রক্তসঞ্চালন নয়, হৃদয়ের কথা বলে

ছবি: হৃৎপিণ্ড

পরিচালনা: শিলাদিত্য মৌলিক

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট

অভিনয়ে: অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, প্রান্তিক বন্দোপাধ্যায়, অনন্যা সেনগুপ্ত, অনুভব কাঞ্জিলাল, অভি মিত্র, দীপান্বিতা হাজারি, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, প্রদীপ চক্রবর্তী

RBN রেটিং: ৩.৫/৫

লোকে বলে, মন নিয়ে কেউ বাঁচে না। মন চলে নিজের মতে। বিশেষ করে সাহিত্যপ্রেমী মানুষদের কাছে মন, হৃদয়, অনুভূতি, আবেগ এসবের গভীর বিশ্লেষণ আছে। তবে বায়োলজি নিয়ে চর্চা করেন যাঁরা, তাঁদের কাছে হৃৎপিণ্ডের সমার্থক হৃদয় হয় কি? শিলাদিত্য তাঁর নতুন ছবি ‘হৃৎপিণ্ড’তে সেই ব্যাখ্যা ধরেই এগিয়েছেন।



আর্যা (অর্পিতা) কলেজের অধ্যাপিকা। তার বিষয় জীববিজ্ঞান। পড়ুয়াদের কাছে সে বেশ জনপ্রিয়। আর্যা অনেক পড়ুয়াদেরই ক্রাশ। তবে শিক্ষিকা হিসেবে আর্যা বেশ কঠোর। ক্লাসে দেরি করে আসা, অমনযোগী হওয়া তার একেবারেই পছন্দ নয়। প্রথমদিন ক্লাসে ঢুকেই সে বিবরণ দিয়ে দেয়। বিপত্তি বাধে যখন আর্যা হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা নিয়ে ক্লাস নিতে শুরু করে। সে যতই বোঝাক যে হৃৎপিণ্ডের কাজ শুধুমাত্র রক্তসঞ্চালন করা, জনৈক পড়ুয়া আর্যাকে নিজের হৃদয়ের কথা বলতে থাকে। ছাত্রটির যুক্তি, উইলিয়ম শেক্সপিয়র বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে এত শত কাব্য, কবিতা রচনা করেছেন, তা তো হৃদয় দিয়েই। তাহলে হৃৎপিণ্ডের কাজ শুধুই রক্ত সঞ্চালন করা, এ কথা বলা যায় কি?

আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ

সেদিন ছাত্রটিকে ক্লাসরুমের বাইরে বের করে  দিয়ে আর ক্লাস নেওয়ার মতো মানসিকতা ছিল না আর্যার। বাড়ি ফেরার সময় সেই ছাত্রটি তার পিছু নেয়। সেই পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে যায় আর্যা। তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে গিয়ে এক সাংঘাতিক পথদুর্ঘটনার কবলে পড়ে আর্যা।

আর্যার পুরেনো স্মৃতি নিয়ে চিত্রনাট্য এগিয়ে যায়। সাংঘাতিক সেই দুর্ঘটনায় আর্যার বিপরীতমুখী স্মৃতি লোপ পায়। ডাক্তার তাকে সাইকায়াট্রিক ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি পরিবেশ পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। এই পরিস্থিতিতে সবথেকে মুশকিলে পড়ে আর্যার বাবা ও তার স্বামী সোমক (সাহেব)। দুর্ঘটনার পর আর্যা ভুলে যায় সে বিবাহিতা, অধ্যাপিকা। সে হয়ে ওঠে এক কিশোরী। তার মনে আসে স্কুলের বন্ধু বাবলু, বাচ্চু, পান্ডব গোয়েন্দার কথা। হাসপাতাল থেকেই সে তার স্কুলবেলার প্রেমিক ঋককে (প্রান্তিক) ফোন করে।

আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি

অযথা জোর করে কিছু মনে করানোর চেষ্টা আর্যার ওপর চাপ সূষ্টি করতে পারে, এমনটা ভেবে সকলে মিলে তাকে পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছে যায় ঋক। আর্যাকে নতুন করে পাওয়ার স্বপ্নটা যেন পুনর্জন্ম নেয় তার হৃৎপিণ্ডে। স্বামী না পুরনো প্রেম, কোনটা পরিণত হবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এগিয়ে যায় ‘হৃৎপিণ্ড’-এর চিত্রনাট্য।

চিত্রনাট্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মিশে গেছে ‘কেন রোদের মতো হাসলে না’ গানটি। অরুণাচলের স্নিগ্ধ সবুজ পাহাড়ে গানটা যেন বারবার হদয়ের কথাই বলে। গানের কথা লিখে ও সুর দিয়ে রণজয় ভট্টাচার্য তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।

আরও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র

অভিনয়ের নিরিখে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন অর্পিতা। তিনি এ ছবির প্রাণ। ছবি দেখতে-দেখতে মনে উঁকি দিতেই পারে ‘বরফি’র প্রিয়াংকা চোপড়া বা ‘সদমা’র শ্রীদেবীকে। না, শিলাদিত্যের ‘হৃৎপিণ্ড’ ওই চেনা গল্পগুলোর মতো নয়। আর্যা এখানে কোনও বিরল রোগে আক্রান্ত নয়। তার কেবল স্মৃতি নষ্ট হয়েছে, যা একদিন ফিরে আসবেই। তাই আর্যার বিশেষ কোনও বিষয় ভুলে যাওয়া, পাশাপাশি কিছু বিশেষ ঘটনা মনে রাখা শুধু গল্পের জন্যেই তৈরি হয়েছে বলে মনে হতে পারে।

আর্যার স্বামীর চরিত্রে সাহেব অসাধারণ। যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই মার্জিত উপস্থাপনা তাঁর। সোমক হোক কিংবা শামুখ আঙ্কল, দু’ভাবেই বেশ পরিণত তিনি।

আরও পড়ুন: শেষ যাত্রায় ব্রাত্য, পথ হেঁটেছিলেন মাত্র কয়েকজন

প্রান্তিক এ ছবিতে অদম্য প্রেমিক। একটি দৃশ্যে তাঁর বুকফাটা কান্না মন খারাপের কারণ হয়ে উঠবে অনেকেরই।

এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অনন্যা, অনুভব, অভি, দীপান্বিতা, সুব্রত ও  প্রদীপ নিজেদের ছাপ রেখেছেন।

এ ছবি আশাহত করবে না। পাশাপাশি অরুণাচলের পাহাড়ী সৌন্দর্য আরাম দেবে চোখকে। এ কথা বলাই যায়, কোনও এক মনকেমনের জন্মদিনে অনেকের হৃদয়েই প্রশ্ন জাগবে ‘কেন রোদের মতো হাসলে না।’




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Angana

A traveler and a lover with a musical heart. An avid reader and writer. Reads anything that falls on her hands. Has an analytical mind and is highly opinionated

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *