ভাইরাল হওয়ার নেশায়

সিরিজ়: প্র্যাঙ্কেনস্টাইন

পরিচালনা: সাগ্নিক (সোমু) চট্টোপাধ্যায়

অভিনয়: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, দীপ দে, রেমো, ঈপ্সিতা কুণ্ডু, শ্রীতমা রায়, রোহিনী চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর দত্ত, প্রিয়দর্শিনী দাশগুপ্ত, অয়ন্তিকা পাল, সোমনাথ ভট্টাচার্য

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

বিখ্যাত চার প্র্যাঙ্কস্টার বন্ধু মিলে একরাতের জন্য শহরের কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতে যাবে। কলকাতা থেকে মাত্র এক ঘন্টার দূরত্বে একটি নির্জন, পোড়ো রাজবাড়িতে রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। ভিকি, রুবেন, আরু এবং শিরিনের প্ল্যানমাফিক সবকিছু চললেও, হঠাৎ করেই এক অজ্ঞাত পরিচয় প্রৌঢ়ের আগমন ঘটে। একেবারে ছাপোষা সাধারণ মানুষটি নিজেকে তাদের একনিষ্ঠ ভক্ত বলে দাবি করে। তাঁরও ইচ্ছে হয় ওই প্র্যাঙ্কস্টারদের মতো বিপজ্জনক, বেপরোয়া কিছু কাজের ভিডিও তৈরি করে নেটাগরিকদের চর্চার পাত্র হয়ে ওঠার। চার তরুণ-তরুণীর কাছে তার ইচ্ছের কথা জানায় ওই ব্যক্তি। ঠিক হয়, সেদিন রাত্রে ওই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির মস্তিষ্কপ্রসূত কিছু কাজ তারা করবে এবং পুরো ঘটনার ভিডিও করা থাকবে একটি ‘প্র্যাঙ্ক’ হিসেবে। কথামতো পুরো কাজ সেরে ভিডিও ফুটেজ এনে তার হাতে তুলে দিতে হবে।



প্রথমে রাজি না হলেও চারজনেই কতকটা বাধ্য হয়ে ওই ব্যক্তির পাতা ফাঁদে পা দেয়। পণ হিসেবে চারজনের মধ্যে একজনকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে প্রৌঢ়। শর্ত এটাই, বাকি তিনজন তাদের কাজ সম্পন্ন করে ফিরে না আসা পর্যন্ত একটি জীবন ওই প্রৌঢ়ের কাছে গচ্ছিত থাকেব। বাকি তিনজন নিরুপায় হয়ে চলে যায়। শুরু হয় এক  অদ্ভুত খেলা এবং একটা সময়ের পর চারজনেই এক বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাল কথাটির সঙ্গে আজকাল সকলেই কমবেশি পরিচিত। যে কোনও উপায়ে, যা খুশি করে অনেকেই ভাইরাল হতে চায়। সাধারণ লোকের সঙ্গে  প্র্যাক্টিক্যাল জোক বা  প্র্যাঙ্ক করা হলো তার অন্যতম সহদ একটি উপায়। মানুষকে চমকে দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে এক অদ্ভুত আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু নিজেদের বেপরোয়া আনন্দ, মজার জেরে উল্টোদিকের মানুষটার ঠিক কতটা ক্ষতি হচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারে না অনেকেই। এই বেপরোয়া মনোভাবেই উঠে এল ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’-এ।

আরও পড়ুন: শিক্ষিকার ভূমিকায় অর্পিতা, প্রেক্ষাগৃহে আগামী মাসে

খুব সম্প্রতি, আমেরিকার একটি বিখ্যাত টেলিভিশন চ্যানেলে বেশ কিছু বছর ধরে চলেছিল একটি বিপজ্জনক গেম শো, নাম ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর‌’। তার প্রতিটি পর্বে প্রতিযোগীদের জন্য সাজানো থাকত ভয়ঙ্কর সমস্ত খেলা। সেইসময় জেন-এক্সদের কাছে ওই গেম শো দেখার অনুমতি পাওয়াটাই ছিল ভাইরাল বিষয়।

তবে এই প্রজন্ম যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। এখন এদের হাতের নাগালে অপর্যাপ্ত ডেটা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অভিনব চিন্তাভাবনা, হাতেনাতে নতুন কিছু করে দেখাবার স্পৃহা, সাহস ও জেদ।

আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ

খুব অল্প সময়ে, সামান্য খরচে এবং কম খেটে খ্যাতির চূড়োয় উঠতে গিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বেপরোয়া, বিপজ্জনক, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে সিদ্ধহস্ত এই প্রজন্মের অনেকেই। যার কাজে যত বেশি অভিনবত্ব, যত বেশি ঝুঁকি, তার ভক্তসংখ্যাও ততধিক। আর সেখান থেকেই লক্ষ্মীলাভ।

এই সময় দাঁড়িয়ে যে কোনও পরীক্ষামূলক  কাজ করা মানেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া। সাগ্নিকের প্রচেষ্টা ভালো। এই প্রজন্মকে মূল্যবোধের পাঠ কীভাবে দিতে হয়, তা তিনি জানেন। যোগ্য সঙ্গত করেছেন এক ঝাঁক নতুন মুখ। ভিকি, রুবেন, আরু ও শিরিনের চরিত্রে রেমো, দীপ, ঈপ্সিতা এবং শ্রীতমা যথাযথ।

আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি

সিরিজ়ের প্রতিটি পর্বে রয়েছে এক নতুন চমক। ছাপোষা সাদামাটা নির্লিপ্ত অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির চরিত্রে কৌশিক অসামান্য। তাঁর এই শান্ত, নির্লিপ্ত মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পিস্তলধারী চরিত্রটি এই সিরিজ়কে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। গৌরীর চরিত্রে রোহিনী চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় বেশ সাবলীল। তবে কৌশিকের সঙ্গে অভিনয় করার সময় রোহিনী যেন একটু হলেও যেন সচেতন। তা ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা ধরে রাখা সত্ত্বেও কিছু ছোটখাটো জিনিস চোখ এড়াল না। যেমন এত নির্জন, পোড়ো একটি বাড়ি যার বেশিরভাগ ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য, সেখানে খাটটি যেন সদ্য পালিশ করা। ঝাড়লন্ঠনটি একেবারে নতুন, চকচকে। অদ্ভুতভাবে গোটা রাজবাড়িতে শুধু ওই একটি ঘর ছাড়া কোথাও বিদ্যুৎ নেই। আবার অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষের হাতে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া সত্যিকারের পিস্তল থাকাটাও সমীচীন নয়।

অরিন্দম ভট্টাচার্যের চিত্রগ্রহণ অসাধারণ। রাজদীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের শব্দবিন্যাস বেশ ভালো। সিরিজ়ে রয়েছে রূপঙ্কর বাগচী ও দিশার কন্ঠে একটি করে গান।

ভাইরাল হওয়ার নেশায় কোনওকিছুই তোয়াক্কা করে না আজকের প্রজন্মের অনেকেই। তা যে কী বিপদ ডেকে আনতে পারে, সেটাই দেখা গেল ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’-এ।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Ankeeta

Sleep, travel, eat, repeat! Anchor, presenter, news reader, editor by profession. Long drives and exploring life are my favorite options. Stuck between food and fitness. Intoxicated by music. Painting, singing, photography and Rabindranath are my soulmates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *