প্রচেত গুপ্তর গল্প, প্রকাশিত হলো ‘মিছিল’-এর সঙ্গীত
কলকাতা: বাংলায় সাহিত্যনির্ভর ছবি করার চল আবার ফিরে এলেও, থ্রিলার গল্পই ইদানিং বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে চলচ্চিত্রায়নের ক্ষেত্রে। মাঝে মধ্যে অবশ্য এর ব্যতিক্রমও ঘটে থাকে। তেমনই একজন পরিচালক সুরজিৎ নাগ। প্রচেত গুপ্তর ‘মিছিল’ অবলম্বনে একই নামের ছবি পরিচালনা করেছেন সুরজিৎ। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, সমদর্শী দত্ত, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় ও রুমকি চট্টোপাধ্যায়। ‘মিছিল’-এর সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন রাজা নারায়ণ দেব। গতকাল শহরে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হলো ছবির সঙ্গীত।
‘মিছিল’-এর কাহিনী শ্রীময়ী নামের একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত মেয়েকে নিয়ে। তার বিয়ে ঠিক হয় একটি ছেলের সঙ্গে। দুজনে দুজনকে পছন্দ করতেও শুরু করে। কিন্তু হঠাৎই একদিন একটি মিছিলে মেয়েটিকে হাঁটতে দেখে ছেলের বাড়ি থেকে বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর কী হয়, সেই নিয়েই এগোবে ছবি।
“ছবিটা যেহেতু একটা বিয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, তাই আমার মনে হয়েছিল একটু রাগাশ্রয়ী সুরে আধুনিক কম্পোজ়িশন করলে সেটা অন্যরকম হবে,” জানালেন রাজা নারায়ণ। “সেই গানটা কৌশিকি (চক্রবর্তী) গেয়েছে। ও আজকাল ছবিতে খুব একটা গাইতে চায় না। কিন্তু সুরজিৎদার ইচ্ছে ছিল গানটা কৌশিকিকে দিয়েই গাওয়ানো হোক। বন্ধু হিসেবে আমি ওকে অনুরোধ করি। প্রায় বছরখানেক অপেক্ষা করতে হয়েছে ওর গানটার জন্য।”
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
ছবির অন্য গানগুলো গেয়েছেন জয়তী চক্রবর্তী, শুভম বন্দ্যোপাধ্যায় ও জিনিয়া রায়। “জয়তী ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে’ গেয়েছে। ওটাকে একটু অপেরা স্টাইলে ব্যবহার করেছি আমরা। তার জন্য তিনবার টেক করতে হয়েছে আমাদের। সব মিলিয়ে গানটা শুনতে খুব ভালো লাগছে,” জানালেন রাজা নারায়ণ।
এছাড়াও ‘মিছিল’-এ থাকছে জিনিয়ার গলায় ‘আমের তলায় ঝামুর ঝুমুর, কলাতলায় বিয়া’ লোকগানটি। ঋত্বিক ঘটক তাঁর ‘কোমল গান্ধার’ ছবিতে এই গানটি ব্যবহার করেছিলেন। ছবির আবহে সরোদ, পিয়ানো, বাঁশি, সানাই ও ঢাক ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানালেন রাজা নারায়ণ।
আরও পড়ুন: তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে
“ছবির প্রয়োজনে লেখকের অনুমোদন নিয়েই আমরা গল্পে সামান্য পরিবর্তন করেছি,” জানালেন সুরজিৎ। “আমি বরাবরই সাহিত্য পড়তে ভালোবাসি, আর প্রচেতদার গল্প আমার খুব পছন্দের। এই গল্পটা পড়ার সময় এর নামটা আমাকে খুব আকর্ষণ করেছিল। মনে হয়েছিল এই মিছিল নগরীতে এই বিষয়টা নিয়ে একটা ছবি হওয়া দরকার। খুব বড় কিছু নয়, কিন্তু এই শহরের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাও যে কীভাবে নাগরিকদের জীবন পাল্টে দেয় সেটাই তুলে ধরা চেষ্টা করেছি আমরা।”
ছবিতে শ্রীময়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাসবদত্তা। “আমার চরিত্রটা খুব সাধারণ একটা শহুরে মেয়ের যে টিউশন পড়ায়, বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখে,” জানালেন তিনি। “আসলে নিজে সাহিত্যের ছাত্রী ছিলাম বলেই সাহিত্যনির্ভর ছবিতে এরকম চরিত্রগুলো আমার খুব পছন্দের। এই চরিত্রটা করে খুব তৃপ্তি পেয়েছি। তবে সত্যিকারের শ্রীময়ী হয়ে উঠতে পেরেছি কি না সেটা দর্শক বলবেন।”
আরও পড়ুন: তাশি গাঁওয়ে একদিন
তবে ‘মিছিল’ নিয়ে প্রথমে তেমন আগ্রহী ছিলেন না ভাস্বর। “আসলে এই ছবিটা পুরোটাই শ্রীময়ীকে কেন্দ্র করে, গল্পটা যদিও আমার বেশ ভালো লেগেছিল,” জানালেন তিনি। “আমার অভিনীত চরিত্রটির সঙ্গে শ্রীময়ীর বিয়ে ঠিক হয়েও ভেঙে যায়। তাই ভেবেছিলাম আমার তো প্রায় কিছুই করার থাকবে না এখানে। সুরজিৎদা বলেছিলেন এই চরিত্রটায় উনি আমাকেই ভেবে রেখেছেন। তাই আর না করতে পারিনি। তবে কাজটা করে আমার খুবই ভালো লেগেছে।”
২৪ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে ‘মিছিল’।