ঘাট সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ুক, তথ্যচিত্রে উদ্দেশ্য দুই তরুণীর
কলকাতা: এ শহরে হুগলি নদীর পার বরাবর ঘাটের সংখ্যা কমবেশি ৩০। এক প্রিন্সেপ ঘাট ছাড়া, কালের নিয়মে প্রায় প্রত্যেকটিরই বর্তমানে ভগ্নপ্রায় অবস্থা। কোনওটির চূড়া ভেঙে তৈরি হয়েছে বেআইনী নির্মাণ আবার কোনওটি চলে গেছে ফুল ব্যবসায়ীদের দখলে। কলকাতার বিভিন্ন ঘাটের সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতেই ‘দ্য ডাইং ঘাটস অফ ক্যালকাটা’ নামক তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন শহরের দুই তরুণী আত্রেয়ী বসাক ও পৌলমী আঢ্য। গতকাল শহরে তাঁদের ছবি নিয়ে বক্তব্য রাখলেন দুজনে।
“ইন্দো-ইউরেপিয়ান স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ছিল ঘাটগুলি,” বললেন পৌলমী। “এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘাট কাস্ট আয়রন দিয়ে তৈরি। এই লোহা আনা হতো বিলেত থেকে। আর্মেনিয়ান ঘাটে এরকম লোহার তৈরি তোরণ ও ফটক আজও দেখা যায়। তবে বাইরে থেকে তা দেখতে পাওয়া সম্ভব নয় কারণ গোটা এলাকাটাই এখন দখলদারদের কবলে।”
আরও পড়ুন: বাবার ছবির সংরক্ষণ নিয়ে হতাশ স্বস্তিকা
জগন্নাথ ঘাটে ছবির শ্যুটিং করতে গিয়ে পৌলমী ও আত্রেয়ী জানতে পারেন মূল ঘাটটি ছিল বর্তমান স্থান থেকে অনেক দূরে। “প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন ছিল ঘাটটি,” জানালেন আত্রেয়ী। “হুগলি নদী দিক পরিবর্তন করার ফলে আগের ঘাটটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে বর্তমান জগন্নাথ ঘাটটি নির্মাণ করা হয়।”
কেন নির্মাণ করা হতো এত সব ঘাট।
“এই ঘাটগুলি ছিল বিত্ত ও প্রতিপত্তির প্রতীক,” বললেন পৌলমী। “তখনকার কলকাতার বিত্তশালী পরিবারগুলি পরবর্তী প্রজন্মকে তাঁদের কীর্তির কথা জানানোর জন্য ঘাটগুলি নির্মাণ করতো। নদীবক্ষে অনেক দূর থেকে এই ঘাটগুলি দেখা যেত। তাছাড়া সামাজিক উদ্দেশ্যও ছিল। যেমন, শুধুমাত্র মহিলাদের স্নানের জন্য সুরক্ষিত জেনানা ঘাটটি তৈরি করা হয়।”
আরও পড়ুন: ১২ বছর পর বাংলা ছবিতে বরখা
আত্রেয়ী বললেন, “কলকাতার প্রত্যেকটি ঘাটের আশু সংষ্কার প্রয়োজন। ঘাট সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই ‘দ্য ডাইং ঘাটস অফ ক্যালকাটা’ তৈরি করেছি আমরা। ঘাটগুলি সত্যিই মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে আছে।”
তথ্যচিত্রটি বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠাবেন বলে জানালেন দুই পরিচালক।
ছবি: প্রবুদ্ধ নিয়োগী