তরুণবাবুর ছবিতে গান গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেত: শিবাজী
RBN Web Desk: তাঁর ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল গান, বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত। এমনকি শেষ যাত্রায় তাঁর বুকের ওপরে রাখা ছিল ‘গীতাঞ্জলি’। আজীবন সঙ্গীতপ্রিয় তরুণ মজুমদারের ছবিতে গান গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেত, এমনটাই বললেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী শিবাজী চট্টোপাধ্যায়। ৪ জুলাই ৯২ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তরুণবাবু।
১৯৮৫ সালে ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবির মাধ্যমে তরুণবাবুর সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন শিবাজী। তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল সেই ছবির গান। আকাশবাণীর ‘অনুরোধের আসর’-এ ‘ভালবাসা ভালবাসা’র গান বাজানোর জন্য নিয়মিত চিঠি আসতো ডাকযোগে।
“স্বর্ণযুগের শেষ পরিচালকও চলে গেলেন,” রেডিওবাংলানেট-কে বললেন শিবাজী। “এমন ছবি বানাতেন যা শহরে হোক বা গ্রামে, সবাই দেখতো। কোনও কঠিন বিষয় নয়, তিনি বিশ্বাস করতেন, এমন ছবি বানাবেন যা সকলে দেখবে। গানের খুব বড় ভূমিকা থাকতো তাঁর ছবিতে। তিনি বিশ্বাস করতেন গান হলো চিত্রনাট্যের অংশ। তাঁর ছবিতে কোনও গান বিনা কারণে আসেনি। একটা করে গান গল্পকে কিছুটা এগিয়ে দিত। ওই জায়গায় গানটা না থাকলে ওঁকে হয়তো আরও চারপাতা চিত্রনাট্য লিখে গল্পটাকে ওই জায়গায় আনতে হতো। এইভাবে ওঁর প্রতি ছবিতে গান বারবার এসেছে।”
আরও পড়ুন: খুব ভালো অভিনয়ও করতেন, বললেন তাঁর অভিনেতারা
তরুণবাবুর ‘পথভোলা’, ‘আগমন’, ‘সজনী গো সজনী’ সহ আরও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন শিবাজী।
“অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ওঁর ছবিতে আমি মিউজ়িক করব,” বললেন শিবাজী। “এরকম বহুবার হয়েছে, কোনও ছবির জন্য গান তৈরি করেছি, গল্পও তৈরি। কিন্তু প্রযোজক না পাওয়ায় ছবি বন্ধ হয়ে গেল। অবশেষে ‘আলো’ ছবিতে সুযোগ এল। তরুণবাবু বললেন, এখানে কিন্তু সবই রবীন্দ্রসঙ্গীত। আমি বললাম, তাতে কী হয়েছে? রবীন্দ্রনাথের গান হলে তো আরও ভালো। আমার কতদিনের ইচ্ছে আপনার ছবি দিয়ে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করব। উনি বললেন, বেশ তাই হোক, আমি চাই আপনি আর অরুন্ধতি (হোমচৌধুরী) দুজনে মিলে আমার ছবিতে কাজ করুন।”
আরও পড়ুন: ঘাট সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ুক, তথ্যচিত্রে উদ্দেশ্য দুই তরুণীর
পরে তরুণবাবুর ‘ভালোবাসার অনেক নাম’, ‘চাঁদের বাড়ি’র মতো ছবিতে সুর করেন শিবাজী।
“দুটো ছবি হওয়ার কথা ছিল। একটার নাম ‘জন্মদিন’, অন্যটা ‘জনপদবধূ’। ওই দুটো ছবির সব গান তৈরি হয়ে গিয়েও শেষে ছবি দুটো আর হয়নি। বর্তমানে যে সব গান তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে কিছু ভালো গান থাকলেও দুঃখের বিষয় তাদের স্থায়ীত্ব বড় কম। আমি তো বলব এ আমার সৌভাগ্য যে ৩৭ বছর আগের গাওয়া গান ‘খোঁপার ওই গোলাপ দিয়ে মনটা কেন এত কাছে আনলে’ এখনও মানুষ মনে রেখেছেন। সেই গোলাপ আজও শুকিয়ে যায়নি,” বললেন শিবাজী।
ছবি: ইউটিউব