নেটপ্যাক সেরা ছবির শিরোপা পেল রণজিৎ রায়ের ‘পুতুলনামা’
কলকাতা: এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেটওয়ার্ক ফর দ্য প্রমোশন অফ এশিয়ান সিনেমা বা নেটপ্যাক সেরা ছবির পুরস্কার পেল রণজিৎ রায়ের ‘পুতুলনামা’ (Putulnama)। আজ উৎসবের শেষ দিনে বিভিন্ন বিভাগের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
পুতুল বা পাপেট্রি এক লুপ্তপ্রায় শিল্প। ভারতে মোটামুটিভাবে কয়েক ধরনের প্রচলিত পুতুল শিল্প আছে। স্ট্রিং পাপেট, রড পাপেট, শ্যাডো পাপেট এবং গ্লাভ পাপেট। বাংলার পুতুলকে নিয়ে পরিচালক রণজিৎ তৈরি করেছেন তাঁর ‘পুতুলনামা’ (Dolls Don’t Die) ছবিটি। ছবির বিষয়বস্তু মানুষ সমান বড় বড় পুতুল এবং একজন শিল্পী যিনি এই পুতুলকে যাত্রার মঞ্চে ব্যবহার করে থাকেন। এবারের উৎসবে এশিয়ান সিলেক্ট বিভাগে ৭০ মিনিটের এই ছবিটি দেখানো হয়েছে।
ছবির মূল চরিত্র মাধব। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাধব চক্রবর্তী। তিনি বাস্তব জীবনেও একজন পুতুলশিল্পী। মাধব তার বাবার থেকে এই শিল্পের উত্তরাধিকার পেয়েছেন। যদিও এই শিল্পে আর্থিক লাভের আশা না থাকার ফলে মাধব বাধ্য হয়ে রিক্সায় ইট বালি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। কারণ একসময়ের সারা বছরের কাজ এখন মাত্র ৬০-৬২ দিনের কাজে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে এই শিল্পীরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও দ্বিতীয় পেশা বেছে নিয়েছেন। গত কয়েক বছরে মাধবের দলের বেশ কয়েকজন শিল্পী মারা গেছে যাদের পরিবর্তে নতুন কেউ আসেনি।
আরও পড়ুন: বাস্তুচ্যুত প্রান্তজন, নর্মদা ‘পরিক্রমা’য় দেখালেন গৌতম
রণজিৎ জানালেন, “যাত্রাশিল্প ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ফলে এই পুতুলশিল্পও আর কতদিন টিকবে জানা নেই। তবু মাধব এবং ওর মতো আরও কিছু শিল্পী শুধুমাত্র ভালোবাসার জায়গা থেকেই এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এখন আর এই শিল্পে অর্থ নেই, ফলে নতুন করে কেউ আর এই শিল্প শিখতে আগ্রহী নয়।”
রণজিতের ছবি মাধব এবং তার শিল্পের প্রতি সততা ও লড়াইকে তুলে ধরে। মাধবের মতে সাইকেল রিকশা চালিয়ে দিন চলতে পারে কিন্তু যে কাজে আত্মা নেই সে কাজ করে তিনি কীভাবে বেঁচে থাকবেন! মাধবের সেই আত্মা আছে তাঁর পুতুলের মধ্যে। কাজেই যতদিন সম্ভব তিনি কষ্ট করে হলেও এই পুতুলশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চান। ছবিটির পরিচালনা ছাড়াও চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা এবং প্রযোজনাও করেছেন রণজিৎ।
বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানোর পর ছবিটিকে কোনও ডিজিটাল মাধ্যমে দেখানোর কথা ভাবছেন তিনি।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য