ছবির মধ্যে ছবি, শেষ হলো ‘মায়াকুমারী’র শুটিং

কলকাতা: ‘মায়াতরুর সংসার’-এর শো শেষ হলো। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে এলেন প্রচুর মানুষ। সকলের মুখেই তৃপ্তির ছোঁয়া, খুশির হাসি। ছবি দেখে ভালো লেগেছে সকলের। কিছুক্ষণ পরে আবার একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে পোজ় দিলেন সে যুগের জনপ্রিয় নায়িকা, খ্যাতনামা নায়ক থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলা ছবির কলাকুশলীরা। আর সকলের সঙ্গে রইলেন এই দুই যুগকে মিলিয়ে দেওয়ার কান্ডারী, পরিচালক অরিন্দম শীল। 

গতকাল নন্দন প্রেক্ষাগৃহে শুটিং চলছিল অরিন্দমের পরবর্তী ছবি ‘মায়াকুমারী’র। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন বাংলা ছবির একঝাঁক তারকা। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, আবীর চট্টোপাধ্যায়, অরুণিমা ঘোষ, সৌরসেনী মৈত্র, রজতাভ দত্ত, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রাশিস রায় ও আরও অনেকে। গতকাল ছিল ‘মায়াকুমারী’র শেষ দিনের শুটিং। 

আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল

বাংলা ছবির শতবর্ষকে পর্দায় উদযাপন করবে ‘মায়াকুমারী’। এই ছবির ভেতরে থাকবে অন্য ছবির গল্প। ‘মায়াকুমারী’র একাংশ জুড়ে থাকবে চল্লিশের দশকের নায়িকা মায়াকুমারী (ঋতুপর্ণা) ও নায়ক-পরিচালক কাননকুমারের খ্যাতি ও সম্পর্কের কাহিনী। মায়াকুমারীর স্বামী শীতল ভট্টাচার্য (রজতাভ) স্ত্রীর এই সম্পর্ক ও খ্যাতিকে ভাল চোখে দেখেননি বলে ছবির জগৎ থেকে সরে যেতে হয়েছিল নায়িকাকে। লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান মায়াকুমারী। অনেক বছর পর বর্তমান সময়ে বাংলা ছবির জনপ্রিয় নায়ক হয়ে উঠেছেন কাননকুমারের নাতি আহির চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হবে ছবির অন্য অংশ। একই সঙ্গে উঠে আসবে ছবির টেকনিশিয়নদের জীবনের নানা কথাও।

“এই ছবিতে কাননকুমার ও আহিরের চরিত্রে অভিনয় করছি আমি,” রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন আবীর। “এর আগে ‘বিদায় ব্যোমকেশ’-এ দাদু-নাতির চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এখানে কাননকুমার পরিচালক ও নায়ক হলেও আহির শুধুই নায়ক। দুটো সময়কে নিয়ে গল্পটা চলবে। এছাড়া একটা ছবি তৈরীর পেছনে কত মানুষের পরিশ্রম থাকে, কীভাবে কাজ হয় এসবও থাকবে। এক কথায় বলা যায় ছবির ভেতর একটা ছবির গল্প বলা হবে।”

আরও পড়ুন: তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

পুরোনো দিনের কোনও বিখ্যাত তারকাকে নকল নয়, বরং অনেক চেনা নায়কের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বা অতীতের নানা ছবির নেপথ্যের কিছু ঘটনা ‘মায়াকুমারী’তে উঠে আসবে বলে জানালেন আবীর। 

“যেহেতু মায়াকুমারী বাংলা ছবির একশো বছরে চলচ্চিত্র জগতের সমস্ত কলাকুশলীদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তাই আমরা যে যার মতো করে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মানুষগুলোর চরিত্রে অভিনয় করে তাঁদের সম্মান জানাচ্ছি,” বললেন সৌরসেনী। “ছবির মধ্যে যে ছবিটা হচ্ছে সেটার নাম ‘মায়াতরুর সংসার’। এই ছবির পরিচালক সৌমিত্র মৌলিকের প্রধান সহকারীর ভূমিকায় অভিনয় করছি আমি। একটা ছবি তৈরী করতে গেলে যে টিমওয়ার্কটা লাগে, সেটাই ‘মায়াকুমারী’র বিষয়বস্তু। ‘মায়াতরুর সংসার’-এর নায়িকা (অরুণিমা) আমার বন্ধু এবং আহিরের সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক। এইসব নিয়েই এগোবে ছবির গল্প।”

আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে

আগে কখনও মুভি ক্যামেরা ব্যবহার না করলেও, ছবির প্রয়োজনে তাও শিখতে হয়েছে অম্বরীশকে। ‘মায়াতরুর সংসার’-এ প্রধান চিত্রগ্রাহকের চরিত্রে রয়েছেন তিনি। “‘মায়াতরুর সংসার’ হলো অতীত দিনের এক অভিনেত্রীর বায়োপিক,” জানালেন অম্বরীশ। “এই প্রথম এরকম কোনও ছবিতে ছবিতে আমি আছি। যেহেতু চরিত্রটা একজন দক্ষ টেকনিশিয়নের, তাই সেটা পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য ‘মায়াকুমারী’র প্রধান চিত্রগ্রাহক শুভঙ্কর ভড়ের কাছে আমাকে কাজটা শিখতে হয়েছে। এই কদিনে এরকম একটা কঠিন কাজ তো পুরোটা শেখা সম্ভব নয়। তবুও চরিত্রটাকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে দর্শকের সামনে তুলে ধরার জন্য যতটুকু শেখার দরকার, সেটা শিখেছি। ক্যামেরা প্যানিং বা ফোকাস শিফটের ব্যাপারগুলো মোটামুটি শিখে ফেলেছি, আর সেটা পরিচালকও বলেছেন যে আমাকে দেখে কোথাও অনভ্যস্ত লাগেনি। এই ছবির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তারকাদের পাশাপাশি টেকনিশিয়নরাও ছবিতে অভিনয় করছেন। যিনি সেটে চা দেন, বা যিনি হেয়ার স্টাইল করেন বা মেকআপ আর্টিস্ট, সকলেই এখানে অভিনয় করছেন।”

ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন শুভেন্দু দাসমুন্সি, সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিক্রম ঘোষ।

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তি পাবে ‘মায়াকুমারী’। 

ছবি: গার্গী মজুমদার

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *