সিনেমার শ্রেণীবিভাগ আদৌ সম্ভব? এল টক্সিক পৌরুষ প্রসঙ্গও

কলকাতা: ন্যাশনাল বা জাতীয় সিনেমা বলতে কী বোঝায়? আন্তর্জাতিক সিনেমাই বা কাকে বলে? সিনেমা অর্থাৎ ছবির মাধ্যমে কোনও বিশেষ গল্প বা ঘটনাকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই সিনেমাকে দেশকালের গণ্ডিতে বেঁধে দেওয়া কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? এই নিয়েই সেমিনার বসেছিল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব প্রাঙ্গণে। গতকাল শিশির মঞ্চে এই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব সুমন মুখোপাধ্যায়, প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান, নাট্য নির্দেশক গৌরী রামনারায়ণ, তথ্যচিত্র নির্মাতা ওপি শ্রীবাস্তব ওপি শ্রীবাস্তব এবং সিনে সমালোচকশৈবাল চট্টোপাধ্যায়। আলোচনার সূত্রধর ছিলেন স্বপন মল্লিক। 

এ দেশে যেমন বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ রয়েছেন তেমনই বিভিন্ন ভাষায় সিনেমাও তৈরি হয়। তাহলে ন্যাশনাল সিনেমা কাকে বলা হবে? ন্যাশনাল হয়ে উঠতে তাকে কি বিশেষ কোনও মাপকাঠিতে মাপা হবে? ব্যবসা, সংস্কৃতি নাকি রাজনীতি, কোনটা দিয়ে বোঝা যাবে একটা ছবি ন্যাশনাল কিনা। 

সূত্রধর হিসেবে প্রথমেই আলোচনার গতি প্রশ্নে ঘুরিয়ে দিলেন চিত্র সমালোচক স্বপন মল্লিক।  সুমনের বক্তব্যে জানা গেল, ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় থাকাকালীন তিনি দেখেছেন কীভাবে বাংলা বা অরুণাচল থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা হিন্দি শেখার চেষ্টা করত, কারণ হিন্দি ছবিতে সুযোগ পাওয়াটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। তাঁর ক্ষোভ, কেন সবাই হিন্দি সংস্কৃতি শেখার কারণে নিজের শিকড় ভুলে যাবে! একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া আর কীই বা বলা যেতে পারে। 

আরও পড়ুন: বাস্তুচ্যুত প্রান্তজন, নর্মদা ‘পরিক্রমা’য় দেখালেন গৌতম

যেখানে শুধু বাংলার ভেতরেই ভাষার এতরকম ভাগ সেখানে একটা দেশে কত ভাষা হতে পারে। কিসের ভিত্তিতে ভাগ করা হবে সিনেমাকে! ফিরদৌসুল বললেন তিনি মস্কোর রাস্তায় ‘জিমি জিমি আজা আজা’র মতো গান শুনেছেন ও দেশের মানুষের মুখে। তাহলে জাতীয় কোনটা আর আন্তর্জাতিক কোনটা।  

গৌরী রামনারায়ণ সাদা কালো যুগের ‘মীরা’ ছবির কথা মনে করিয়ে দিলেন। যেখানে দক্ষিণ ভারতের এম এস শুভলক্ষ্মী গান গেয়েছেন মীরার কন্ঠে। মীরা আদতে পশ্চিম ভারতের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। সেই ছবি দেখেছেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন এবং সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু। জাতীয়তাবাদ সম্ভবত একেই বলে। প্যান-ইন্ডিয়ান ছবি বলতে বর্তমানে এমন ছবিকে বোঝানো হয় যেখানে ছবিটি চার-পাঁচটি ভাষায় অনুদিত হয়ে দেখানো হচ্ছে এবং সারা দেশের কিছু ভাষার মানুষ সেই ছবি দেখে বুঝতে পারছেন। গৌরীর প্রশ্ন, সত্যজিৎ রায় বা মৃণাল সেনের ছবি কোন ভাষায় সেই নিয়ে তো কখনও মাথা ঘামাতে হয়নি। ছবির ভাষা যাই হোক সে ছবি দেখে যেন সকলেই বুঝতে পারেন, তবেই সে ছবির উদ্দেশ্য সার্থক। 

আরও পড়ুন: পরনে ‘ভালো থেকো’র শাড়ি, প্রথম ছবির স্মৃতিচারণে বিদ্যা বালন

শৈবাল চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে নিয়ে এলেন সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পুষ্পা ২’ (Pushpa 2) ছবির কথা। RRR বা পুষ্পা এই ধরনের ছবির ভেতর দিয়ে যেভাবে টক্সিক পৌরুষের জয়গান গাওয়া হচ্ছে তা কোনও সুস্থ সমাজের জন্ম দিতে পারে না। তবু একটা প্রজন্মের মানুষের এই ধরনের ছবিই ভালো লাগছে।

অর্থাৎ সার্বিকভাবে দেখতে হলে সিনেমার কোনও ভাগ হয় না। কোন আঞ্চলিকতা বা ভাষাও হয় না। সিনেমার ভাষা একটাই, সিনেম্যাটিক। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *