হাফপ্যান্ট পরে অভিনয়, কিশোরের প্রস্তাবে সত্যজিতের অট্টহাসি
RBN Web Desk: সালটা ১৯৮৪। সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ছবির জন্য গান গাইবেন কিশোর কুমার। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লিপে গানের জন্য সত্যজিতের বরাবর প্রথম পছন্দ ছিলেন কিশোর। এর আগে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চারুলতা’ ছবিতেও সৌমিত্রর লিপে ছিল কিশোরের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’। তুমল জনপ্রিয় হয়েছিল সেই গান।
যাই হোক, ‘ঘরে বাইরে’র গান রেকর্ডিংয়ের জন্য মুম্বই (তৎকালীন বম্বে) গেছেন সত্যজিৎ। তিনি কিশোরকে ‘চল রে চল সবে ভারতসন্তান, মাতৃভূমি করে আহ্বান’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি ওপেন ভয়েসে গাইতে বলেন। কিশোর অবাক! তার মানে কি গানের সঙ্গে কোনও যন্ত্রসঙ্গীত থাকবে না? ওপেন ভয়েস মানে তো খালি গলায় গান। না, তিনি পিয়ানো বাজাবেন আর কিশোর গাইবেন, সত্যজিতের স্পষ্ট নির্দেশ। তাই গাইলেন কিশোর। আবারও ছবিতে সেই গানে ঠোঁট মেলালেন সৌমিত্র। ‘চল রে চল সবে…’ ছাড়া ‘ঘরে বাইরে’তে আরও দুটি গান গেয়েছিলেন কিশোর। একটি ‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান’ ও ‘বুঝতে নারি নারী কী চায়’। এই দুটি গান কিশোর কোনওরকম যন্ত্রানুষঙ্গ ছাড়াই গেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র
‘চারুলতা’ মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। ওই একই বছরে ‘দূর গগন কি ছাঁও মে’ ছবির প্রিমিয়র উপলক্ষ্যে কলকাতায় এসেছিলেন কিশোর ও তাঁর পুত্র অমিত কুমার। অধুনালুপ্ত প্যারাডাইস প্রেক্ষাগৃহে সেদিন উপস্থিত ছিলেন বাংলা ছবির জগতের তাবড় নক্ষত্ররা। শহরে তখন ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত সত্যজিৎ। কিশোর একদিন অমিতকে সঙ্গে নিয়ে স্টুডিওতে পৌঁছে গেলেন। তারপর সত্যজিৎকে দেখতে পেয়েই বলে উঠলেন, ‘মানিক মামা, মানিক মামা করছ তুমি কী?’
কিশোরের আগমনে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন সত্যজিৎ। বুঝলেন কিশোর ফ্লোরে উপস্থিত থাকলে শুটিং করা অসম্ভব। তাই সেদিনের মতো প্যাকআপ ঘোষণা করে দিলেন তিনি। এরপর শুরু হলো আড্ডা। সেই আড্ডার এক পর্যায়ে সাংঘাতিক রসের রসিক কিশোর দাবি করে বসলেন, তিনি একটি ছবি পরিচালনা করবেন এবং সত্যজিৎকে তাতে অভিনয় করতে হবে। এহেন প্রস্তাব শুনে হেসে উঠতে যাচ্ছিলেন সত্যজিৎ। ঠিক তখনই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে কিশোর বললেন, ‘তবে একটা শর্তে, পুরো ছবিতে তোমাকে হাফপ্যান্ট পরতে হবে।’ কিশোরের কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন সত্যজিৎ।
এই গোটা কথোপকথনের সাক্ষী ছিলেন অমিত। কয়েক বছর আগে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন সে কথা।