‘নকল’ মুকুলের দাবি মেনে শিক্ষিকাদের সরিয়ে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়
কলকাতা: তাঁর পরিচিতির শুরুতে বরাবরই একটা ‘নকল’ জুড়ে দেওয়া হয়, কিংবা ‘মিসটেক-মিসটেক’ বলে চিহ্নিত করা হয় চরিত্রটিকে। যদিও সে কারণে একটুও দুঃখিত নন ‘সোনার কেল্লা’ (Sonar Kella) ছবির দ্বিতীয় মুকুল চরিত্রের অভিনেতা শান্তনু বাগচী (Shantanu Bagchi)। “নকল শব্দের জন্য যদি সারাজীবন মানুষ মনে রাখে তাতে মন্দ কী?” স্পষ্ট জবাব শান্তনুর।
গতকাল শহরে সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) ‘সোনার কেল্লা’ ছবির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে শান্তনু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় (Siddhartha Chatterjee), কুশল চক্রবর্তী (Kushal Chakraborty) ও সন্দীপ রায় (Sandip Ray)। সেখানেই আড্ডার মাঝে উঠে এল ‘সোনার কেল্লা’ নিয়ে নানা কথা।
কীভাবে সুযোগ পেলেন তিনি সত্যজিতের ছবিতে?
শান্তনু জানালেন, “আমাদের স্কুলে বাংলার শিক্ষক ছিলেন পার্থ বসু। আমি কোনওদিনই খুব শান্ত ছেলে ছিলাম না। তাই কোনও শিক্ষক ডাকলে বুঝতাম কপালে দুঃখ আছে। একদিন পার্থদা বললেন, কাল আমি তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাব। আমি তো ভাবলাম, হয়ে গেল। বললাম, এখানেই বলে দিলে হয় না? আবার বাড়ি যাওয়ার কী দরকার! কিন্তু তিনি শুনলেন না। বাবাকে বলতে বাবাও আতঙ্কিত। তারপর সেদিন তিনি এলেন, বাবার সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বললেন। তারপর অবশ্য বকুনি খেতে হলো না। বরং বাবা বললেন, কাল তুমি ওঁর সঙ্গে যাবে। পরেরদিন মানিককাকুর (সত্যজিৎ) বাড়ি যেতে উনি দরজা খুলে আমাকে দেখই বললেন, আরে তুমি! আমিও বললাম, আরে তুমি! পার্থদা তো অবাক। তখন মানিককাকুই বললেন, আমরা আসলে পুরোনো বন্ধু।”
আরও পড়ুন: আবারও কানে ‘মন্থন’
আসলে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ (Goopy Gyne Bagha Byne) ছবিটি দেখার পর একবার সত্যজিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল ছোট্ট শান্তনুর। সেই সময় তিনি ছবির কিছুটা অংশ স্বয়ং পরিচালককে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় খুব আনন্দ পেয়েছিলেন সত্যজিৎ। সেই বয়সে শান্তনুর সত্যজিৎকে নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না । তারপর ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে দ্বিতীয় মুকুলের চরিত্রে তিনি নির্বাচিত হন।
বর্তমানে শান্তনু নিজে চিত্রপরিচালক। গতবছর মুক্তি পেয়েছে তাঁর হিন্দি ছবি ‘মিশন মজনু’। আগামীদিনে বাংলাতেও কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
আরও পড়ুন: হাতাহাতির গল্প শোনালেন অপরাজিতা
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে শান্তনু বললেন, “আমার একটা টানা সংলাপ ছিল। মানিককাকু সবটা বুঝিয়ে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমার ভয় করবে না তো? আমি বললাম, ভয় কেন করবে, তবে একটু অসুবিধা আছে। উনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী অসুবিধা? আমি বললাম, এই যে ক্যামেরার সামনে এই কথাগুলো বলব, পিছনে তো আমার টিচাররা দাঁড়িয়ে আছে, হেডমিস্ট্রেস আছেন। ওদের যদি একটু সরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আর কোনও অসুবিধা হয় না। উনি হেসে বললেন, চেষ্টা করে দেখছি।”
সত্যজিতের অনুরোধে শিক্ষিকারা সরে গিয়েছিলেন। তারপরেই শুট করা হয়েছিল সেই বিখ্যাত ‘মিসটেক-মিসটেক’ দৃশ্যটি।
এই দৃশ্যের পরবর্তী অংশের কথা শোনালেন সন্দীপ রায়। এতবড় সংলাপ শান্তনু আদৌ বলতে পারবেন কিনা সত্যজিতের আগে থেকেই চিন্তা ছিল। তাই ফেলু এবং অন্যান্য চরিত্রদের কিছু শট ভেবে রেখেছিলেন তিনি। প্রয়োজনে সংলাপ কেটে ছোট করে দেবেন এমনও ভেবে রেখেছিলেন। তবে শান্তনু এত দক্ষতার সঙ্গে সংলাপ বলেন এবং অভিনয় করে দেখান যে উপস্থিত সকলেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। দৃশ্যটি এক টেকেই ওকে হয়ে যায়।
তবে শুটিং শেষে শান্তনু খুব অবাক হয়ে সন্দীপকে প্রশ্ন করেছিলেন, কাকু আমাকে এত খোকা-খোকা ডায়লগ দিয়েছে কেন? স্মৃতিচারণ করলেন পরিচালক-পুত্র।
ছবি: আইএমডিবি