ইতিহাস ও ধাঁধার গোলকধাঁধায়
ছবি: কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন
পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়ে: আবীর চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী, ইশা সাহা, সৌরভ দাস, বরুণ চন্দ, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, কিঞ্জল নন্দ, অনুরাধা রায়,অনিন্দিতা সরকার, রজতাভ দত্ত, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত
দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ৮ মিনিট
RBN রেটিং: ৩/৫
রহস্য বরাবরই বাঙালি পাঠক ও দর্শককে আকর্ষণ করে। সেই কারণেই বোধহয় বাংলায় বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য রহস্য গল্প লেখা হয়েছে এবং হয়ে চলছে। আর রহস্যের সঙ্গে যদি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে বাংলার ইতিহাস, তাহলে তো কথাই নেই। এরকমই এক রহস্যপিপাসু মানুষ হলেন ইতিহাসের অধ্যাপক সুবর্ণ সেন (আবীর)। ইতিহাসের আদিম গহ্বরে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন খুঁজে বের করাই তার নেশা। সঙ্গী হিসেবে থাকে ভাইপো আবির (অর্জুন) ও তার বান্ধবী ঝিনুক (ইশা)। শাহ সুজা ও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রর গুপ্তধন খুঁজে বের করার পর সোনাদার এবারের অভিযান কর্ণসুবর্ণে।
বাংলার প্রথম স্বতন্ত্র রাজা শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। থানেশ্বররাজ হর্ষবর্ধনের সঙ্গে যুদ্ধের সময় শশাঙ্ক তাঁর মন্ত্রীকে কিছু ধনসম্পদ লুকিয়ে রাখার আদেশ দেন। রাজার আদেশমতো এক পাহাড়ী জনপদ রোহিতাশ্বগড়ে মন্ত্রী লুকিয়ে রাখেন সেই বিপুল ধনরাশি। এ কাজের জন্য তিনি জনক নামের এক অসামান্য কারিগরকে নিয়োগ করেন। সেই সময় ভারতে ভ্রমণরত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাংয়ের সংস্পর্শে এসে জনক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে অসাধারণ বীর, প্রজাবৎসল শশাঙ্ক ছিলেন বৌদ্ধধর্ম বিরোধী। ফলে রাজার কাছ থেকে জনকের ধর্মীয় পরিচয় লুকিয়ে রাখেন মন্ত্রীমশাই।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
এরপর বহু যুগ কেটে যায়। হঠাৎই একদিন এক প্রত্নতাত্ত্বিক, দিগম্বর বন্দ্যোপাধ্যায় রোহিতাশ্বগড়ে লুকিয়ে থাকা সেই গুপ্তধনের হদিশ পান। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তার এই খোঁজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবু তিনি যতটুকু খোঁজ পেয়েছিলেন, তা ধাঁধার মাধ্যমে একটি ডায়েরিতে লিখে যান। পরবর্তীকালে তার ছেলে বিশ্বম্ভর (বরুণ চন্দ) সেই ডায়েরি খুঁজে পেলেও একটি ধাঁধারও মর্মোদ্ধার করতে অক্ষম হন। ইতিমধ্যে একটি বইয়ে নিজের পুরোনো বন্ধু অখিলেশ মজুমদারের (কমলেশ্বর ) লেখা সোনাদার গুপ্তধন খোঁজার গল্পগুলি পড়ে তিনি তাকে রোহিতাশ্বগড়ে ডেকে পাঠান। এরপরই সোনাদা, আবির আর ঝিনুক নেমে পড়ে নতুন ইতিহাসের খোঁজে।
ফেলুদার গল্পে বারবার ফিরে এসেছিলেন মগনলাল মেঘরাজ। এখানেও ফের ফিরে এলেন সোনাদার দুর্ধর্ষ দুশমন দশানন দাঁ (রজতাভ)। জেল থেকে বেরিয়ে দশানন এখন কুখ্যাত চোরাচালানকারী। দেশের বহুমূল্যবান সম্পদ বিদেশে পাচার করাই তার পেশা। এই কাজে তাকে সাহায্য করে রোহিতাশ্বগড়ের ভুজঙ্গ হাজরা (সৌরভ)।
আগের দুটি ছবির মতোই ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ও ইতিহাসে ভরপুর। এবারও জটিল ধাঁধার জাল কেটে ধীরে-ধীরে গুপ্তধনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তবে এই ছবিতে সোনাদা যেন ধাঁধাগুলি খুব সহজেই সমাধান করে ফেলে। ধাঁধার গোলকধাঁধায় হারিয়ে সেগুলো নিয়ে তাকে বিশেষ পড়াশোনা বা চিন্তাভাবনা করতে দেখা গেল না। এছাড়া বেশ কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্যে ধীর স্থির সোনাদার নায়কোচিত হাবভাব মানানসই নয়।
আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার
অভিনয়ের দিক থেকে প্রত্যেকেই যথাযথ। তবে দশাননের চরিত্রে কমেডি কিছুটা কম থাকলে ভালো হতো। বিক্রম ঘোষের পরিচালনায় ছবির আবহসঙ্গীত জমে গেছে এবারেও। ইতিহাস সংক্রান্ত বিপুল পড়াশোনার ছাপ পাওয়া গেল চিত্রনাট্যে। যার ফলে ছবির ভালো লাগাটা বেড়ে যায় অনেকটাই। ছবিতে ব্যবহৃত ভিএফক্সের কাজও বেশ উচ্চমানের।
পুজোর শুরুতে ইতিহাসের গন্ধে ভরপুর ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ ছোট থেকে বড় সকলেরই ভালো লাগার জায়গায় স্থান করে নেবে।