আমার কাছে সত্যজিৎ রায় অনেক বেশি কমার্শিয়াল: সুজিত সরকার

কলকাতা: অন্য অনেক পরিচালকের থেকে সত্যজিৎ রায় তাঁর কাছে অনেক বেশি কমার্শিয়াল। গতকাল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা দিতে এসে এমনটাই বললেন বিশিষ্ট পরিচালক সুজিত সরকার। এবারের বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘বাউন্ডলেস রায়’ বা সত্যজিতের সীমাহীনতা। 

ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ‘পথের পাঁচালী’ দেখতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি, জানালেন সুজিত। পরে, স্কুলের শেষের দিকেও ছবিটা দেখে উঠতে পারেননি তিনি। তারপর নাটকের দলের সঙ্গে কাজ করার সময় সত্যজিৎকে প্রথম চিনতে শেখেন সুজিত। একটা সময়ের পর সত্যজিৎকে নিজের কাজের জগতের বাইবেল হিসেবে মেনে চলতে থাকেন তিনি।

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে বাংলা ছবি, থাকছেন মিমি-দেব

“আমার অফিসে ঢুকতেই সত্যজিতের একটা বড় কাটআউট আছে। আমার কাজের জগতের অনেকেই সেই ছবিটা দেখে বলেন, ইনি তো সত্যজিৎ রায়, বাঙালি পরিচালক। আমি ভুল শুধরে দিয়ে বলি, বাঙালি নয়, আন্তর্জাতিক পরিচালক,” বললেন সুজিত।

এমনকি কারও সঙ্গে কাজ করার আগে তিনি এও জানতে চান সেই শিল্পী সত্যজিতের কোনও ছবি দেখেছেন কিনা। যদি তিনি সত্যজিৎ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হন, তাহলে সুজিত পারতপক্ষে তাঁর সঙ্গে কাজ করেন না।

উল্লেখ্য, সুজিত পরিচালিত ‘পিকু’ ছবিতে পিকুও এমন কোনও ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি যে সত্যজিতের কোনও ছবি দেখেনি।

আরও পড়ুন: শিক্ষিকার ভূমিকায় অর্পিতা, প্রেক্ষাগৃহে আগামী মাসে

সুজিতের মতে কেউ যদি বলেন সত্যজিতের ছবি দুর্বোধ্য তাহলে তিনি আশ্চর্য হন। “সত্যজিতের ছবির মতো বাস্তব দৃশ্য খুব কম ছবিতেই পাওয়া যায়। বরং ২০ ফুট উঁচুতে গাড়ি উড়ে যাওয়া বা রেগে গিয়ে পুলিশ অফিসারের শার্ট ছিঁড়ে মাংসপেশি প্রদর্শনকে আমার অবাস্তব মনে হয়। তার চেয়ে কোনও ঘটনায় স্বাভাবিক যে প্রতিক্রিয়া সেটা দেখানোই আমার কাছে সবচেয়ে বাস্তব। তাই সত্যজিতের ছবি এই ধরণের ছবিগুলোর থেকে আমার কাছে অনেক বেশি কমার্শিয়াল,” বললেন তিনি।




সত্যজিতের ছবিগুলোয় ক্যামেরা কোথায় ছিল বা দৃশ্যটা কীভাবে তোলা হয়েছে এই বিষয়গুলির থেকেও ওঁর গল্প বলার ধরণটা শেখা অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করেন তিনি। “গুপী গাইন বা হীরক রাজার কথা বলতে গিয়ে সকলে রাজনীতির কথা বলেন। কিন্তু আমার কাছে এই ইমেজারিটা অনেক বেশি ছাপ রেখে যায়, যখন আমরা দেখি শুন্ডিতে কেউ কথা বলতে পারে না। সেখানে সব আছে। ফুল, ফল, সুর সব। নেই হিংসা, যুদ্ধ।  এই সর্বোচ্চ সুখে তো মৌনতাই একমাত্র কাম্য,” বললেন সুজিত।

সত্যজিতের ছবিতে তিনি একাই চিত্রনাট্য, সুর, কস্টিউম বা আরও নানা বিভাগের কাজ নিজে হাতে করতেন, একে শুধুমাত্র তাঁর বহুমুখী প্রতিভা বলতে চান না সুজিত। তাঁর মতে তিনি যা চান তা অন্যকে বুঝিয়ে কাজটা পাওয়া যতটা কঠিন তার চেয়ে নিজে সেটা বানিয়ে নেওয়াই তাঁর শ্রেয় মনে হতো। 

ছবি: গার্গী মজুমদার



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *