শেক্সপিয়রের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি দেখে অবাক হয়েছিলাম: সৌরভ
কলকাতা: তৃতীয় দিনে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গণ ছিল সৌরভময়। মুম্বই থেকে এসেছিলেন অভিনেতা পরিচালক চিত্রনাট্যকার সৌরভ শুক্লা। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন বাঙালির সেদ্ধ ভাত থেকে ‘অ্যানিমাল’ ছবি নিয়ে।
সৌরভের মা বাঙালি। তাঁর স্ত্রীও বাঙালি। তবে তিনি নিজে বাংলা বলতে পারেন না। “আমি মায়ের দিকের খাবার আর বাবার দিকের ভাষা, এই দুটোকে বেছে নিয়েছি বলা যায়। একটু-একটু বাংলা বুঝি, আর অল্প বলতে পারি। সেদ্ধ ভাত আমার খুব প্রিয় খাবার কারণ খুব সহজে তৈরি করে ফেলা যায়। এটা দারুণ একটা কমফর্ট ফুডও বটে,” এক প্রশ্নের উত্তরে জানালেন তিনি।
সারা পৃথিবীর মতো তিনিও সত্যজিৎ রায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরাগী বলে জানালেন সৌরভ। “তবে এ ব্যাপারে বলার মতো আমি খুবই সামান্য ব্যক্তি। ওই পর্যায়ের কোনও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমি কীই বা বলতে পারি! ইংল্যান্ডে স্ট্র্যাটফোর্ডে একবার উইলিয়ম শেক্সপিয়রের জন্মস্থান দেখতে গেছিলাম। সেখানে এক অদ্ভুত ব্যাপার দেখেছিলাম। শেক্সপিয়র জন্মেছিলেন পাঁচশো বছর আগে। সেই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা মূর্তি রয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। সেই হিসেবেই বলা যে এইসব মানুষ সম্পর্কে আমরা বলার যোগ্য নই।”
আরও পড়ুন: মেওয়ারি ভাষার ছবি বিদ্যুৎ এনে দেবে প্রত্যন্ত গ্রামে
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে রণবীর কপূর ও রশ্মিকা মন্দানা অভিনীত সন্দীপ রেড্ডির ‘অ্যানিমাল’। ছবিটি বিতর্কিত, তাই প্রশ্ন আসে এই বিষয়ে তাঁর মতামত কী? ‘সত্য’ ছবিতে দেখানো ভায়োলেন্স নিয়েই বা তাঁর কী বক্তব্য?
“আপনারা সাংবাদিক,” বললেন সৌরভ, “আপনারাই বলবেন ছবিটা ভালো হয়েছে নাকি নয়। সেটা আমার বলার কথা নয়। আর তাছাড়া পরিচালক একটা গল্প বলার জন্য ছবি করেন। সেটা কেমন হয়েছে সেই নিয়ে দর্শক বলবে, আপনারা বলবেন। আপনি সবজি খেতে ভালোবাসলে সবজি খাবেন, সেটাই আপনার কাছে মরালিটি। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে মাছ-মাংস খেতে ভালোবাসে সে ভুল! সেটা তার দিক থেকে মরালিটি। আমি খাই না বলে সেটাকে অপমান করার কোনও অধিকার আমার নেই। জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই এই কথা মেনে চলা যায়।”
তবে ‘সত্য’র কাহিনিকার তিনি একা নন বলে জানালেন সৌরভ। অনুরাগ কাশ্যপ, রামগোপাল বর্মা ছাড়াও অভিনেতারা ইম্প্রোভাইজ়েশনের মাধ্যমে গল্পের অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।
অরিন্দম শীলের সঙ্গে
নিজের অভিনয়ের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে কাউকে দেখে চরিত্র তৈরি করেন না বলে জানালেন চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা। “৩৫ বছর ধরে আমি আজও শিখছি। কোনও প্রজেক্ট ধরে কিছু শিখছি, এমন নয়। এত বছরের অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি তাই দিয়েই একটা চরিত্র নির্মাণ করতে পারি। ‘বরফি’ ছবিতে যেমন এক বাঙালি পুলিশ অফিসারের চরিত্র ছিল। পরিচালক ছিলেন অনুরাগ বসু। আমি শুধু অনুরাগ কীভাবে বাংলা কথা উচ্চারণ করে সেটা বোঝার চেষ্টা করতাম। নকল করিনি, বরং শেখার চেষ্টা করতাম কীভাবে একটা বিশেষ বাংলা শব্দ বলতে হয়। যেদিন থেকে অভিনেতা হয়েছি এভাবেই চারপাশে দেখে যেটুকু শেখা যায় শিখেছি।”
এদিন শিশির মঞ্চে তাঁর মাস্টারক্লাসে ছাত্রছাত্রী ও সাংবাদিকদের সামনে শেখালেন অভিনয়ের নানা খুঁটিনাটি। সঞ্চালনায় ছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। কীভাবে সিনেমা ও থিয়েটারের অভিনয়কে আলাদা করা যাবে, কীভাবে দাঁড়াতে হবে, সেই নিয়েও বললেন নানা কথা। তবে মাধ্যম যাই হোক না কেন তাতে অভিনয়ের খুব একটা তফাৎ করা যায় না বলেই মনে করেন তিনি।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য