অনুমেয় হলেও ক্লাইম্যাক্সে চমক

ছবি: মুখোশ

পরিচালনা: বিরসা দাশগুপ্ত

অভিনয়ে: অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পায়েল দে, অনির্বাণ চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, কৌশিক সেন

দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৫৭ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে জটিল এবং কঠিন বিষয় হলো মনস্তত্ত্ব। মানুষের মনের জটিলতা অনুসন্ধান করেন একজন মনোবিদ। সামনে বসে থাকা একটা মানুষ ঠিক কী ভেবে চলছে সেটা অনুমান করা বোধহয় সবথেকে দুরূহ কাজ। আর সেই মানুষটি যদি ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকা কোনও অপরাধী হয় তাহলে তো কথাই নেই। মুখোশের আড়ালে ঘটতে থাকা একের পর এক অপরাধের কিনারা করা হয়ে ওঠে আরও কঠিন। তাঁর নতুন ছবিতে বিরসা সেই মুখ আর মুখোশের অন্তর্দ্বন্দ্বই তুলে ধরার চেষ্টা করলেন।




থ্রিলার বা হত্যারহস্যের ক্ষেত্রে—তা সে উপন্যাস হোক বা ছবি—সিরিয়াল কিলিংয়ের বিষয় অনেকসময়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে চার লক্ষ মানুষ খুন হন। কিছু খুনের কিনারা হয় আর বাকি চাপা পড়ে যায় অনন্ত রহস্যের আড়ালে। সিরিয়াল কিলারদের এ ধরণের খুনের পিছনে কি শুধুই বিকৃত মনস্তত্ব কাজ করে, নাকি থাকে প্রতিশোধ স্পৃহাও?

প্রিয় লেখক ডাক্তার পলকে নিজের গুরু মেনে চলে  মনোবিজ্ঞানের ছাত্র কিংশুক। তার মতে ডাক্তার পলের মত মনস্তত্ত্ববিদ গত দুশো বছরেও জন্মায়নি। তারও ইচ্ছা পড়াশোনা শেষে ডাক্তার পলের মতো অপরাধ বিশেষজ্ঞ হওয়ার। অবশেষে পুলিশের বড়কর্তা অদ্রীশ বর্মণের সহায়তায় ও নিজ যোগ্যতায় লালবাজারের অপরাধ বিশেষজ্ঞের চাকরি জুটিয়ে নেয় কিংশুক। প্রথমেই এক পুলিশ অফিসার গোপাল ঘোষের খুনের তদন্তের দায়িত্ব এসে পড়ে কিংশুকের কাঁধে। কেউ যেন জীবিত অবস্থায় শরীর থেকে হৃৎপিণ্ডটি বের করে ধাপার মাঠের আবর্জনার মধ্যে গোপালের দেহ ফেলে দিয়ে গেছে। স্পেশাল কমিশনার কাবেরী বোসের তত্বাবধানে এই অদ্ভুত খুনের রহস্য অনুসন্ধান শুরু করেন অদ্রীশ, কিংশুক এবং আরও দুজন অফিসার।

আরও পড়ুন: হাফপ্যান্ট পরে অভিনয়, কিশোরের প্রস্তাবে সত্যজিতের অট্টহাসি

এরই মধ্যে সেই এক প্যাটার্নে খুন হন আরও দুই অফিসার। দুই ক্ষেত্রেই লাশের পাশে একটা ক্রস পাওয়া যায়। অনুসন্ধান করতে গিয়ে কিংশুক গোপাল ঘোষের মৃতদেহের পাশেও আবর্জনার স্তুপ থেরে অনুরূপ একটি ক্রস খুঁজে পায়। এটি তার প্রথমে নজরে আসেনি। প্রতিটি ক্রসেই বাইবেলের একটি করে উক্তি জানান দিয়ে যাচ্ছে যে মৃত ব্যক্তিরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাচ্ছে।

পরপর তিনজন পুলিশ অফিসার খুন। গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আইটি বিভাগ হ্যাকড হয়ে আছে। সিসিটিভি ফুটেজে খুনি তার ভেড়ার মুখোশ পরা মুখ দেখিয়ে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে যাচ্ছে। কে করছে এসব? তার উদ্দেশ্যই বা কী?




গল্পের বুনট টানটান। তবে একটু এগোনোর পর থ্রিলারপ্রেমীরা কিছুটা হলেও অপরাধীর পরিচয় আন্দাজ করতে পারবেন। কিংশুকের ভূমিকায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য ভালো হলেও, বারবার একই ধরণের চরিত্রে অভিনয় করার ফলে তাঁকে ইদানিং একটু একঘেয়ে লাগছে। অনির্বাণ চক্রবর্তীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।  বেশ কয়েকটি ছবি ও ওয়েব সিরিজ়ে পুলিশের ভূমিকায় অভিনয়ের সঙ্গে ‘মুখোশ’-এর অদ্রীশের খুব একটা পার্থক্য চোখে পড়ে না। তবে কাবেরীর ভূমিকায় চান্দ্রেয়ী ও কিংশুকের স্ত্রী রাইয়ের ভূমিকায় পায়েল নজর কেড়েছেন। একটি বিশেষ চরিত্রে কৌশিক সেনকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত। তাঁর অভিনীত চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও পর্দায় উপস্থিতি ভীষণ কম।

আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি

ছবিতে সিরিয়াল কিলিংয়ের প্যাটার্নে বেশ অভিনবত্ব রয়েছে। কেউ যেন মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে হৃৎপিণ্ডটি বের করে ব্যক্তির হৃদয়হীনতার পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের গোটা আইটি সিস্টেম একা একজনের পক্ষে এতিদিন ধরে হ্যাক করে যাওয়া কি সম্ভব? এছাড়া অপরাধী এত সহজে নিজের কাজের প্রমাণ জানা এমন এক ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখল যে কিনা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিংশুক এবং অদ্রীশ উত্তরবঙ্গে এক সন্দেহভাজনের বাড়িতে রেড করতে যাওয়ার মধ্যে অতিনাটকীয়তা চোখে লাগে। সেই সন্দেহভাজনের সামনে দাঁড়িয়ে অধস্তন সহকর্মীকে এক পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসার আততায়ী ধরার বিষয়ে জ্ঞান দিচ্ছেন, এটাও অবাস্তব। ক্রাইম থ্রিলারের ক্ষেত্রে এই ডিটেলিংগুলো বেশ চোখে লাগে।

আরও পড়ুন: হাফপ্যান্ট পরে অভিনয়, কিশোরের প্রস্তাবে সত্যজিতের অট্টহাসি

তবু ‘মুখোশ’ দেখার জন্য যদি বিশেষ কোনও কারণ থেকে থাকে, তা হলো এর ক্লাইম্যাক্স। আর সেখানে অপরাধের মোটিভ নিয়ে বিশেষ একটি চরিত্রে এক বিশেষ অভিনেতা উপস্থিত। এছাড়া পুলিশের নীচুতলার কিছু চেনা দৃশ্যও উঠে এসেছে ছবিতে। পুলিশ হয়ে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো বা রাস্তায় অহেতুক যানবাহন দাঁড় করিয়ে ঘুষ আদায় করা সম্পূর্ণ বেআইনি। ছবিতে এরকম কিছু দৃশ্যের ব্যবহার চোখে আঙুল দিয়ে রক্ষকই ভক্ষক, প্রচ্ছন্নভাবে এটাই যেন বলে যায়।

বহুদিন পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল আদ্যোপান্ত থ্রিলারধর্মী একটি বাংলা ছবি। তবে ‘মুখোশ’ মূল দক্ষিণ ভারতীয় ছবির সঙ্গে তুলনামূলক প্রতিযোগীতায় না গিয়ে দেখাই শ্রেয়। টানটান, মেদহীন ছবি হিসেবে ‘মুখোশ’ থ্রিলারপ্রেমীদের খুব একটা নিরাশ করবে না বলাই যায়।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *