ডাউন সিনড্রোম নিয়ে ছবি, দর্শককে ছুঁয়ে গেল ‘জগন’
কলকাতা: ডাউন সিনড্রোম (Down Syndrome) এক বিশেষ ধরনের শারীরিক অবস্থা। বিরল রোগ না হলেও সুস্থ সমাজের বিচারে একে এক ধরনের পাগলামির লক্ষণ বলেই বিবেচনা করা হয়। যদিও স্বাভাবিক বুদ্ধি কম থাকা ছাড়া তেমন কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা যায় না এদের মধ্যে। এই রোগেই আক্রান্ত ছিল জগন। নিজের মা ছাড়া গ্রামশুদ্ধ লোক তাকে পাগল বলেই জানতো। জগন কোনওকিছুর মাপ বুঝতে পারত না। তার কাছে দুটো বা দুজন সমান। সে শুধু দুই বোঝে। এছাড়া সে বোঝে সুর। সে বোঝে প্রকৃতি। সমস্ত পৃথিবীতে একমাত্র এই দুটি জিনিসের প্রতি তার আকর্ষণ আছে। জাগতিক দুনিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন জগনকে নিয়ে তার মা ও ভাইয়ের বিড়ম্বনার শেষ নেই। কী হয় তারপর জগনের?
পরিচালক সঞ্জীব দে’র নিজের লেখা কাহিনি ‘জগন’ (Jagan)। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও বটে। তাঁর নিজের দাদার কথাই তিনি বলেছেন ‘জগন’ ছবির মধ্যে দিয়ে। ২০২০ সালে নিজের ব্লগে দাদাকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলেন সঞ্জীব। পরে মনে হয় এই গল্প নিয়ে ছবি করা যায়। তখনই মনে হয় অভিনেতা সুব্রত দত্তর (Subrat Dutta) কথা। মনে হয়েছিল তিনি ছাড়া আর কেউ পারবেন না এই চরিত্রে অভিনয় করতে। ৭ ডিসেম্বর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হলো এই হিন্দি ছবিটি। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সুব্রত জানালেন, জগন তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল। সুব্রত ছাড়াও ছবিতে রয়েছেন দেবাশিস মণ্ডল (Debashish Mondal), স্বরূপা ঘোষ ও সুচিস্মিতা ঘোষ।
আরও পড়ুন: বেকসুর খালাস, ভারতে ফিরলেন মমতা কুলকর্ণী
“পঁচিশ দিন ধরে টানা নোংরা জামাকাপড় পরে থাকা, একটা ঢোলা হাফপ্যান্ট যার ভেতরে কোনও অন্তর্বাস পরা যেত না, একহাতে সেই প্যান্ট ধরে মুখে প্রায় কোন ভাষাও নেই, আর ওইভাবে হেঁটে চলা, সত্যি কঠিন ছিল ওই সময়টা,” বললেন সুব্রত। “গল্প শুনে আমি প্রথমেই বলেছিলাম পারব না। কারণ আমি কখনও এমন কোনও চরিত্র করিনি। তাছাড়া আমার কাছে এই চরিত্রের কোনও মডেল ছিল না। আমাকে বুঝে নিতে হয়েছিল জগন আমার পরিচিত বা আমার দেখা কারও মতো নয়। সেইভাবেই চরিত্রটা তৈরি করতে হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে সঞ্জীব জানালেন, যাকে ভেবে এই ছবি তাঁর সেই দাদা মারা গেছেন ২০১৮ সালে। কোনও ভিডিয়ো নয়, মাত্র একটি স্টিল ছবি দেখিয়েছিলেন তিনি সুব্রতকে। পরে যখন সুব্রত প্রথমবার তাঁকে জগন চরিত্রের আচরণ অভিনয় করে দেখান, তিনি চমকে গেছিলেন। কারণ দাদার সঙ্গে অদ্ভুত মিল পেয়েছিলেন তিনি সুব্রতর।
আরও পড়ুন: পরনে ‘ভালো থেকো’র শাড়ি, প্রথম ছবির স্মৃতিচারণে বিদ্যা বালন
ছবিতে জগনের ভাই বিশুর চরিত্রে রয়েছেন দেবাশিস। তিনি জানালেন, “এই ধরনের চরিত্র নিয়ে ছবি খুব কম হয়। এটাই প্রথম কারণ ছিল আমার ছবিটা করার। এই চরিত্রটার ভেতর অনেকগুলো স্তর আছে। ওর ভাইয়ের সঙ্গে ওর একরকম সম্পর্ক, মায়ের সঙ্গে একরকম আবার একটা প্রেমের সম্পর্ক যখন গড়ে উঠছে সেটা নিয়েও ওর ভেতর একটা চাপা টেনশন আছে। তার ওপর সারাদিন কাজের পর ও যখন বাড়ি ফেরে, প্রায়দিন জগন কোথায় চলে গেছে তাকে খুঁজতে যেতে হয়। সব মিলিয়ে খুব বিরক্তি প্রতিদিন জমা হচ্ছে ওর মধ্যে। এর সঙ্গে ছবির এই গ্রাম্য প্রেক্ষাপট, খুব সরল সাধাসিধে জীবনের একটা ছবি। নিজের অভিনয় নিয়ে একটা জিনিস আমাকে মাথায় রাখতে হতো, আমার অভিনয় যেন ছবির উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে না যায়। এরকম চরিত্র আমার কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত আসেনি।”
ছবির চিত্রগ্রহণ করেছেন রনিত বিশ্বাস। সম্পাদনায় প্রীতম মণ্ডল। সঙ্গীত পরিচালনায় কণিষ্ক সরকার।
আগামী বছর ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে পারে।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য