তুরুপের তাস প্রিয়াঙ্কা, বাকি শূন্য
ছবি: মুখোশে মানুষে খেলা
পরিচালনা: অরফিউস মুখোটি
অভিনয়ে: জয়দীপ চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার, সুব্রত দত্ত, অলোক সান্যাল, রাজর্ষি ঘোষ, সানন্দা ঘোষ, ত্রিপর্ণা বর্ধন
দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ১০ মিনিট
RBN রেটিং ★★★☆☆☆☆☆☆☆
বাংলায় এখন থ্রিলারের মরশুম! একের পর এক থ্রিলার ছবি মুক্তি পাচ্ছে! সব যে রমরমিয়ে চলছে তেমন নয়। তবু বিভিন্ন চরিত্রে ছক ভাঙছেন নায়ক-নায়িকারা। ছক ভাঙছেন পরিচালকেরাও। কোনও থ্রিলারে মিশছে কৌতুক, কোথাও যৌনতা তো কোথাও আবার হাড়হিম করা নৃশংসতা। সব মিলিয়ে, ছবি হিট করার প্যাকেজ খুঁজছে সবাই। সেই দৌড়ে ঠিক কতটা স্কোর করল ‘মুখোশে মানুষে খেলা’ (Mukhoshe Manushe Khela)?
ছবির শুরুতেই একটি কর্পোরেট বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। জয় সান্যাল (জয়দীপ) একজন দুঁদে ব্যবসায়ী। তিনি সৎ, পরিশ্রমী। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে তিনি নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। তার অফিসেই বিশেষ উপদেষ্টার পদে কর্মরত নন্দিনী (প্রিয়াঙ্কা)। জয়ের থেকে সে বয়সে ছোট। একদিন জয়ের কাছেই হয়েছিল তার কর্পোরেট জগতে হাতেখড়ি। পরিশ্রম ও মেধায় নন্দিনী আজ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। একের পর এক ডিল কীভাবে ক্র্যাক করতে হয় তা নন্দিনীর নখদর্পণে।
আরও পড়ুন: তাঁকে ছাড়া কাস্টিং অসম্পূর্ণ, বললেন তব্বু
ওদিকে রোহিত আহুজা কর্পোরেট জগতের নতুন মুখ হয়ে উঠছিল ক্রমশ। তরুণ মন, নতুন উদ্যম, রোহিতের কাজের ধারা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। রোহিতের জীবনযাপন এবং কাজের ধরণ জয়ের মানসিকতাকে আঘাত করছিল বারবার। এ নিয়ে একটা ঠান্ডা লড়াই ছিল দুই কোম্পানির মধ্যে।
নন্দিনীর কেরিয়ারগ্রাফ ছিল তুঙ্গে। ছোট থেকেই সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। জয়ের কোম্পানিতে মোটা অঙ্কের মাইনে পেলেও সে চুপি চুপি যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছিল রোহিতের সঙ্গে। সে কথা জানতে পেরে, জয় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। এরপরে রোহিতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জয়ের কোম্পানিকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে নন্দিনী। গল্পের মোড় ঘুরে যায় যখন হোটেলের ঘরে রোহিতের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কীভাবে খুন হলো রোহিত? এটা কি আদৌ খুন নাকি আত্মহত্যা? যদি খুন হয় তাহলে খুনি কে? একাধিক প্রশ্ন দানা বাঁধে চিত্রনাট্য জুড়ে। মামলার দায়িত্ব পড়ে পুলিশ অফিসার মানিকের (সুব্রত দত্ত) কাঁধে।
চিত্রনাট্য জুড়ে আবহ ও গান বেশ মাত্রা জুড়েছে ছবিতে। সংগীত পরিচালক কৌশিক ঘোষ ও শিল্পী অভিজিৎ বর্মণ (পটা) মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
ছবির চিত্রনাট্য বেশ নড়বড়ে। দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে প্রিয়াঙ্কা কেন এই ছবির জন্য রাজি হলেন? একাধিক সফল ছবি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। সম্প্রতি হাত পাকিয়েছেন ওয়েব সিরিজ়েও। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই ছবিতে অভিনয় করতে কেন তিনি রাজি হলেন বোঝা গেল না।
আরও পড়ুন: চিত্রনাট্য তৈরি, এবার কি বাঙালি পরিচালক?
ছবি দেখতে-দেখতে দর্শক হারিয়ে যেতে পারেন কোনও চেনা ক্রাইম ধারাবাহিকের মধ্যে। একটা পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি বানানোর জন্য যে বাহ্যিক পরিকাঠামোর প্রয়োজন, তা অনেকটাই এ ছবিতে অমিল। পরিচালক হয়তো ভেবেছিলেন এই ছবির তুরুপের তাস হবেন প্রিয়াঙ্কা। বলা বাহুল্য তিনি যতক্ষণ পর্দায় ছিলেন, কেবলমাত্র ততটুকু এই ছবি দেখার যোগ্য।
এমনিতেই বাংলা সিনেমা ঘিরে গেল-গেল রব। তার মধ্যে এরকম একটা ছবি দর্শককে আরও বেশি করে আশাহত করতে পারে। তার সব থেকে বড় কারণ হলো চিত্রনাট্য এবং ছবির গঠন। প্রিয়াঙ্কা ছাড়া প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংলাপেই জড়তা চোখে পড়বে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় জয়দীপের কথা। যিনি একাধারে এই ছবির গল্পকার, নির্মাতা ও অভিনেতা । তিনটি দিক একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলে মনে হয়। শেষরক্ষাও হয়নি।
আরও পড়ুন: সৌরভের বায়োপিকে তৃতীয়বার অভিনেতা বদল
ওদিকে হত্যাকারীকে ধরতে গিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সঙ্গে বসে এক টেবিলে চা খাওয়া, কার্যত পুলিশ অফিসারের চরিত্রটিকে হাস্যকর করে তুলেছে। একদম শেষে, বেশ কিছু সংলাপ শুধুমাত্র ছবিটি নামকরণের সার্থকতার জন্য জোর করে রাখা হয়েছে বলে মনে হয়।
কর্পোরেট রাজনীতি নিয়ে ছবি কম হয়েছে বাংলায়। কিন্তু এরকম প্রস্তুতিহীন একটি ছবি বেশ অনেকদিন পর চোখে পড়লে। তাই যারা পরিকল্পনা করেছেন এই ছবি দেখতে যাবেন, মনকে আগে প্রস্তুত করে নেবেন। শুধু প্রিয়াঙ্কার অভিনয় দেখতে চাইলে প্রেক্ষাগৃহে গেলে আশাহত হবেন না।