সরল হওয়া কি বেমানান?

ছবি: শ্রীমতী

পরিচালনা: অর্জুন দত্ত

দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট

অভিনয়ে: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী, বরখা বিস্ত সেনগুপ্ত, তৃণা সাহা, খেয়া চট্টোপাধ্যায়, উদয় প্রতাপ সিং, দেবযানী চট্টোপাধ্যায়

RBN রেটিং: ৩.৫/৫

মানুষের মনে জটিলতার শেষ নেই। এরকমই  অনেক কথা ছোট থেকে প্রায় সবাইকে শেখানো হয়। তাই তো একজন উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত, সুন্দরী মহিলার মন সহজ, সরল হলে তিনি হয়ে পড়েন বেমানান। নাকি তার মন জটিলতাবিহীন বলে সে হয়ে দাঁড়ায় হাসির কারণ? এ ধরণের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত। শারিরীক আকৃতি হোক বা মানসিক সরলতা, এসব নিয়ে কর্মক্ষেত্রে, স্কুল, কলেজে, পরিবারে কখনও না কখনও কেউ না কেউ অপমানের শিকার হয়। এভাবে ক্রমাগত সমাজের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে তাঁরা হয়ে পড়েন কোণঠাসা বা অবসাদের শিকার। এ ধরণের অপমান মেনে নিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করার কোনও প্রয়োজন আছে কি? ‘শ্রীমতী’তে অর্জুন সেই উত্তরই দিলেন ।



স্বামী, সন্তান, শাশুড়ি, ননদকে নিয়ে শ্রীমতীর সুখের সংসার। সে সংসার করার পাশাপাশি রান্না করতে ভালোবাসে। রকমারী বিভিন্ন স্বাদের নিত্যনতুন রান্নার তোড়জোড় চলতে থাকে তার রান্নাঘরে। এই সমস্ত কাজে তার একমাত্র সর্বক্ষণের সঙ্গী কাজল। শ্রীমতীর এই শখের অনুঘটক হিসেবে আরও একজন আছে। প্রসিদ্ধ রন্ধনশিল্পী এবং লেখিকা রেবা দে’র ভীষণ কাছের মানুষ শ্রীমতী। প্রতিদিন সে যা নতুন রান্না করে, একটা টিফিন বক্সে ভরে রেসিপি সহ তার রেবাদিকে পাঠিয়ে দেয়।

বাড়ির সবাই শ্রীমতীকে ভীষণ ভালোবাসে। তবু সারাজীবন রান্নাঘর আর সংসারে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য তারা শ্রীমতীকে মাঝেমধ্যে দোষও দেয়। কলেজের জুনিয়র, বয়সে ছোট অনিন্দ্যকে বিয়ে করার কারণে লোকের কাছে শুনতে হয় সে তার দিদি। কথাটা হাসির ছলে বলা হলেও শ্রীমতীর মনে মেঘ জমে।

আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ

এরই মধ্যে অনিন্দ্যের অফিস পার্টিতে শ্রীমতীর সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে অপমান করে মল্লিকা সেন ও তার বন্ধুরা। আর নিতে পারে না শ্রীমতী। চেষ্টা করে ঘুরে দাঁড়ানোর। শরীরচর্চা, নাচ, ডায়েট এসবের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। অনিন্দ্য-শ্রীমতীর চেনা ছন্দের তাল কাটতে থাকে।

আবারও অনবদ্য স্বস্তিকা। ছবির নামভূমিকায়, একদম অন্য ধরণের একটি চরিত্রে পাওয়া গেল তাঁকে। বরাবরের মতোই বলিষ্ঠ অভিনয়ের মাধ্যমে গোটা ছবি জুড়ে মন জয় করলেন তিনি। প্রায় সব দৃশ্যে তাঁর অভিনয় অত্যন্ত সাবলীল। স্বস্তিকার বিপরীতে সোহমের অভিনয় প্রশংসনীয়। পরিচিত গন্ডির বাইরে এ এক অন্য সোহম। ভবিষ্যতে এরকম ব্যতিক্রমী চরিত্রে তাঁকে দেখার ইচ্ছে বেড়ে গেল।

আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান

এই প্রথম বড়পর্দায় অভিনয় করলেন তৃণা। ভালো লাগে তৃণা ও স্বস্তিকার ননদ-বৌদির রসায়ন। জিম ইন্সট্রাক্টর সিডের চরিত্র উদয় যথাযথ। মল্লিকার ভূমিকায় বরখা ভীষণ জীবন্ত। কাজল হিসেবে খেয়াকে বেশ মিষ্টি লেগেছে। কাজলের চোখে তার বৌদি সবার থেকে আলাদা, ভীষণ সুন্দরী। সৌম্য ঋতের সুরে, সোমলতার কণ্ঠের গানটিও ছবির সঙ্গে ভীষণ মানানসই।

ভীষণ সহজ, সরল গল্প বলেছেন অর্জুন। তাঁর ‘অব্যক্ত’ বা ‘গুলদস্তা’র থেকে এই ছবি একদমই আলাদা। সংসারকেন্দ্রিক একজন মহিলা কোনওভাবেই বেকার বা গুড ফর নাথিং নন। গুছিয়ে সংসার করতে গেলেও অসাধারণ হতে হয়। বডি শেমিং বা নারীবাদ নিয়ে অযথা কচকচানির পথে হাঁটেননি অর্জুন। তাঁর বক্তব্য সহজ। একজন মানুষ কীভাবে নিজের জীবনকে চালনা করবেন, সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সমাজ কাউকে বদলানোর জন্য তাঁর দিকে কোনওভাবেই আঙুল তুলতে পারে না। আর তুললেও কিছু এসে যায় না। অর্জুনের ছবির সারসংক্ষেপ এটাই।

আরও পড়ুন: ঋষিকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রাজেশ?

তবে সিডের বক্তব্যের সঙ্গে নিজের ভাবনার মিল না পেয়ে হঠাৎ করে শ্রীমতীর পরিবর্তন হওয়ার ঘটনা তাড়াহুড়ো বলে মনে হয়। দর্শককে বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী বেলা দে’র নাম মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অর্জুনকে ধন্যবাদ।

‘শ্রীমতী’ যে কোনও শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছবি। প্রতিটি চরিত্রই দর্শকের পরিচিত। বাঙালি যতই আন্তর্জাতিক হোক, সরলতার রেশটা এখনও তার মধ্যে রয়ে গেছে। সেটাই মনে করিয়ে দিল এই ছবি।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *