারলেন না পরিচালক। অন্ধকারটা রয়েই গেল, ভোরের জন্ম যেন হতে গিয়েও হল না। গোটা ছবি জুড়েই মনে রেখে দেওয়ার মত এমন কোনও দৃশ্য নেই।

ছবির দৃশ্যায়নেও বেশ কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়ল। চোরাচালানের সময় গাড়ি থেকে সিতারার পালিয়ে যাওয়া কেন এবং কিভাবে তা জানা গেল না। দিলুর সঙ্গে সিতারার সম্পর্কের মাপকাঠিও বোধগম্য নয় যদিও ছবির একটি দৃশ্যে মানবের প্রেমে মশগুল সিতারা জানাচ্ছে যে সে সারাজীবনে দিলুকেই সবথেকে বেশি ভালোবেসেছে। অন্য একটি দৃশ্যে সিতারার বাবাকে দেখানোর পর তাকে আবার দেখানো হয় তার মৃত্যুর দৃশ্যে। মাঝখানের দৃশ্যগুলিতে সিতারার বাবা কোথায়?

কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তে শুরু হচ্ছে নতুন ধারাবাহিক

‘সিতারা’র সঙ্গীত পরিচালনায় দায়িত্বে ছিলেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। কালিকাপ্রসাদের অকালপ্রয়াণে সেই দায়িত্ব কাঁদে তুলে নেয় তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বাংলা গানের দল ‘দোহার’। ছবির গানগুলি খুবই শ্রুতিমধূর। বিশেষ করে শুরুতেই ঋষি চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘ও মন রে’ গানটি ভালো লাগবেই।

একাধিক খুঁত থাকা সত্বেও একবার অন্তত ছবিটি দেখার যথেষ্ট কারণ আছে। ছিন্নমূল, প্রান্তিক মানুষদের দিনযাপনের গল্প নিয়ে খুব বেশি ছবি তৈরি হয় না। একা একটি মেয়ের সারাজীবন বেঁচে থাকার লড়াই ও সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে প্রতিটি মানুষের চৌকাঠ থেকে ঠোক্কর খেতে খেতে সেই মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলে ‘সিতারা’।প্রতিশোধ স্পৃহার আগুনে পুড়তে থাকা সিতারার যন্ত্রণার সাক্ষী হতে আর শেষ দৃশ্যের চমকটা জানতে হলে এই ছবি দেখাই যায়। আর যাই হোক, প্রায় চল্লিশ বছর আগে লেখা ‘ভোরের প্রসূতি’র চরিত্রগুলির জীবনযুদ্ধে পরিবর্তন আসেনি এতটুকু। বরং তা কঠিন হয়েছে আরও।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *