প্রযুক্তিতে বিপ্লব এলেও প্রেক্ষাগৃহের বিকল্প কখনও হবে না, মত পরিচালকদের

RBN Web Desk: গত দু’বছরে অতিমারীর দিনগুলোতে যেমন একদিকে বিনোদন জগৎ প্রায় থেমে গিয়েছিল, তেমনই পরিচালক অভিনেতারা কিছুটা বাধ্য হয়ে নিজেদের বাড়িকেই স্টুডিও বানিয়ে তৈরি করে যাচ্ছিলেন একের পর এক শর্ট ফিল্ম, বিজ্ঞাপনের ছবি এমনকি ওয়েব সিরিজ়ও। সে সব ছবি বা সিরিজ় মুক্তি পেয়েছে বিভিন্ন ডিজিট্যাল মাধ্যমে। ঘরে বসেই যখন অনেকটা সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে, তখন আলাদা করে সিনেমাহলের প্রয়োজনীয়তা কতটা? এই বিষয়ে এক আলোচনার সভার আয়োজন করা হয়েছিল এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘অতিমারী কি সিনেমাহলের ইতি টানল?’ বক্তব্য রাখতে উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দু বিকাশ চাকি, রাজ চক্রবর্তী ও সোহিনী দাশগুপ্ত।

অতিমারীর সময়ে বিজ্ঞাপন জগতের অবস্থা সম্পর্কে বৌদ্ধায়ন জানালেন, “স্টেজ ওয়ানে বাড়ি থেকে যে যার মতো ভিডিও করে পাঠানো শুরু হলো। কিন্তু অপেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে করা সেই কাজ বেশিদিন করা গেল না। ক্লায়েন্ট তখন পেশাদার অভিনেতাদের কাজ চাইছে। তখন আমরা মুম্বইতে এমন কিছু অভিনেতাদের তালিকা তৈরি করলাম যাদের সঙ্গে একই কমপ্লেক্সে কোনও ডিওপি আছেন। সেখান থেকে ভালো কিছু কাজ তৈরি হলো। এভাবে একটা সময় ভালো ক্যামেরারও দরকার পড়ল। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি।” 

আরও পড়ুন: দশক পেরিয়ে অভিনয়ে শর্মিলা

এমনও ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেল যেখানে খাবার ডেলিভারি করেন যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে ক্যামেরা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বাইরের দৃশ্য শ্যুট করে  দিয়েছেন। এরপর একটা সময় জ়ুম প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কাজ শুরু হয়। অর্থাৎ যখন যেমন প্রয়োজন পড়েছে, সেভাবে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে কাজ করে গেছেন শিল্পীরা। 

প্রেমেন্দু  জানালেন, “লকডাউনে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে একটা কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু তখন তো যাঁর-যাঁর ক্যামেরার কাজ তাঁকে নিজেকে করতে হবে। ঋতুর বাড়িতে তখন ওর মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই যে ভিডিওটা তুলে দেবে। ওরা কেউই তখন সেভাবে টেকস্যাভি ছিল না। একদিন ঋতুর মেয়েকে ফোনে বুঝিয়ে বললাম কাজটা কীভাবে করতে হবে, আমি কী চাইছি। অতটুকু মেয়ে কিন্তু পুরো ব্যাপারটা বুঝে প্রায় নিখুঁত ভিডিও তুলে আমাকে পাঠিয়েছিল।” 

সময়ের দাবি মেনে প্রত্যেকেই  কাজ করার উপায় বার করে নিয়েছিলেন, এ কথা সকলেই মেনে নিলেন। 

আরও পড়ুন: বছরের শেষে দুই ফেলুদা?

“প্যান্ডেমিক আমাদের অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। যে ভাবনাটা সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আমরা হয়তো মাথায় আসত না, সেটা ভাবার সময় পেয়েছি। ফলে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি আমরা” বললেন সোহিনী। আগামী বছর কীভাবে কাজ হবে সেটা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকলেও কাজ থেমে থাকবে না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। 

রাজের অনেকগুলো ছবি অতিমারীর কারণে আটকে যায়। সেই প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “ছবি তৈরি অথচ মুক্তি পাচ্ছে না, লকডাউন বেড়েই চলেছে। একটা সময় কেমন করে যেন ভুলে গেলাম আমি একজন পরিচালক বা প্রযোজক। মাথার ভেতর কিছুই যেন নেই। অথচ কোথাও একটা পোকা নড়ছে, কিছু একটা করতে হবে। কিছু সচেতনতামূলক কাজ করলাম টালিগঞ্জের অভিনেতাদের নিয়ে, যে যার বাড়িতে বসে। সেগুলো করতেও তখন ভালো লাগছিল। সেই সময়ে প্রচুর বাইরের ছবি দেখার অভ্যেস হলো। প্রচুর বিদেশি ছবি ও সিরিজ় দেখে ফেললাম। একসময় আবার আমার নিজের করোনা হওয়ার ফলে বাড়িতে থেকেও থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। তবু নতুন কাজের পরিকল্পনা চলত, কখনও থেমে যাইনি। বরং প্যান্ডেমিক আমাকে অনেক বেশি পরিণত করেছে বলতে পারি।” 

আরও পড়ুন: গড়ে তোলা হবে সিনে মিউজ়িয়ম, ঘোষণা মমতার

অতিমারী যেমন মানব জাতিকে সামাজিক জীবনে বিরাট বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে তেমনই শিখিয়েছে স্বাবলম্বী হতে, কিংবা নতুন পদ্ধতিতে কাজ করার কথা ভাবতে। চিন্তাভাবনার যে প্রসার এই সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘটেছে সেটা স্বাভাবিক জীবনে সম্ভব ছিল না বলে প্রত্যেকেই মনে করেন। তবে অতিমারী কাটিয়ে ধীরে-ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরে একাধিক মাধ্যমের সঙ্গে সখ্য হওয়ার পাশাপাশি সিনেমাহলকে ফিরে পাওয়ার মধ্যেও এক আলাদা আনন্দ আছে বলে মনে করেন সবাই। যতই নতুন মাধ্যম আসুক, প্রেক্ষাগৃহের বিকল্প কখনও হবে না বলেই বিশ্বাস করেন এই চার পরিচালক। 

ছবি: গার্গী মজুমদার




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *